জার্মানদের রাজনীতি ভাবনা
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৩বিশ বছর বয়সি তরুণ আলেক্সান্ডার অজ্লিজলো'কেই ধরা যাক৷ আলেক্স একবার তার জন্মের শহর আখেন'এর নানা রাজনৈতিক দল ঘুরে দেখেছিল: ‘‘ওখানে খালি বুড়োরা বসে৷ আর ওরা যেভাবে কথা বলে, ওখানকার যে কাঠামো, কম বয়সের লোকজনের তা'তে হাসি পায়৷'' কাজেই তার বদলে আলেক্স গত পাঁচ বছর ধরে গ্রিনপিসের হয়ে কাজ করছে: প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে, যেমন কয়লায় চলা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলির বিরুদ্ধে৷ এমনকি একবার গ্রিনপিসের বোটে করে নর্থ সি'তেও রওনা হয়েছিল, তেলের ট্যাংকার সংক্রান্ত দুর্ঘটনা থেকে পরিবেশের বিপদ সম্পর্কে সাবধান করে দেবার জন্য৷
তরুণদের কাছে প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলির চেয়ে গ্রিনপিসের মতো পরিবেশ সংগঠনের আকর্ষণ হল, এখানে গোড়া থেকেই সক্রিয় হওয়া যায় - বছরের পর বছর কার্ডহোল্ডিং মেম্বার থেকে, নির্বাচনের সময় পোস্টার সেঁটে, তবে শেষমেষ দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলিতে সংশ্লিষ্ট হবার অধিকার অর্জন করতে হয় না৷ নিজের নির্বাচনি এলাকায় মই ঘাড়ে করে ঘোরা থেকে সেই পোস্টারের উপর যার ছবি, সেই প্রার্থী হওয়া অবধি বহু সময় লেগে যায়৷
‘বুড়িয়েছে' রাজনৈতিক দলগুলি
জার্মানির মানুষজন যে সাধারণভাবে রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়েছে, হ্যানোভার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ববিদ হাইকো গাইলিং তা মনে করেন না: ‘‘যখন দেখা যায় যে, দেশের চল্লিশ শতাংশ মানুষ সামাজিক, রাজনৈতিক অথবা অন্য কোনো উদ্যোগ কিংবা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত, তখন সেটাকে উৎসাহজনকই বলতে হয়৷'' তবে প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলি রাজনীতির নামে যা করে, তা'তে মানুষজন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে৷ বিশেষ করে তরুণরা রাজনৈতিক তকরার, ক্ষমতার লড়াই ইত্যাদির দিকে মনোযোগ দিতে রাজি নয়৷ ‘‘তরুণরা চায়, কোনো কিছুর জন্য রুখে দাঁড়াতে, সংগ্রাম করতে৷ তারা চায় হাতে হাতে ফলাফল,'' বলেন হাইকো গাইলিং৷
জার্মানিতে বিশেষ করে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলির সদস্যসংখ্যা কমছে৷ ত্রিশ বছর আগে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দলের সদস্যদের এক-তৃতীয়াংশের বয়স ছিল ৩৫ বছরের নীচে৷ আজ এসপিডি সদস্যদের মাত্র প্রতি দশজনের মধ্যে একজনের বয়স ৩৫'এর নীচে৷ রাজনৈতিক দলগুলো যেমন বুড়িয়ে যাচ্ছে, তেমনই বুড়িয়ে যাচ্ছে তাদের প্রার্থী, কর্মকর্তা, স্লোগান, পোস্টার ও বক্তৃতা৷ ও' দিয়ে আর মানুষের মন টানা সম্ভব নয়৷ কাজেই দশ বছর আগেও যেখানে ৮০ শতাংশ মানুষ ভোট দিতে যেতেন, বিগত সংসদীয় নির্বাচনে সেটা কমে দাঁড়ায় ৭০ শতাংশে৷
বিভক্ত গণতন্ত্র?
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রবের্ট ফেরকাম্প'এর চিন্তা ৭৫ কি ৭০ শতাংশ মানুষ ভোট দিতে গেলেন, তা নিয়ে নয়, কেননা ইউরোপীয় গড়ের তুলনায় জার্মানিতে নাগরিকদের ভোটে অংশগ্রহণ আদৌ খারাপ নয়৷ ফেরকাম্পের চিন্তা হল ঠিক সেই ধরনের ভোটারদের নিয়ে, যারা ভোট দেওয়াই ছেড়ে দিয়েছেন৷ ফেরকাম্পের বর্ণনায় এই সব মানুষ ‘‘গণতন্ত্রে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা পরিত্যাগ করেছেন''৷ বের্টেল্সমান ফাউন্ডেশনের একটি সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী এই ধরনের ‘‘অ-ভোটাররা'' সাধারণত সমাজের দুর্বল অংশের মানুষ এবং এদের শিক্ষাদীক্ষাও সেই অনুপাতে কম৷ কাজেই জার্মানিতে একটি সামাজিক বিচারে দ্বিধাবিভক্ত গণতন্ত্রের বিপদ দেখেন ফেরকাম্প৷