কর্তৃত্ব বাড়ল রওশনের
১১ এপ্রিল ২০১৪৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই জাতীয় পার্টিতে দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদের অবস্থান শক্ত হয়৷ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ শেষ পর্যন্ত রাজি না থাকলেও, রওশনের কাছে তিনি হার মানেন৷ জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যায় এবং ৩৪ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷ স্বামী-স্ত্রী, অর্থাৎ এরশাদ এবং রওশনের দ্বন্দ্বে দলের নেতারাও দুই ভাগ হয়ে যান৷
নির্বাচনের পর রওশনের ক্ষমতা আরো সংহত হয়৷ কারণ তাঁর ওপরে রয়েছে সরকারের সরাসরি আশীর্বাদ৷ এছাড়া বিরোধী দলে থেকেও দল থেকে যাঁরা সরকারের মন্ত্রী বা উপদেষ্টা হয়েছেন, তাঁরাও রওশনেরই লোক৷ রওশন এরশাদ হয়েছেন বিরোধী দলীয় নেত্রী আর এশাদকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হতে হয়েছে৷
এমনকি শেষ পর্যন্ত এরশাদকে বাদ দিয়ে রওশনের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির কাজও এগিয়ে চলছিল৷ জাতীয় পার্টিতে রওশনের ঘনিষ্ট একজন নেতা জানান, এই যাত্রায় এরশাদ নিজেকে বাঁচাতে রওশনের সঙ্গে সমঝোতায় এসেছেন৷ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পদ নির্বিঘ্ন করতে এরশাদ তাই রওশনের চাপে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে মহাসচিব করেছেন৷ বাদ দিয়েছেন ১৪ বছর ধরে তাঁর অনুগত রহুল আমীন হাওলাদারকে৷ বলা বাহুল্য, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু রওশনের তো বটেই সরকারেরও ঘনিষ্ঠ৷
বৃহস্পতিবার রাতে বাদ পড়ার পর রহুল আমীন হাওলাদার সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘‘দলের চেয়ারম্যানের ওপর চাপ প্রয়োগ করেই এই পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ আমাকে এই পদ থেকে সরানোর জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে সম্পদের হিসাব চাওয়াসহ নানা নাটক সাজানো হয়৷ দলের একটি চক্র এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত৷ তাঁরাই এটা করেছেন৷'' তিনি যত দ্রুত সম্ভব সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি পরিষ্কার করবেন বলেও জানান৷
তবে এরশাদ শুক্রবার দাবি করেন যে, কোনো চাপের মুখে নয়, দলের স্বার্থেই মহাসচিব পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার ও রওশনের মধ্যে দূরত্ব আছে বলে জনগণ ও দলের নেতা-কর্মীরা মনে করেন৷ নতুন মহাসচিব নিয়োগের ফলে এ ধারণা দূর হবে৷ এখন সবাই মনে করবে আমরা এক৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমার মনে হয় এ সরকার পাঁচ বছরই থাকবে৷ তাই পার্টিকে সংগঠিত করা দরকার৷ এর জন্য তরুণ নেতৃত্ব দরকার৷ বাবলু পাশে থাকলে আমরা ভালো করবো৷''
জাতীয় পার্টির নতুন মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুও দাবি করেন, ‘‘কারও চাপে নয়, দলের চেয়ারম্যান মনে করেছেন, তাই তাঁকে মহাসচিব পদে নিয়োগ দিয়েছেন৷''
সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণেই তাঁকে এই পদে দেওয়া হলো কিনা জানতে চাইলে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বিষয়টি নাকচ করে বলেন, ‘‘আমাকে পার্টির চেয়ারম্যান ভালো করে জানেন৷ এ কারণেই তিনি আমাকে এ দায়িত্ব দিয়েছেন৷ কারও চাপে আমাকে মহাসচিব করা হয়নি৷''
জাতীয় পার্টির নতুন এই মহাসচিব বলেন, তিনি তৃণমূল পর্যায় থেকে দলকে শুধু সংগঠিতই করবেন না, দলকে ক্ষমতার কাছাকাছিও নিয়ে যাবেন৷
৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে রওশন এরশাদের প্রধান দুই সহযোগী হলেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং জিয়াউদ্দিন আহেমেদ বাবলু৷ তাঁরা সরকারেরও খুব ঘনিষ্ঠ৷ জানা গেছে, সরকারও চায় না যে জাতীয় পার্টির মূল নেতৃত্বে সরকার বিরোধী কেউ থাকুক৷ তাই রহুল আমীন হাওলাদারের বিদায়ের মধ্য দিয়ে এরশাদকে পুরোপুরি নির্বিষ করা হলো বলে মনে করেন দলের অনেক নেতা৷ রওশন এরশাদের ঘনিষ্ট জাপা নেতা ইয়াহিয়া চৌধুরী এমপি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এখন দলে আর কোনো বিভেদ নেই৷ সবাই এক হয়ে কাজ করবেন৷ এরশাদ আর রওশনের মধ্যেও কোনো দূরত্ব নেই৷''
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের কাছে বিষয়টি কাছে জানতে চাইলে এ নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি৷ ব্যস্ততার অজুহাতে প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান তিনি৷