জার্মান ট্রেনের বদনাম বাড়ছে, তবে...
৪ অক্টোবর ২০১৯জার্মানিতে প্রায় এক যুগ আগে আসার পর জার্মান ট্রেনের অনেক সুনাম শুনেছি৷ ট্রেন খুব দ্রুতগতিতে চলে এবং সময় ঠিক রাখে৷ তবে শুরুর দিকে ট্রেনে খুব বেশি চড়া হয়নি৷ আর ড্রাইভিং লাইসেন্স করার পর তো ‘অফিসিয়াল-আনঅফিসিয়াল' সব কাজেই গাড়ি নিয়ে গিয়েছি৷ জার্মান মহাসড়কে গাড়ি চালানোর মজাই অন্যরকম৷ চওড়া এবং কয়েকশত কিলোমিটার লম্বা রাস্তাগুলোতে গাড়ি চালাতে চালাতেই জার্মানির প্রকৃতি উপভোগ করা যায়৷
তবে বছর পাঁচেক ব্যক্তিগত গাড়ি চালানোর পর নানা কারণে এক ধরনের একঘেয়েমি চলে আসে৷ এর চেয়ে ট্রেন ভালো মনে হতে শুরু করে৷ একটি বিষয় বিশেষভাবে মনে স্থান করে নিয়েছে যে, গাড়ি চালানো আসলে সময় নষ্ট করা৷ এর চেয়ে ট্রেনে বসে সেই সময়টা বই পড়ে, ফেসবুক দেখে কিংবা অন্য কোনো কাজে লাগানো যায়৷ অফিসের কাজে কোথাও গেলে এই সময়টা প্রতিবেদন প্রস্তুতের জন্যও ব্যবহার করা যায়৷
যা হোক, এসব ভাবনা থেকে গত একবছর ধরে ট্রেনে যাতায়াত করছি৷ আর এই এক বছরে আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, জার্মান ট্রেনের উপরে ঠিক ভরসা করা যায় না৷ দেখা যাবে, গুরুত্বপূর্ণ কোনো মুহূর্তে ট্রেন ঠিকমতো আসছে না৷ আর এদেশে মানুষের সময়ানুবর্তিতা অনেক প্রকট৷ ফলে, ট্রেন দেরি করায় আপনি যদি তাদের সেই সময়জ্ঞানের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারেন, তখন এক ধরনের বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়৷
জার্মানিতে মাঝেমাঝে ট্রেন কেন দেরি করে সেটা নিয়ে কিছুটা ঘাঁটাঘাটি করেছি৷ যে কারণগুলো পেয়েছি তার মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ৷ কোথাও ঘুর্ণিঝড় কিংবা বন্যার ঘটনা ঘটলে তখন ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে৷ এছাড়া সামগ্রিকভাবে পুরনো অবকাঠামোও রেলযাত্রায় জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার একটি কারণ৷
আরো একটি কারণের কথা না বললেই নয়৷ জার্মানিতে আত্মহত্যার যেসব ঘটনা ঘটে, তারমধ্যে একটি অংশ ঘটে রেললাইনে৷ এই দেশের বাসিন্দাদের মধ্যে ট্রেনের নীচে চাপা পড়ে আত্মহত্যার একটা প্রবণতা আছে মনে হচ্ছে৷ সমস্যা হচ্ছে, এরকম ঘটনা ঘটার পর সংশ্লিষ্ট রুট মোটামুটি ভালো সময়ের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় মরদেহ সরিয়ে নিতে এবং তদন্তের স্বার্থে৷ আর তাতে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে৷
তবে দুরপাল্লার ট্রেন দেরি করলে কিংবা কাঙ্খিত সময়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে যাত্রীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করার দায়িত্বও সংশ্লিষ্ট সেবাদাতার উপরে পড়ে৷ কেউ কেউ এমনকি বিকল্প হিসেবে ট্যাক্সি সেবাও পান৷ তা সত্ত্বেও সবকিছু মিলিয়ে জার্মান ট্রেন এখন ক্রমশ সুনামের চেয়ে বদনাম কুড়াচ্ছে বেশি৷
এক্ষেত্রে আশার কথা হচ্ছে, ট্রেনসেবার মান বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ ট্রেনযোগাযোগকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে আগামী দশ বছরে ৮৬ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানি৷ এই অর্থ খরচ করে দু'হাজারের মতো রেলসেতু সংস্কারসহ পুরনো সব কাঠামো আধুনিক করা হবে৷ পাশাপাশি ট্রেন চালকের সংখ্যাও বাড়ানো হবে৷ ফলে ২০৩০ সাল নাগাদ জার্মান ট্রেন আবার সেই পুরনো সুনাম ফিরে পাবে বলেই আশা করা হচ্ছে৷
আমি ভাবছি, সে পর্যন্ত অপেক্ষা করবো, নাকি আবারো গাড়ি চালানো শুরু করবো৷ আপাতত আরো কিছুদিন দেখি৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলতে চান? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷