1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানি: নিজে বাঁচলে জলবায়ুর নাম!

ডয়চে ভেলের মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলাম৷
আরাফাতুল ইসলাম
১১ নভেম্বর ২০২২

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি ঠেকাতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিরোধে কয়েকবছর ধরে বেশ সোচ্চার ছিল জার্মানি৷ কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বদলে গেছে হিসাব৷ এখন আসন্ন শীতে মানুষ বাঁচানো জলবায়ুর চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে সরকারের কাছে৷

https://p.dw.com/p/4JNc4
জার্মানির একটি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র
একাধিক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনরায় চালু করেছে জার্মান সরকারছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/M. Meissner

জার্মানি জ্বালানি তথা প্রাকৃতিক গ্যাস আর কয়লার জন্য রাশিয়ার উপর বেশ নির্ভরশীল৷ গতবছরও ইউরোপের দেশটি যত কয়লা আমদানি করেছে তার অর্ধেক এসেছে রাশিয়া থেকে, গ্যাসেরক্ষেত্রে হিসাবটা আরেকটু বেশি, ৫৫ শতাংশই অর্থের বিনিময়ে রাশিয়া দিয়েছে৷ এমন নির্ভরশীলতা আরো বাড়াতে রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি নতুন গ্যাসলাইনও বসিয়েছিল মধ্য ইউরোপের শক্তিশালী অর্থনীতির এই দেশ৷

কিন্তু বাঁধ সেধেছে ইউক্রেন যুদ্ধ৷ রাশিয়ার সঙ্গে জার্মানির জ্বালানি সংক্রান্ত দীর্ঘ মধুচন্দ্রিমার ইতি ঘটেছে৷ কেননা, যুদ্ধ শুরুর পর বার্লিনের পক্ষে আর মধ্যপন্থা মানে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ টাইপের সম্পর্ক উভয় দেশের সঙ্গে রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না৷ বরং রাশিয়ার অযোচিত ইউক্রেন হামলার কারণে এখন পুরোপুরি ইউক্রেনের পক্ষেই চলে গেছে ইউরোপের এই মোড়ল৷

এর ফলাফল হয়েছে সুদূর প্রসারী৷ রাশিয়ার কয়লা আর গ্যাস ছাড়া জার্মানি অচল হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয় ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর৷ রাশিয়া অবশ্য শুরুতেই জার্মানিকে গ্যাস দেয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়নি৷ জার্মানিও ইউক্রেনের পক্ষ নিলেও গ্যাস কেনার নানা পথ খোলা রাখতে চয়েছিল৷ কিন্তু তাসত্ত্বেও বার কয়েক নানাবাহানায় অল্প সময়ের জন্য গ্যাস বন্ধ করে দিয়ে ভ্লাদিমির পুটিন বুঝিয়ে দিয়েছেন গোয়ার্তুমিতে সেরা তিনি৷ তার এসব কর্মকান্ডে জার্মানদের মধ্যে ভালোই ভয় ঢুকে গেছে৷ 

শীতের মৌসুমে তাই রাশিয়ার গ্যাস পুরো বন্ধ হয়ে গেলেও যাতে জার্মানিতে কেউ প্রচণ্ড ঠান্ডায় মরে না যায় সেটা নিশ্চিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ওলাফ শলৎসের সরকার৷ রাতারাতি বিকল্প হিসেবে পৃথিবীর যেখান থেকে সম্ভব তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আনার উদ্যোগ নিয়েছে৷ সেই গ্যাস জার্মানির মধ্যে ছড়িয়ে দিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরির কাজও ঝড়ের গতিতে আগাচ্ছে৷ এছাড়া ইউরোপের অন্যান্য গ্যাস রপ্তানিকারকদের কাছ থেকেও গ্যাস পাওয়ার পথ খোলা রেখেছে বার্লিন৷

জার্মানির ঘরগৃহস্থলি গরম রাখার যে প্রক্রিয়া তা অনেকটাই গ্যাসনির্ভর৷ ফলে শীতকালে নিজের দেশের নাগরিকদের রক্ষায় রাশিয়ার গ্যাসের বিকল্প যা যা সম্ভব তা নিশ্চিত করছে ইউরোপের এই দেশ৷

পাশাপাশি, একাধিক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনরায় চালু করেছে শলৎস সরকার৷ এসব খনিতে আবার জার্মানির কয়লাখনি থেকে তোলা কয়লা ব্যবহারের দিকে জোর দেয়া হচ্ছে৷ উদ্দেশ্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে জার্মানির নিজস্ব চাহিদা মেটানো৷

ফলে দেখা যাচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধ পরবর্তী জ্বালানি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনরোধের বিষয়াদি থেকে কিছুটা সরে এসেছে জার্মানি৷ বিশেষ করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়া পরিবেশের জন্য বেশ ক্ষতিকর৷ জার্মান সরকারের ইচ্ছা ছিল ২০৩৮ সাল নাগাদ কয়লাভিত্তিক জ্বালানি থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসা৷ কিন্তু সেটা এখন সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে৷

জার্মানির কয়লামুখী হওয়ার এই নীতি নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে বেশ৷ বিশ্বব্যাপী পরিচিত জলবায়ু অ্যাক্টিভিস্ট গ্রেটা টুনব্যার্গ জার্মানি কেন পরমাণু বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কয়লার দিকেই আবার ঝুঁকেছে সেই প্রশ্ন তুলেছেন৷ তিনি মনে করেন, এটা একটা ‘‘বেড আইডিয়া’’৷

আরাফাতুল ইসলাম, ডয়চে ভেলে
আরাফাতুল ইসলাম, ডয়চে ভেলে

জার্মানি অবশ্য অতীতেই ঘোষণা দিয়েছিল চলতি বছরের শেষ নাগাদ পরমাণু জ্বালানি থেকে পুরোপুরি সরে দাঁড়াবে দেশটি৷ তাসত্ত্বেও শীতের মাসগুলোতে জ্বালানি সংকট সৃষ্টি হলে যাতে জনগণ ভোগান্তিতে না পরে সেজন্য দুটো কেন্দ্র আরো কয়েকমাস চালু রাখতে রাজি হয়েছে দেশটির সরকার৷ এর বেশি নয়৷

এদিকে, মিশরে চলছে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন কপ২৭৷ এই সম্মেলনের ফলাফল কী হবে তা নিয়ে খুব একটা আশাবাদী নন জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷ তিনি সোজাসাপ্টাই বলে দিয়েছেন, বিশ্বে যখন সামরিক সংঘাত চলছে, তখন এই সম্মেলন থেকে জলবায়ু চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার সম্ভবনা কম৷ বিশেষ করে রাশিয়া বা চীন এখন কপ২৭-এ কোনো গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন না তিনি৷

বিষয়টি এমন নয় যে জার্মানি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না৷ বরং বৈশ্বিক উষ্ণতাবৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে গত দুই দশকে ১৪৫ বিলিয়ন ইউরোর ক্ষতি হয়েছে দেশটির৷ পাশাপাশি শিল্পোন্নত দেশ এবং ইউরোপের মোড়ল হিসেবেও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকা রাখার দায় রয়েছে বার্লিনের৷ কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আপাতত ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট জ্বালানি সংকট থেকে নিজের দেশের মানুষকে রক্ষাকেই মূল দায়িত্ব মনে করছে জার্মানি৷ বাকি সব পরে হবে৷