জার্মানিতে খুন ও সহিংসতা বেড়েছে
২৫ এপ্রিল ২০১৭বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ২০১৬ সালের অপরাধ পরিসংখ্যান পেশ করতে গিয়ে জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস ডেমেজিয়ার বলেন, ‘‘এখানে কোনো সুগারকোটিং করা হবে না’’ – অর্থাৎ অপ্রিয় সত্য গোপন করা হবে না৷
গত বছর সহিংস অপরাধের সংখ্যা বাড়ে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ – ২০১৫ সালে যেখানে ১,৮১,৩৮৬টি ঘটনা নথিবদ্ধ করা হয়েছিল, ২০১৬-য় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৯৩,৫৪২টি৷
মাদক সংক্রান্ত অপরাধও ৭ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩,০২,৫৯৪টি ঘটনায়৷ চিন্তনীয় যে, আগ্নেয়াস্ত্র সংক্রান্ত অপরাধের পরিমাণ ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪,৪৪৩টি ঘটনায়৷
তবে সব মিলিয়ে অপরাধ কিন্তু বিশেষ বাড়েনি – ২০১৫ থেকে ২০১৬ সাল অবধি মাত্র শূন্য দশমিক সাত শতাংশ – সামগ্রিকভাবে প্রায় ৬৪ লাখ অপরাধের ঘটনা৷ ওদিকে চুরির সংখ্যা কমেছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ৷
শারীরিক আক্রমণ, খুন, নরহত্যা এবং ধর্ষণ, সব কিছুর হার বেড়েছে ২০১৬ সালে৷ ডেমেজিয়ার এই প্রবণতাকে উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করেন এবং এর জন্য সাধারণভাবে সমাজে ‘‘স্থূলতা বৃদ্ধি’’-কে দায়ী করেন৷ তবে তিনি এর জন্য গত বছর উদ্বাস্তুদের বিপুল সংখ্যায় আগমন বা অন্য কোনো গোষ্ঠীকে বিশেষভাবে দায়ী করতে অস্বীকার করেন৷ ‘‘আমরা দ্বেষ, শ্রদ্ধার অভাব এবং সাধারণভাবে সহিংসতা বৃদ্ধির ঘটনা দেখছি৷ সেজন্য আমরা কোনো বিশেষ গোষ্ঠীকে দায়ী করতে চাই না - তা সে বাম, ডান বা বিদেশি, যেদিক থেকেই হোক-’’ বলেন ডেমেজিয়ার৷
রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে অপরাধ বৃদ্ধি
ডেমেজিয়ার যা-ই বলুন, যাবতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে একটি পরিসংখ্যান খুব গুরুত্ব পাচ্ছে, আর তা হলো ২০১৫ সালে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী ও উদ্বাস্তুদের মধ্যে অপরাধমূলক ঘটনার সংখ্যা ছিল ১,১৪,০০০; কিন্তু ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৭৪,০০০৷
‘‘সহিংস অপরাধে সংশ্লিষ্ট জার্মানদের সংখ্যা বেড়েছে এক শতাংশ, কিন্তু অভিবাসীদের অপরাধের সংখ্যা বেড়েছে ৯০ শতাংশ,’’ বলেছেন ডেমেজিয়ার৷ অপরদিকে বহু অপরাধ ঘটেছে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের নিজেদের মধ্যে, তাদের নিজস্ব আবাস ও শিবিরে – যোগ করেন ডেমেজিয়ার৷
স্যাক্সনি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কুস উলবিশ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষদের সভাপতি হিসেবে৷ তিনি জানান যে, উদাহরণস্বরূপ স্যাক্সনিতে মাত্র এক শতাংশ অধিবাসী যাবতীয় অপরাধের জন্য দায়ী; এছাড়া সিরিয়া থেকে আগত উদ্বাস্তুদের চেয়ে অন্যান্য দেশ থেকে আগত উদ্বাস্তুদের অপরাধে সংশ্লিষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বেশি৷
চরম দক্ষিণপন্থি ও অপরাপর ‘হেট ক্রাইম’
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা অভিসন্ধি থেকে সম্পাদিত অপরাধের ক্ষেত্রে চরম দক্ষিণপন্থিরা অর্ধেকের বেশির জন্য দায়ী৷ মোট ৪১,৫৪৯টি ঘটনার মধ্যে ২৩,৫৫৫টির জন্য তারাই দায়ী৷ তবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপরাধের ক্ষেত্রে অ-জার্মানরাও ৩,৩৭২টি ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ছিল, ২০১৫ সালের তুলনায় যা ৬৬ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি৷
গতবছর জার্মানিতে তথাকথিত হেট ক্রাইমের সংখ্যাও বেড়েছে – বিশেষ করে বহিরাগতদের বিরুদ্ধে৷ ইহুদিবিদ্বেষ সংক্রান্ত ঘটনার সংখ্যা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৪৬৮-তে৷ অপরদিকে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসের উপর আক্রমণের সংখ্যা কিছুটা কমেছে৷
বেন নাইট/এসি