জার্মানরা বিদেশিদের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন: সমীক্ষা
১৪ ডিসেম্বর ২০১১ইউরোপের দশটি প্রতিবেশী দেশের মানুষদের তুলনায় জার্মানরা বিদেশিদের প্রতি সবচেয়ে বন্ধুভাবাপন্ন৷ কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিন ধরে চালিত এই সমীক্ষায় এই ছবিটাই ধরা পড়েছে৷ বিদেশি বিদ্বেষ নিয়েও প্রশ্ন করা হয়৷ সমীক্ষার ফল থেকে দেখা যাচ্ছে, বিদেশিদের প্রতি, ইহুদিদের প্রতি বৈরী মনোভাব সবচেয়ে বেশি পোলিশদের মনে৷ এধরণের মনোভাব সবচেয়ে কম কিন্তু ডেনমার্কের মানুষদের মধ্যে৷
এই সমীক্ষা প্রকল্পের প্রধান প্রফেসর উলরিশ শ্মিট-ডেন্টার ফলাফল প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, নিজেদের সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখার প্রবণতা জার্মানদের মধ্যে বেশ প্রকট৷ যেমন তাঁরা বলেছেন যে, বিদেশিদের মধ্যে এমন অনেক ইতিবাচক গুণ আছে যা জার্মানদের নেই৷ ইউরোপীয় প্রতিবেশীদের তুলনায় এরকম বক্তব্য বেশি শোনা গেছে জার্মানদের কাছ থেকে৷ নিজেদের সম্পর্কে এই-যে ধারণা, এটা নিজেদের দেশ, শহর, নিজেদের সংস্কৃতির সঙ্গে সংযোগটা দুর্বল করে দিচ্ছে আর এর ফলে বহু জার্মান দেশ ছেড়ে অন্য দেশে গিয়ে ঠাঁই গাড়তে প্রস্তুত বলে প্রফেসর শ্মিট-ডেন্টার মনে করেন৷ তিনি বলেন: ‘‘আর্থিক কারণে তাঁরা দেশ ছাড়তে চাইছেন, তা নয়৷ বরং বিদেশ তাদের কাছে বহু রকমের আশার হাতছানি দেয়৷ বলতে গেলে জার্মান হওয়ার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা চাপগুলো থেকে মুক্তি পেতেই বিদেশে পাড়ি দিতে চায় তাদের কেউ কেউ৷
সমীক্ষায় তরুণদের আলাদা করে প্রশ্ন করা হয়েছিল৷ এখানেও জার্মান তরুণদেরই বিদেশিদের প্রতি সবচেয়ে বন্ধুভাবাপন্ন বলে দেখা গেছে৷ তুলনায় তরুণ ফরাসিদের মধ্যে বিদেশিদের প্রতি বিরূপ মনোভাব বেশ জোরালো৷ বিদেশিদের প্রতি বন্ধুসুলভ মনোভাবের ক্ষেত্রে একেবারে নীচের স্থানটি ডাচ তরুণদের ভাগে পড়েছে৷ এটাকে অধ্যাপক শ্মিট-ডেন্টার নেদারল্যান্ডস-এর তরুণদের মন ও মানসে এক ধরনের ‘বিপ্লব' বলে উল্লেখ করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এক সময় অভিবাসীদের সমাজের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে ডাচদের অনুকরণীয় মডেল হিসেবে দেখেছি আমরা৷ কিন্তু সেদিন আর নেই৷''
পাশাপাশি আর একটি সমীক্ষার ফলও বেরিয়েছে সদ্য৷ এই সমীক্ষাটি চালান জার্মানির বিলেফেল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী ভিলহেল্ম হাইটমায়ার-এর নেতৃত্বে গবেষকদের একটি দল৷ সমাজে সংখ্যালঘু মানুষদের প্রতি বিরূপ মনোভাব কতটা তা লক্ষ্য করেছেন গবেষকরা দীর্ঘ দশ বছর ধরে৷ ২০০০ জনকে টেলিফোন করে মতামত জানতে চাওয়া হয়৷ দেখা যাচ্ছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিরূপ মনোভাব বেশ কমে গেছে৷ ২০০২ সালে যেখানে ৮০ শতাংশ মানুষ সমকামী বিয়ে নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত প্রকাশ করে, সেখানে ২০১১ সালে প্রতি পাঁচজনে একজন তা নিষিদ্ধ করতে চায়৷
নারীর ভূমিকা নিয়েও মত পাল্টেছে৷ দশ বছর আগে এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করতেন - স্ত্রী আর মা-এর ভূমিকাতেই থাকা উচিৎ মেয়েদের৷ এখন প্রতি পাঁচজনে একজন এই মত পোষণ করে৷ তবে গৃহহীন হয়ে পড়া এবং সামাজিক ভাতার ওপর নির্ভরশীল মানুষদের প্রতি বিরূপ মনোভাব বেড়েছে৷ সমীক্ষাধীন উত্তরদাতাদের অর্ধেকেরও বেশি মনে করে, দীর্ঘদিন ধরে বেকার যারা, কাজ করার কোন আগ্রহ তাদের নেই৷ প্রতি তিনজনের একজন মনে করে, গৃহহীন যারা তারা আসলে কাজকর্ম করতেই নারাজ৷
প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ