জার্মানির কার্যনির্বাহী সরকার
২২ অক্টোবর ২০১৩২২শে সেপ্টেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে কোনো নির্বাচনি জোটই সংসদে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি৷ মহাজোট সরকার গড়ার লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হচ্ছে৷ কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী সংসদের নিম্ন কক্ষ বুন্ডেসটাগ-এ নির্বাচনের এক মাসের মধ্যে অধিবেশন বসতে হবে৷ মঙ্গলবার এই প্রথম অধিবেশনের সঙ্গে সঙ্গে বিদায়ী সরকারের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হচ্ছে৷ কিন্তু তা বলে নতুন সরকার গঠনে বিলম্বের কারণে দেশ তো নেতৃত্ববিহীন হয়ে পড়তে পারে না!
জার্মান সংবিধানে এমন পরিস্থিতির জন্য স্পষ্ট বিধান রয়েছে৷ যতদিন না নতুন সরকার গঠিত হচ্ছে, ততদিন বিদায়ী সরকারই কাজ চালিয়ে যাবে৷ শুধু তাই নয়, চ্যান্সেলর হিসেবে আঙ্গেলা ম্যার্কেল কাজ চালিয়ে যেতে বাধ্য৷ এই সময়কালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইওয়াখিম গাউকের কাঁধে গুরুদায়িত্ব এসে পড়ছে৷ স্থায়ী সরকার যাতে গঠিত হয়, সেই লক্ষ্যে তাঁকে বিভিন্ন দলের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে হবে৷ সেটা সম্ভব না হলে তিনি হয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাড়াই ‘মাইনরিটি' সরকার গঠনের পথ সুগম করতে পারেন অথবা নতুন নির্বাচনের নির্দেশ দিতে পারেন৷
ততদিন পর্যন্ত সব কিছু আগের মতোই চলবে৷ জার্মান সংবিধান অনুযায়ী কার্যনির্বাহী সরকারের অধিকার ও দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের থেকে আলাদা নয়৷ বিদেশে জার্মানির প্রতিনিধিত্ব করা থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার পথে কোনো বাধা নেই৷ তবে এমন এক সরকারের গণতান্ত্রিক বৈধতা থাকে না বলে অনেক সমালোচক মনে করেন৷
বাস্তবে জার্মানিতে কার্যনির্বাহী সরকারের হাত-পা কিন্তু বাঁধা থাকে৷ এমন সরকার গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বিরত থাকে৷ কে জানে, নতুন সরকার তা মেনে নেবে কি না! তাছাড়া নতুন সংসদও বিদায়ী সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ নাও করতে পারে৷ তবে আঙ্গেলা ম্যার্কেল সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্তরে গাড়ির কার্বন নির্গমনের মাত্রা শিথিল করার জন্য যেভাবে জার্মানির হয়ে তদ্বির করেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ নিন্দুকেরা প্রশ্ন তুললেও বাকিরা বলছেন, যে কোনো সময়েই জার্মানির স্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব পালন করতে হয়৷ সামাজিক গণতন্ত্রীদের নেতৃত্বে সরকারও এমন পরিস্থিতিতে ঠিক একই কাজ করতো৷
সব ক্ষেত্রেই অবশ্য কার্যনির্বাহী সরকার সিদ্ধান্ত এড়িয়ে যেতে পারে না৷ যেমন ১৯৯৮ সালের নির্বাচনের পর কসোভো সংকট এমন এক মাত্রায় পৌঁছেছিল, যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক হস্তক্ষেপের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিল৷ জার্মানিতে হেলমুট কোলের নেতৃত্বে সরকার তখন সদ্য ক্ষমতা হারিয়েছে৷ অন্যদিকে, চ্যান্সেলর হিসেবে গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার তখনও ক্ষমতায় আসেননি৷ তখন বিদায়ী ও সম্ভাব্য নতুন সরকারের শীর্ষ প্রতিনিধিরা মিলে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে বসেছিলেন৷
কার্যনির্বাহী সরকারের কোনো নির্দিষ্ট মেয়াদও স্থির করে দেয়া হয় না৷ যেমন সম্প্রতি বেলজিয়ামে রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশ চালিয়েছে এক কার্যনির্বাহী সরকার৷ কিন্তু জার্মানিতে এমনটা ঘটার সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ৷ তাঁদের মতে, সে ক্ষেত্রে নতুন নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনাই বেড়ে যায়৷