জার্মান জ্যাজ অর্কেস্ট্রা এবার ভারতে
২৪ নভেম্বর ২০১১জার্মানি আর ভারতের ৬০ বছর ধরে চলতে থাকা সহযোগিতার সম্পর্ককে আরো ব্যাপক, আরো জোরদার করতে নানা উপচারে আয়োজিত হয়েছে অনুষ্ঠানমালা৷ ২০১১-র শরতেই শুরু হয়ে গেছে ‘‘জার্মানি ও ভারত: অপার সম্ভাবনা''এই শিরোনামের আওতায় বিশাল এক আয়োজন৷ চলবে আগামী বছরেও৷ ভারতে জার্মান জ্যাজ অর্কেস্ট্রার সংগীত সফর তারই এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ৷
এই অর্কেস্ট্রার সদস্যরা বয়সে তরুণ হলেও জ্যাজ সংগীতের ঘরানায় তারা এলিট শ্রেণিরই অন্তর্ভুক্ত৷ দেশে বিদেশে কনসার্ট করেছেন৷ তবে ভারতে এবারই প্রথম৷ মাইক হ্যার্টিং-এর পরিচালনায় জার্মান জ্যাজ অর্কেস্ট্রা তার এই সংগীত সফরে মিলিত হয়েছে ব্যাঙ্গালোর-এর কর্ণাটক কলেজ অফ পারকাশন-এর নামি শিল্পীদের সঙ্গে৷ যেমন দক্ষিণী মার্গ সংগীতের বহুল প্রশংসিত গায়িকা আর. এ. রামামানি, মৃদঙ্গম বাদনের এক সিদ্ধপুরুষ টি.এ.এস. মানি৷ আছেন বিখ্যাত পারকাশনিস্ট রমেশ শটহ্যাম৷ যাঁর জন্ম মাদ্রাজে, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বাস করছেন জার্মানির কোলন শহরে৷ আর এক প্রতিভাধর দক্ষিণী পারকাশনশিল্পী কার্তিক সুব্রহ্মনিয়মও এই সাংগীতিক আয়োজনের সঙ্গী৷
জার্মানির জ্যাজ সংগীত মহলের সঙ্গে কর্ণাটক কলেজ অফ পারকাশন-এর সংযোগ অবশ্য নতুন নয়৷ কিংবদন্তি জ্যাজ-স্যাক্সোফোনবাদক ও সংগীত রচয়িতা চার্লি মারিয়ানোর সাহচর্যে মাইক হ্যার্টিং নানা সংগীত প্রকল্পের বাস্তব রূপ দিয়েছেন৷ এই দক্ষিণী সংগীত বিদ্যায়তনের দুই শীর্ষ ব্যক্তিত্ব - আর. এ. রামামানি ও টি.এ.এস. মানি জার্মানিতে এসেছেন৷ তাঁদের নিয়ে এবং চার্লি মারিয়ানো, ইউ শ্রীনিবাস ও রমেশ শটহ্যাম-এর সহযোগিতায় পূর্ণতা পায় কোলনের বেতার ও টেলিভিশন কেন্দ্র ডাব্লিউডিআর-এর সাড়া জাগানো প্রকল্প - ‘‘স্কেচেস অফ ব্যাঙ্গালোর'' এবং ‘‘দ্য পাল্স অফ ব্যাঙ্গালোর''৷
বন শহরে অবস্থিত জার্মান সংগীত পরিষদের প্রণোদনায় ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জার্মান জ্যাজ অর্কেস্ট্রা৷ মূলত তরুণ প্রতিভাধর, ব্যাপক সম্ভাবনাময় সংগীত শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতা দিতেই এর উদ্ভব৷ সূচনালগ্ন থেকেই এই কাজটি অত্যন্ত যোগ্যতার সঙ্গে সম্পন্ন করে আসছে জার্মানির এই যুব জ্যাজ অর্কেস্ট্রা৷ তরুণ শিল্পীদের সাংগীতিক প্রশিক্ষণের এক কেন্দ্র হিসেবে - সত্যি বলতে - সারা দুনিয়াতেই এর কোন জুড়ি নেই৷ ১৯৮৮ সালের ৬ জানুয়ারি বন-এ তখনকার চ্যান্সেলর দপ্তরে প্রথম অনুষ্ঠান করে অর্কেস্ট্রা৷ তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি৷
একেবারে গোড়া থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত অর্কেস্ট্রার পরিচালক হিসেবে জার্মানির বিখ্যাত বিগব্যান্ড নির্দেশক পেটার হ্যারবোলৎসহাইমার বড় রকমের এক মাত্রা বেঁধে দেন৷ ২০১১ সালে নির্দেশনার দায়িত্ব পালন করেছেন জার্মান সংগীতকার মারিয়া বাপটিস্ট এবং জার্মানিতে বসবাসরত প্রখ্যাত মার্কিন ট্রম্বোনবাদক ও বিগব্যান্ড নির্দেশক জিগস হুইগহ্যাম৷ এইতো জুলাই-আগস্ট মাসে ইউরোপীয় জ্যাজ সংগীতের দূত হিসেবে জার্মান জ্যাজ অর্কেস্ট্রা কনসার্ট করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে৷ বিদেশে সংগীত সফর করেছে এই অর্কেস্ট্রা অন্তত ১৫টি৷ কনসার্টের সংখ্যা সব মিলিয়ে ৩০০-র বেশি৷ বের করেছে অসংখ্য সিডি৷ জার্মানির এই যুব জ্যাজ অর্কেস্ট্রা ১৯৯৭ সালে পায় জার্মান সংগীত পুরস্কার - ২০১০-এ কোলন শহরে অবস্থিত টেলিভিশন ও বেতার কেন্দ্র ডাব্লিউডিআর-এর জ্যাজ সংগীত পুরস্কার৷
মহানগরীর নানা মেজাজ, তার রূপান্তরের দ্রুতি, তার ভঙ্গুরতা নিয়ে মারিয়া বাপ্টিস্ট-এর সাংগীতিক উপহার ‘সিটি গ্রুভ্স্'৷ জার্মান জ্যাজ অর্কেস্ট্রার অনুষ্ঠানসূচিতে তারই উপস্থিতি এখন৷ এই শিরোনামের অ্যালবাম বেরিয়ে গেছে ইতোমধ্যেই৷
প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন