জার্মানিতে আত্মহত্যা প্রবণতা
১৫ জুন ২০১৬যুদ্ধপরবর্তী জার্মানিতে আশির দশকে আত্মহত্যার হার চরমে পৌঁছানোর পর পরের তিন দশকে তা কমে অর্ধেক হয়ে আসে৷ ২০০৭ সাল থেকে কিন্তু আত্মহত্যার হার আবার বাড়ছে৷ বছরে দশ হাজার মানুষের আত্মহত্যা ছাড়াও, আত্মহত্যার প্রচেষ্টা করেন অন্তত এক লক্ষ মানুষ৷
আত্মহত্যার পরিসংখ্যানের অসুবিধা হল এই যে, তা অঙ্কের মতো; অঙ্ক আছে, কিন্তু উত্তরটা নিজেই আঁক কষে বার করে নিতে হয়৷ যেমন জার্মানিতে ৯০ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে কোনো মানসিক রোগের কারণে৷ অথবা: বেশি বয়সের মানুষরাই বেশি আত্মহত্যা করে থাকেন৷ অপরদিকে তরুণ-কিশোরদের মধ্যে দুর্ঘটনার পরেই আত্মহত্যা হল মৃত্যুর অন্যতম কারণ৷ ১৫ থেকে ২৫ বয়সিদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রচেষ্টা সবচেয়ে বেশি; এক্ষেত্রে আবার তরুণ মহিলারাই সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার প্রচেষ্টা করে থাকেন৷ কিন্তু সব মিলিয়ে যারা আত্মহত্যা করেন, তাদের ৭০ শতাংশই পুরুষ৷ আত্মহত্যা করার সময় আত্মহন্তাদের গড় বয়স দাঁড়ায় ৫৭৷
চিকিৎসকদের মধ্যে আত্মহত্যার হার ও প্রবণতা দেখলে চমকে যেতে হয়: পুরুষ ডাক্তারদের আত্মহত্যার হার সাধারণ নাগরিকদের চেয়ে ৩ দশমিক ৪ গুণ বেশি; মহিলা ডাক্তারদের ক্ষেত্রে তা ৫ দশমিক ৭ গুণ! দেশের কারাগারগুলিতে বন্দিদের মধ্যে আত্মহত্যাই হলো মৃত্যুর প্রথম কারণ৷
১৯৮০ থেকে ২০০৭ অবধি যে আত্মহত্যার সংখ্যা কমে অর্ধেক হয়ে গিয়েছিল,তার একটা কারণ সম্ভবত আশির দশকের সূচনায় জার্মানিতে মানসিক চিকিৎসা সংক্রান্ত সংস্কার৷ সেযাবৎ আরো অনেক ছোট ছোট মানসিক রোগের হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্র সৃষ্টি করা হয়েছে৷ এছাড়া মানসিক বিষাদ, সাইকোসিস বা মনোবৈকল্য ইত্যাদি রোগের জন্য ওষুধপত্রের প্রভূত উন্নতি ঘটেছে৷ সবচেয়ে বড় কথা, সুইসাইড বা আত্মহত্যা আর সমাজে ‘ট্যাবু' নয়, তা নিয়ে কথাবার্তা বলা চলে, সাহায্য খোঁজা ও নেওয়া চলে৷
জার্মানিতে আত্মহত্যা নিবারণ সমিতি বহুদিন ধরেই আছে, যেমন আছে বিপন্ন ও পীড়িতদের জন্য বিভিন্ন হটলাইন – কেননা যে আত্মহত্যা করার কথা ভাবছে, তার সবচেয়ে আগে প্রয়োজন একজন কথা বলার লোক৷ সমৃদ্ধ সমাজে একাকীত্বের সমস্যাটা ব্যাপক, কাজেই সাইকোথেরাপির সাহায্য নেওয়াই বোধহয় ভালো: মানুষজন আজকাল সে রকম সাহায্য নিতে আগের চেয়ে অনেক কম দ্বিধা করেন৷
মনে রাখতে হবে, বিশেষ করে কম বয়সের মানুষদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রচেষ্টা এক হিসেবে এসওএস, মানে সাহায্য প্রার্থনা: ‘‘আমাকে বাঁচাও!'' কাজেই চিকিৎসক ও মনস্তত্ত্ববিদরা আর এর মধ্যে কোন আত্মহত্যার প্রচেষ্টাটা ‘আন্তরিক', আর কোনটা শুধু মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা, এই অবান্তর ভেদাভেদ করেন না৷ যারা একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে,তাদের মধ্যে প্রতি তৃতীয়জন আবার আত্মহত্যার চেষ্টা করবে – প্রতি দশজনের একজন কোনো না কোনোদিন সত্যিই আত্মহত্যা করবে৷ এই হলো বাস্তব সত্য৷
কাজেই জার্মানি জুড়ে আছে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন হটলাইন, ক্রাইসিস লাইন, টেলিফোন কাউন্সেলিং – আর সে সব নম্বর হাতের কাছে না থাকলে, ১১২ এমার্জেন্সি তো আছেই!
এ বিষয়ে আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের ঘরে৷