জার্মানিতে দক্ষ শ্রমিক আইনের খসড়া অনুমোদন
২০ ডিসেম্বর ২০১৮এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নীতি অনুসরণ করলে জার্মানি লাভবান হবে, বলছেন ব্যবসায়ীরা৷
দীর্ঘদিন ধরে জার্মান ব্যবসায়ীরা এই আইন পাসের জন্য তদবির করে চলেছেন৷ গত তিন দশক ধরে রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল দক্ষ শ্রমিক অভিবাসন ইস্যুটি৷ তবে অবশেষে আঙ্গেলা ম্যার্কেলের মন্ত্রিসভা আইনটিকে আলোর কাছাকাছি নিয়ে এসেছে৷
বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে দর কষাকষির পর অবশেষে এ বিষয়ে একমত হয় মন্ত্রিসভা৷ বুধবার আলোচনার ফল নিয়ে তিন মন্ত্রী হাজির হন গণমাধ্যমের সামনে৷
তাঁরা জানালেন, ২০২০ সাল নাগাদ দক্ষ বিদেশি শ্রমিক আনার কথা চিন্তা করছে সরকার৷ কিন্তু পার্লামেন্টে ম্যার্কেলের খ্রিষ্টীয় গণতান্ত্রিক দল সিডিইউ-এর রক্ষণশীল অংশের বিরোধিতায় পড়ার শংকা এখনও রয়েই যাচ্ছে৷
শ্রমমন্ত্রী হুবের্টাস হাইল বলছেন, ‘‘আধুনিক জার্মানির জন্য এটি একটি ভালো দিন৷'' অর্থমন্ত্রী পেটার আল্টমায়ার এই দিনকে একটি ‘ঐতিহাসিক' দিন হিসেবে উল্লেখ করেছেন৷
তবে শরণার্থী ইস্যুতে জার্মানির জোট সরকারকে বিপদে ফেলে দেয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হোর্স্ট সেহোফার জার্মান সমাজে এর প্রভাব বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘‘আমরা সমাজব্যবস্থায় বা জব সেন্টারগুলোতে দক্ষ শ্রমিকদের ভিড় চাই না, তবে চাকরিতে তাঁদের নেয়া যেতে পারে৷''
কর্মী সংকট ও প্রস্তাবিত আইন
নতুন আইনে জার্মানিতে বিদেশি শ্রমিকদের কাজ খোঁজার ক্ষেত্রে বেশকিছু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে৷ তবে বিদেশি শ্রমিকদের চাকরি দেয়ার ক্ষেত্রে চাকরিদাতাদের আগে প্রমাণ করতে হবে যে, তাঁরা যে পদে লোক খুঁজছেন, কোনো জার্মান বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো নাগরিক সে কাজে যোগ্য না৷
নতুন আইনে পর্যাপ্ত যোগ্যতা থাকলে চাকরি খুঁজতেও জার্মানিতে আসতে পারবেন দক্ষ শ্রমিকরা৷ সেক্ষেত্রে তাঁদের নিজ কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার প্রমাণ, জার্মান ভাষায় দক্ষতা এবং চাকরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত জীবনধারণের সক্ষমতার প্রমাণও দেখাতে হবে৷
জার্মান কোনো প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক অনুমোদনসাপেক্ষে দক্ষ অভিবাসীদেরও জার্মানিতে আসার অনুমতি দেয়ার কথা বলা আছে প্রস্তাবিত আইনে৷
বেশ কিছু খাতে, বিশেষ করে, সেবাখাত, প্রযুক্তি, ইলেক্ট্রনিক্স এবং দক্ষ নির্মাণ শ্রমিকের ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে কর্মী সংকটে ভুগছে জার্মানি৷ জার্মানিতে তরুণদের সংখ্যা ক্রমশ কমছে, পাশাপাশি নিজ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে ইউরোপের অন্য দেশ থেকে কর্মী আসার সংখ্যাও কমছে৷
জার্মানির তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংগঠন বিটকম গত সপ্তাহে জানিয়েছে, এই খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শুন্য পদের সংখ্যা ২০১৮ সালে গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়ে ৮২ হাজারে দাঁড়িয়েছে৷
রাজনৈতিক সংকট
শরণার্থীবিরোধী দলগুলো তো রয়েছেই, ম্যার্কেলকে লড়াই করতে হবে নিজ ঘরেও৷ সিডিইউ'র অপেক্ষাকৃত রক্ষণশীল অংশের ভয়, এই আইনকে এরই মধ্যে জার্মানিতে অবস্থান করা শরণার্থীদের চাকরি দেয়ার কাজে লাগানো হতে পারে৷ ফলে অভিবাসন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিতর্ক এখনই থামছে না৷
বিশেষ করে বাভারিয়া রাজ্যে সিডিইউ'র সহযোগী দল খ্রিষ্টীয় সামাজিক ইউনিয়ন সিএসইউ এই আইন নিয়ে বেশ অখুশি৷ কারণ, এই আইনের খসড়ায় জীবন ধারণের জন্য পর্যাপ্ত চাকরি থাকলে এবং জার্মান সমাজে ‘ভালোভাবে অন্তর্ভূক্তি' বিবেচিত হলে আভিবাসনপ্রত্যাশীদের ৩০ মাস পর্যন্ত জার্মানিতে থাকার অনুমতি দেয়ার কথা বলা হয়েছে৷
বেন নাইট/এডিকে