অবসরপ্রাপ্তদের কাজ
৩১ আগস্ট ২০১২মজবুত কাঠামো
জার্মানিতে অবসর গ্রহণের বয়স সাধারণত পুরুষদের জন্য ৬৫, নারীদের ক্ষেত্রে ৬৩৷ অবসর ভাতার মজবুত কাঠামোর আওতায় যারা চাকুরি জীবনে মাশুল দিয়েছেন, তারা সকলেই মাসে-মাসে ভাতা পান৷ বেশ নিশ্চিন্ত হয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেন৷ বয়স্করা যে একেবারেই কাজ করেন না তা নয়৷ ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত নয়, ‘মিনি-জব' বা সাময়িক কাজের ক্ষেত্রেই তাঁদের দেখা যায়৷
কিন্তু এতদিন তার কোনো হিসাব ছিল না৷ সম্প্রতি বামপন্থী দল ‘ডি লিংকে' সংসদে এই সংখ্যা জানতে চাওয়ায় বাস্তব পরিস্থিতি জানা গেছে৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০০০ সাল থেকে এখনো পর্যন্ত কর্মরত অবসরপ্রাপ্তদের সংখ্যা প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ অর্থাৎ প্রায় ৭৬১,০০০ মানুষ অবসর নিয়েও কাজ করে চলেছেন৷ তাদের মধ্যে অনেকের বয়স আবার ৭৪ বা তার বেশি৷ মনে রাখতে হবে, এই মুহূর্তে জার্মানিতে অবসরপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ৷
মানুষের ক্ষমতা বাড়ছে
এই প্রবণতার একটা প্রেক্ষাপট রয়েছে৷ জীবনযাত্রার মান ও চিকিৎসার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে জার্মানিতে মানুষের আয়ু বেড়ে চলেছে৷ বয়স বাড়া সত্ত্বেও তারা অনেক দিন শারীরিকভাবে সক্ষম থাকতে পারছে৷ অর্থনীতি গবেষণা কেন্দ্র আইডাব্লিউএইচ'এর হ্যাব্যার্ট বুশার মনে করেন, ‘‘আজকাল ৬৫ বছর বয়সিদের আর বৃদ্ধ বলা হয় না৷ শরীর ও মন তখনও বেশ তাজা থাকে৷ ফলে তখন কোনো না কোনো কাজ খোঁজার তাগিদ দেখা যায়৷ অনেকে বিনা পারিশ্রমিকেও কোনো ভালো কাজে নিজেকে জুড়ে নেন৷ কেউ কেউ কিছু বাড়তি উপার্জন করতে কাজ খোঁজেন৷''
অর্থাভাবের তাড়না
শ্রমিক সংগঠনগুলি অবশ্য বিষয়টিকে শুধু ইতিবাচক হিসেবে গণ্য করতে প্রস্তুত নয়৷ তাদের সাফ বক্তব্য, এত সংখ্যক অবসরপ্রাপ্ত মানুষ যেভাবে উপার্জনের পথে পা বাড়াচ্ছেন, তার অর্থ হলো, তাদের অবসর ভাতার অঙ্ক জীবন ধারণের জন্য যথেষ্ট নয়৷ জার্মানির কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনের পরিচালক মণ্ডলীর সদস্য আনেলি বুন্টেনবাখ ডয়চে ভেলে'কে বলেন, ‘‘আমার বিশ্বাস, এর থেকে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে অনেকেই তাদের অবসর জীবন ভোগ করার অবস্থায় নেই৷ কারণ তাদের অবসর ভাতা জীবন ধারণের জন্য যথেষ্ট নয়৷ চাহিদা মেটাতে তাদের এমন সব ছোটখাটো কাজ করতে হচ্ছে, যার পারিশ্রমিকও ভালো নয়৷''
শুধু শ্রমিক সংগঠন নয়, অবসর ভাতার অঙ্ক নিয়ে সন্তুষ্ট নয় সামাজিক সংগঠনগুলিও৷ তাদের মতে, এই প্রবণতা মোটেই বিচ্ছিন্ন নয়৷ গত কয়েক বছর ধরে যেভাবে অবসর-ভাতার হার কমে চলেছে, তার ফলে জীবনযাত্রার মানও কমছে৷
একাধিক বিষয়ের সমন্বয়
তবে শুধু অঙ্কের হিসেবে মানুষের প্রকৃত অবস্থার মূল্যায়ন কতটা নির্ভরযোগ্য, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে৷ কে কোন অঙ্কের অবসর ভাতা পান, তা থেকে তার আর্থিক অবস্থা বোঝা সহজ নয় বলে অনেকে মনে করেন৷ কারণ সরকারি কাঠামোর সাধারণ ভাতার পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠানেই নিজস্ব বাড়তি ভাতার ব্যবস্থা রয়েছে৷ বেসরকারি অবসর ভাতারও ব্যবস্থা করেন কেউ কেউ৷ সেই ভাতার হিসেব পাওয়া কঠিন৷ অনেকে আবার চাকরি জীবনে নিজস্ব উদ্যোগে সঞ্চয় করেছেন বা আয়ের অন্য ব্যবস্থা করেছেন৷
তাছাড়া আঞ্চলিক স্তরেও কিছু বিশেষত্ব রয়েছে৷ যেমন জার্মানির পূর্বাঞ্চলে আয়ের মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম৷ ফলে অবসর ভাতাও সেই তুলনায় বেশি নয়৷ সেখানে অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে কাজ করতে দেখা যায়৷ বহুকাল ধরে কর্মহীন থাকার কারণেও অনেকে যথেষ্ট মাত্রায় অবসর ভাতা পান না৷ সাবেক পূর্ব জার্মানির কমিউনিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অবসর ভাতার যে কাঠামো ছিলো, তা আজকের যুগের জন্য উপযুক্ত নয়৷ ফলে সেই কারণেও পূবের অনেকের অবসর ভাতা কম৷
যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কাজের চরিত্রও বদলাচ্ছে৷ অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করিয়ে দেন, যে অতীতে কায়িক পরিশ্রম বেশি করতে হতো৷ ফলে কারো পক্ষে বেশিদিন ধরে অনেক কাজ করা সহজ ছিলো না৷ প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আজ কর্মক্ষেত্র বদলে গেছে৷ বোতাম টিপে সহজেই অনেক কাজ করা সম্ভব৷
‘পরিস্থিতির অবনতি'
শ্রমিক ও কর্মী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অবশ্য এমন যুক্তি মানতে নারাজ৷ তাদের মতে, পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে৷ শুধু সক্রিয় থাকার জন্য স্বেচ্ছায় কেউ এমন কম পারিশ্রমিকে ‘মিনি জব' করে না বলে তারা মনে করে৷ মূল চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তারা শুধু অভাব মেটাতে এমন কাজ করতে বাধ্য হয় বলে তাদের যুক্তি৷
জার্মানিতে অবসর ভাতার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে৷ একদিকে গড় আয়ু বেড়ে চলেছে, অন্যদিকে জন্মহার কমতির দিকে৷ ফলে কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত মানুষের অনুপাতের মধ্যে ফারাকও বাড়ছে৷ এই অবস্থায় শুধু সরকারি অবসর ভাতা কাঠামোর ঘাটতি মেটাতে শ্রমিক ও কর্মীদের বাড়তি বেসরকারি অবসর ভাতার ব্যবস্থা করার জন্য উৎসাহ দিচ্ছে রাষ্ট্র৷
প্রতিবেদন: ওলে কেম্পার / এসবি
সম্পাদনা: জাহিদুল হক