‘মহিলা অধ্যাপক’ কর্মসূচি
৭ আগস্ট ২০১২বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকতা পেশায় সফল হতে গেলে শুধু কাজ করলেই চলে না, সেটা দেখানোরও দরকার পড়ে৷ এবং দৃশ্যত ঠিক এখানেই মহিলা অধ্যাপকরা তাদের পুরুষ সহকর্মীদের মতো এতটা অগ্রসর নন - কেউ কেউ হয়তো বলবেন, আগ্রাসী নন৷ জার্মানির যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মহিলা অধ্যাপক' কর্মসূচি চলেছে, তাদের মধ্যে ফ্রাঙ্কফুর্ট বিশববিদ্যালয়ও পড়ে৷ সেখানকার আইন বিভাগের অধ্যাপিকা আস্ট্রিড ভালরাবেনস্টাইন বললেন:
‘‘আমি নিজেই লক্ষ্য করেছি যে, ধীরে ধীরে পুরুষদের আচরণ ও ব্যবহার পাল্টায়৷ বিশেষ করে পেশাগত যোগ্যতা সংগ্রহ করার সময়, যখন তারা ২২ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে৷ ঐ সময়ে আবার মহিলাদেরও আচরণ বদলায়৷ অধ্যয়ন শুরু করার সময় দু'তরফেরই আচরণ এক: ক্লাসে বার বার হাত তোলা, আলোচনায় যোগ দেওয়া, দু'পক্ষই সমান ভালো কিংবা খারাপ৷ কিন্তু সেটা পরে বদলে যায়৷''
পুরুষরা যখন তাদের জ্ঞান এবং অন্যান্য গুণ দেখাতে, অর্থাৎ জাহির করতে শুরু করে, তখন অনেক মহিলা বিনয়ের বশে চুপচাপ থাকেন৷ আস্ট্রিড ভালরাবেনস্টাইন কিন্তু চুপচাপ থাকেননি এবং সেই অনুযায়ী ক্যারিয়ারও করেছেন৷ আইন পড়ার পর ডক্টরেট, তারপর গিসেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা, জার্মানে যাকে বলে ‘হাবিলিটাৎসিওন' এবং অধ্যাপনা বৃত্তির জন্য যা অত্যাবশ্যক৷ শেষ পর্যন্ত তিনি ফ্রাঙ্কফুর্টের ইওহান গ্যোটে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যাপনার, অর্থাৎ প্রফেসর হবার ডাক পান৷ এবং তাঁর এই যাত্রাপথে তাঁকে সাহায্য করেছে ‘প্রোপ্রফেসুর', জার্মান সরকারের মহিলা অধ্যাপক কর্মসূচি৷
‘‘এটা একটা খুব ভালো কর্মসূচি বলে আমার মনে হয়৷ এই কর্মসূচি আমাকে ভাবতে শিখিয়েছে, অধ্যাপনা পেশাটির সঙ্গে কি কি বিষয় যুক্ত: ইন্টারভিউ দেওয়া, আবেদনপত্র লেখার প্রশিক্ষণ; অধ্যাপক সতীর্থদের মহলে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় এবং আরো অনেক কিছু৷''
৪২ বছর বয়সী অধ্যাপিকা আজও সেই কোচিং কর্মসূচির নানা খুঁটিনাটি থেকে উপকৃত হন৷ তিনি যখন কোনো কনফারেন্সের আয়োজন করেন, তখন তিনি শুধু তাঁর পুরুষ সতীর্থদের কথা না শুনে নিজের উদ্যোগে মহিলা বিশেষজ্ঞদের সেই সম্মেলনে যোগদানের আহ্বান জানান৷
মহিলা অধ্যাপক কর্মসূচিটি হেসে রাজ্যের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু, যার মধ্যে ফ্রাঙ্কফুর্টের গ্যোটে বিশ্ববিদ্যালয়ও পড়ে৷ গ্যোটে বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কর্মসূচি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন আরেক আস্ট্রিড, আস্ট্রিড ফ্রানৎসকে৷ জার্মান শিক্ষকতা পেশায় মহিলাদের সাহায্য প্রয়োজন, বলে তিনি মনে করেন৷
‘‘এর পিছনে রয়েছে আমাদের অভিজ্ঞতা যে, এই গোষ্ঠী, অর্থাৎ মহিলাদের উৎসাহ প্রদান অত্যাবশ্যক, কেননা শিক্ষকতায় সর্বোচ্চ পদগুলিতে উত্তরণের পথে বহু উচ্চশিক্ষিত মহিলা হাল ছেড়ে দেন৷''
মহিলাদের আচরণই তার শুধু একমাত্র কারণ নয়৷ শিক্ষাপ্রণালীটাও তার একটা কারণ, বলে ফ্রানৎসকে মনে করেন৷
‘‘আমার দৃষ্টিকোণ থেকে মহিলা শিক্ষকরা সত্যিই বর্তমান শিক্ষাপ্রণালীতে অসুবিধায় পড়েন৷ অধ্যয়ন, গবেষণা, শিক্ষকতা, এই পেশায় ১৫০ শতাংশ উপস্থিত থাকা, সব কিছুর জন্য প্রস্তুত থাকা চাই৷ সেজন্য পারিবারিক এবং অপরাপর ক্ষেত্রে সাহায্য এবং যোগাযোগের প্রয়োজন, মহিলাদের ক্ষেত্রে যা সবসময় থাকে না৷''
এবং মহিলা অধ্যাপক কর্মসূচি ঠিক সেটাই বদলাতে চায়৷ কোচিং প্রোগ্রাম ছাড়াও সরাসরি ফেডারাল অর্থানুকুল্যে ফ্রাঙ্কফুর্টের গ্যোটে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি অধ্যাপিকার পদ সৃষ্টি করা হয়েছে৷ তবে মহিলাদেরও যেটা আরো প্রয়োজন, সেটা সম্ভবত, পুরুষদের মতোই, তাদের নিজস্ব ‘নেটওয়ার্ক'৷
প্রতিবেদন: বিয়াঙ্কা ফন ডের আউ / এসি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ