জাপানে বিপাকে বহু ভারতীয়
১২ মে ২০২০এক সপ্তাহ আগে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, বিদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের ধীরে ধীরে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। প্রাথমিক ভাবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে বেশ কিছু ভারতীয়কে ফিরিয়েও আনা হয়েছে। আগামী দিনে অন্যান্য দেশ থেকেও একই প্রক্রিয়ায় নাগরিকদের ফেরানোর কথা জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। কিন্তু সেই তালিকায় এখনও জাপানের নাম নেই। আর তাতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জাপানে আটকে পড়া প্রায় ৭০০ ভারতীয়। ডয়চে ভেলেকে তাঁদের অনেকেই জানিয়েছেন, আতঙ্কের কথা।
অনুভব পালিত। ভারতে একটি বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত অনুভব এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জাপানে গিয়েছিলেন কাজের সূত্রে। তাঁর অফিসই তাঁকে সেখানে পাঠিয়েছিল। মার্চের শেষ দিকে কাজ শেষ হয়ে গেলেও করোনা লকডাউনের জন্য টোকিওতে আটকে পড়েন অনুভব। প্রথম দিকে তিনি আশা করেছিলেন লকডাউন দীর্ঘস্থায়ী হবে না। বিমান চলাচল শুরু হলেই দেশে ফিরে আসবেন। কিন্তু মে মাসের গোড়াতেও পরিস্থিতির উন্নতি না দেখে তিনি যোগাযোগ করেন টোকিও-তে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে। এবং তার পর থেকেই আতঙ্ক বহু গুণ বেড়ে যায়। শুরু হয় লড়াই।
অনুভবের কথায়, ''প্রাথমিক ভাবে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগই করতে পারছিলাম না। পরে বুঝতে পারলাম, জাপানে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফেরানোর বিষয়ে আপাতত সরকারের কোনও পরিকল্পনা নেই। তখনই সন্ধান পেলাম একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের।'' জাপানে আটকে পড়া প্রায় ৩০০ ভারতীয় ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটি তৈরি করেছেন। গ্রুপেই তাঁরা একে অপরের পরিস্থিতির কথা আদানপ্রদান করছেন। অনুভব জানিয়েছেন, ওই গ্রুপে বহু ছাত্রছাত্রী আছেন। তাঁদের স্কলারশিপ শেষ হয়ে গিয়েছে। বাড়ি ভাড়া দেওয়া তো অনেক পরের কথা, সামান্য খাবার কেনার ক্ষমতাও হারিয়েছেন অনেকে।
ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেই আছেন গর্ভবতী নারী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, এক সপ্তাহের কাজ দিয়ে তাঁকে জাপানে পাঠিয়েছিল অফিস। কিন্তু মাত্র একদিনের জন্য শেষ ফ্লাইট মিস করেন তিনি। সেই থেকে আটকে আছেন। তাঁর কথায়, ''ভেবেছিলাম দেশে ফিরেই ছুটির দরখাস্ত করবো। কারণ প্রেগনেন্সি এখন বেশ কয়েক মাস হয়ে গিয়েছে। এখানে আমায় দেখার কেউ নেই। মাঝে মধ্যেই শারীরিক সমস্যা হচ্ছে। চিকিৎসকের কাছেও পৌঁছতে পারছি না। কার্যত হোটেলের ঘরে আটক হয়ে আছি। টাকাও ফুরিয়ে আসছে।'' আরও এক বহুজাতিক সংস্থার কর্মী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''কোম্পানি যে কাজ দিয়ে পাঠিয়েছিল, তা এক মাস আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। কোম্পানি এখন বলছে, আমাকে ফেরানোর দায়িত্ব তারা নিতে পারবে না। শুধু তাই নয়, দেশে ফিরে আমার কাজ থাকবে কি না, তাও বুঝতে পারছি না। কোম্পানি জানিয়েছে, আপাতত তাদের হাতে কোনও প্রজেক্ট নেই। তাই আপাতত বিদেশে থাকার অ্যালওয়েন্সও দেওয়া হবে না।''
ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের বেশ কয়েকজন সদস্য দলগত ভাবে সিদ্ধান্ত নেন যে, টোকিও-র ভারতীয় দূতাবাসেরউপর চাপ সৃষ্টি করা হবে। বহু চেষ্টা চালানোর পরে তাঁদের দূতাবাসের তরফ থেকে একটি ফর্ম পাঠানো হয়। যাতে আটকে পড়া নাগরিকদের সমস্ত তথ্য দিতে বলা হয়। সেই ফর্মও পূরণ করে তাঁরা পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত দেশে ফেরানোর বিষয়ে তাঁদের কিছুই জানানো হয়নি বলে দাবি।
এ বিষয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার এক আধিকারিকের সঙ্গে ডয়চে ভেলে যোগাযোগ করেছিল। তিনি জানিয়েছেন, আপাতত বিদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধারের যে তালিকা তাঁদের কাছে পাঠানো হয়েছে, সেখানে জাপানের নাম নেই। উল্লেখ্য, এয়ার ইন্ডিয়াই বিদেশ থেকে ভারতীয়দের উদ্ধারের মূল কাজটি করছে। পাশাপাশি কয়েকটি জাহাজকেও ব্যবহার করা হচ্ছে।
জাপানে আটকে পড়া ভারতীয়রা দেশের বিদেশমন্ত্রককেও একটি চিঠি লিখেছে। সেই চিঠিও ডয়চে ভেলের হাতে আছে। পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে দ্রুত তাঁদের উদ্ধারের আর্জি জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে। এ বিষয়ে বিদেশমন্ত্রকের এক আধিকারিকের সঙ্গে ডয়চে ভেলে যোগাযোগ করেছিল। জানা গিয়েছে, গোটা বিশ্বে কয়েক লাখ ভারতীয় এই পরিস্থিতিতে আটকে পড়েছেন। বিভিন্ন ভাবে দেশে ফেরার আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা। তবে গত ৭ মে থেকে যে উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে, তাতে প্রাথমিক ভাবে ১৫ হাজার ভারতীয়কে দেশে ফেরানো হবে। ১৩ মে পর্যন্ত সেই কাজ চলবে। এটা হলো প্রথম পর্ব। তারপর দরকার হলে এই ভাবেই বিদেশে আটক ভারতীয়দের নিয়ে আসা হবে। সূত্র জানাচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে বিমান চলাচল শুরু হতে পারে। তখন আর এই কঠিন পরিস্থিতি থাকবে না। চলতি এই উদ্ধার পর্বে জাপান নেই। ফলে সেখানে আটকে পড়া ভারতীয়দের আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে।
যদিও জাপানের আটকে পড়া ভারতীয়দের বক্তব্য, খুব বেশি হলে এ ভাবে আর এক মাস কাটানোর রসদ আছে তাঁদের কাছে। তারপর পথে বসা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না।