উগ্রবাদী ইসলাম
১৪ আগস্ট ২০১২অর্থ ছাড়া কোনো ধরনের রাজনৈতিক বা উগ্রবাদী সংগঠন চলতে পারে না৷ তা সে আফগান তালেবানই হোক, অথবা ইসলামপন্থি সালাফিরা – সন্ত্রাসবাদের বিকাশেও প্রয়োজন অর্থের৷ আর সেই অর্থেরই একটা বড় অংশ আজকে আসছে জার্মানি থেকে৷
না, রমজান একা নয়৷ জার্মানিতে তার মতো বহু মানুষ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে নানা ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত৷ যেমন বললেন ড্রেসডেন শহরের হানা-আরেন্ট-ইন্সটিটিউট'এর প্রধান মিখায়েল লগভিনোভ৷ তাঁর কথায়, ‘‘উগ্রপন্থি ইসলামিদের জন্য ইউরোপ যে শুধু একটি লক্ষ্যবস্তু – তা নয়, ইউরোপ অর্থায়নের জন্যও একটা শক্তিশালী ঘাঁটি৷ এ কারণেই বছরের পর বছর সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি এমন মানুষদের জার্মানিতে পাঠিয়েছে, যারা এই অর্থায়নকে সম্ভব করে তুলতে পারে৷ সে ১০০ ইউরোই হোক, অথবা ১০০০৷''
জার্মানিতে উগ্রবাদী তৎপরতা নতুন নয়
২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে যে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল, তার পরিকল্পনাও জার্মানিতে হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়৷ দেশটির কেন্দ্রীয় অপরাধ বিষয়ক কার্যালয় বা বিকেএ জানায়, জার্মানিতে এক হাজারেরও বেশি মুসলিম উগ্রপন্থি রয়েছে এবং যে কোনো সময় সহিংস ঘটনা ঘটানোর মতো প্রস্তুতিও রয়েছে তাদের৷ বিকেএ'র তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে উগ্রবাদ সংক্রান্ত ৩৫২টি ঘটনার তদন্ত চলছে জার্মানিতে৷ শুধু তাই নয়, গত কয়েক বছর ধরে উগ্রপন্থিদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে বলেও জানিয়েছে বিকেএ৷
উগ্রবাদ বিশেষজ্ঞ মিখায়েল লগভিনোভ বলেন, ‘‘অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, গত প্রায় দু'বছর ধরে সালাফি মতাদর্শে দীক্ষিত মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে জার্মানিতে৷ তারা প্রায়ই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে যাচ্ছে৷ এছাড়া, জার্মান বংশোদ্ভূত যেসব মানুষ সশস্ত্র জেহাদের ধারণাকে সমর্থন করে বা নিজেরাই সেই ধর্মযুদ্ধে অংশ নেয়, তাদের অধিকাংশই কোনো না কোনোভাবে সালাফি মতাদর্শের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল বা আছে৷''
জার্মানিতে সনাতন সালাফি আদর্শ
সালাফি কথাটা আরবি ‘সালাফ' শব্দ থেকে এসেছে৷ যার অর্থ পূর্বপুরুষ৷ চতুর্দশ শতকের ইসলামি ধর্মমত অনুযায়ী, পূর্বপুরুষদের ধর্মবিশ্বাস এবং জীবনচর্যা কঠোরভাবে মেনে চলে সালাফিরা৷ তাদের মতে, মুসলিমরা ক্রমশ আদিযুগের সেই মূল আদর্শ থেকে সরে গেছে৷ তাই এবার, সেই মৌলিক আদর্শের পথে ফিরে যাবার সময় এসেছে৷ সময় এসেছে জেহাদের৷
আর সেই উদ্দেশ্যেই নিজেদের প্রচার কাজে ইন্টারনেট ও অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে সালাফি গোষ্ঠীর অনুসারীরা৷ করে অর্থায়নের ব্যবস্থা৷ স্বাভাবিকভাবেই, জার্মানিতে তাদের প্রধান স্তম্ভ হলো তরুণ সম্প্রদায়৷ আর সেটাই ভয়ের কারণ৷
জার্মান অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার সমীক্ষা অনুসারে এ মুহূর্তে কট্টর ইসলামি সংগঠনের সংখ্যা জার্মানিতে অন্তত ২৯টি৷ সদস্য সংখ্যা কমপক্ষে ৩৭ হাজার৷ তবে জার্মানিতে উগ্রবাদের এই ব্যাপ্তিতে চিন্তিত মুসলিম সম্প্রদায়ও৷ বলাবাহুল্য, তরুণদের উগ্র ইসলামপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়াটা ব্যাহত করতে চায় তারা – যা বর্তমান পরিস্থিতিতে সত্যিই কষ্টসাধ্য!
প্রতিবেদন: গ্যুনথার বির্কেনস্টক / ডিজি
সম্পাদনা: জাহিদুল হক