জার্মান শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন ধরন নিয়ে বিতর্ক
১১ ডিসেম্বর ২০১১জার্মানিতে শিশুদের শিক্ষা জীবনের প্রথম ধাপ শুরু হয় কিন্ডারগার্টেন'এ৷ মাত্র তিন বছর বয়সেই জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলের ৭৪ শতাংশ এবং পূর্বাঞ্চলের প্রদেশগুলোর ৯০ শতাংশ শিশু কিন্ডারগার্টেন'এ ভর্তি হয়৷ সরকারি, বেসরকারি -- দুই ধরনের কিন্ডারগার্টেনই রয়েছে এই দেশে৷ শিশুদের এসব স্কুলে এখন অনেক বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ কিছু স্কুল খুব ছোটবেলা থেকেই বিদেশি ভাষা শিক্ষার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে, বাকিরা মনোযোগী হচ্ছে সৃজনশীল বিষয়ের প্রতি৷
উপযুক্ত শিক্ষা
শিশুদের বয়স যখন পাঁচ বা ছয় বছর, তখন তাদের গন্তব্য প্রাথমিক বিদ্যালয়৷ সেখানে চার বা ছয় বছর অধ্যায়নের পর একটি বড় প্রশ্নের সম্মুখীন হয় শিক্ষার্থীরা৷ সেটি হচ্ছে, ভবিষ্যতে তার জন্য কোন ধরনের শিক্ষা উপযুক্ত?
তিন ধরনের ব্যবস্থা
জার্মানিতে মোটামুটি তিন ধরনের স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে৷ এগুলো হচ্ছে হাউপ্টশুলে, রেয়ালশুলে এবং গিমনাজিউম৷ এই তিন ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা মিলিয়ে আবার একটি পদ্ধতি চালু আছে, যাকে বলা হয় গেজাম্টশুলে৷ তবে এটি খুব বেশি প্রচলিত নয়৷
জার্মানির এই স্কুল ব্যবস্থা সম্পর্কে হানোফার শহরের একটি বিদ্যালয়ের কাউন্সিলর শরাফ আহমেদ বলেন, ‘‘যে ছেলেরা সবচেয়ে বেশি মেধাসম্পন্ন তাদেরকে পাঠানো হয় গিমনাজিউমে৷ তারপরের মেধাসম্পন্নদের জন্য রেয়ালশুলে৷ এবং তারচেয়েও নিচের দিকের মেধাসম্পন্নদের জন্য হাউপ্টশুলে''৷
বিতর্ক
হাউপ্টশুলেতে নবম শ্রেণি পর্যন্ত রয়েছে৷ কিন্তু যারা এই পর্যায়ে স্কুলত্যাগ করে তাদের ভবিষ্যৎ অনেক কঠিন হয়ে ওঠে৷ এই পর্যায়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী পরবর্তী প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় সহজে প্রবেশের সুযোগ পায় না৷ ফলে অধিকাংশ অভিভাবক চেষ্টা করেন, তাদের সন্তানকে রেয়ালশুলে অথবা গিমনাজিউমে ভর্তি করাতে৷ জার্মান এই শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বির্তকও শোনা যায় প্রায়ই৷ শরাফ আহমেদ বলেন, ‘‘অনেকেই মনে করছেন এটা একটা সঠিক পদ্ধতি৷ আবার অভিভাবকদের একটা ব্যাপক সংখ্যা গরিষ্ঠ অংশ মনে করেন, না এটা ঠিক নয়৷ পঞ্চম শ্রেণিতে এসেই একজন শিক্ষার্থীর মেধা যাচাইয়ের সঠিক সময় নয়৷''
শিক্ষার্থীদের অবসর সময়
জার্মান বিদ্যালয়গুলো মূলত শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়কেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়৷ শিক্ষার্থীরা অবসর সময় কাটানোর জন্য তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্কুলের বাইরের খেলাধুলার ক্লাব কিংবা নাচগানের স্কুলকে বেছে নেয়৷ এই দেশে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন রকম কর্মকাণ্ডে নিজেদের ব্যস্ত রাখে৷ মার্ক কখ্ ইন্সটিটিউটের এক সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে, ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সি ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী সপ্তাহে অন্তত একদিন খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে৷ তবে অবসর কাটানোর ক্ষেত্রে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়াটাই তাদের প্রথম পছন্দ৷ শরাফ আহমেদ অবশ্য জানান, অবসর সময় কাটানোর জন্য জার্মান বিদ্যালয়গুলোতেও শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক ব্যবস্থা রয়েছে৷
সামাজিক যোগাযোগ
বলাবাহুল্য, ইন্টারনেটের কারণে বর্তমানে শিশু-কিশোরদের সামাজিক কর্মকাণ্ড অনেকটাই চার দেয়ালে আটকা পড়ে গেছে৷ বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার জন্য ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো বেছে নিচ্ছে তারা৷ ফলে মাঠের কোণের আড্ডা ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে৷
জার্মান শিক্ষার্থীদের ক্রমশ রাজনীতিবিমুখও হয়ে পড়েছে৷ সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে মাত্র এক তৃতীয়াংশ তরুণ-তরুণী রাজনীতির প্রতি আগ্রহী৷ অথচ আশির দশকে এই হার বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি ছিল৷ তখন অবশ্য জার্মানি ছিল দুই ভাগে বিভক্ত৷ শীতল যুদ্ধও চলছিল পুরোদমে৷ সেসব কিছু এখন আর নেই৷ পরিবর্তনটাও তাই চোখে পড়ার মতো৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক