1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নাৎসি ভাবনাকে উসকানো হচ্ছে?

ডেভিড ক্রসল্যান্ড/এপিবি১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জার্মানিতে গত এক দশকে নাৎসি অনেক এলাকা সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে৷ কিছু ভবন করা হয়েছে জাদুঘর বা প্রদর্শনীর স্থান৷ এ মাসে ফোগেলসাং স্কুলটিতে শুরু হয়েছে প্রদর্শনী, যেটি ছিল নাৎসিদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা স্কুল৷

https://p.dw.com/p/1K2q3
প্রতীকী ছবি
ছবি: DW/D. Crossland

ফোগেলসাং দুর্গে প্রতিটি কোণায় নাৎসি প্রতীক ছড়িয়ে আছে৷ আছে ভাস্কর্যও৷ ১৯৩০-এর দশকে ফোগেলসাং দুর্গে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল স্কুলটি৷ সেখানে এই চিত্রকলা প্রদর্শনী শুরু হয়েছে, যা দেখলে মনে হবে নাৎসীদের আভিজাত্য নতুন করে জেগে উঠেছে৷ এক দশক আগে আইফেল এলাকার এই স্থানটিতে ৬০ বছর ধরে সাধারণের প্রবেশ সীমিত ছিল৷ এতদিন এটা ন্যাটো সেনাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে৷

‘ফোগেলসাং' মানে পাখির গান৷ এই দুর্গটি সাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয় ২০০৬ সালে৷ বেলজিয়ামের সৈন্যরা নাৎসি প্রতীক ও ভাস্কর্যের কারণে এক ধরনের মানসিক চাপে ভুগছিল, আর তাই তারা জায়গাটি থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়৷ কেবল দেয়ালে নয়, মেঝেতেও স্বস্তিকা চিহ্নের ছড়াছড়ি৷ ইতিহাসবিদরা বলছেন, এখানে ঢুকলে মানুষ একটা বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাবেন৷ কট্টরপন্থা এবং জাতীয়তাবাদ একসাথে কীভাবে গড়ে উঠেছিল৷ ফোগেলসাং নিয়ে গবেষণা করছেন গাব্রিয়েলে হার্জহাইম৷ তিনি বললেন, ‘‘প্রদর্শনীতে এসে পর্যটকরা জানতে চান, এই প্রদর্শনী আসলে আমাকে কী শেখাচ্ছে?''

ফোগেলসাং দূর্গ
জার্মানির ফোগেলসাং দূর্গছবি: DW/D. Crossland

ফোগেলসাং যখন নাৎসি বিদ্যালয় ছিল

৪ সেপ্টেম্বর প্রদর্শনীটি শুরু হয়, যেটি আয়োজন করতে সময় লেগেছে সাড়ে চার বছর৷ আর এতে খরচ হয়েছে ৫ কোটি মার্কিন ডলার৷ হিটলার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৩৩ সালে এই কলেজটি প্রশাসনের কর্মী ও দলের শীর্ষ নেতাদের তৈরি করতে কাজ শুরু করে৷ এমন আরও দু'টি কলেজ ছিল৷ মূলত এখানকার শিক্ষার্থীদের দেয়া হতো শারীরিক ও রাজনৈতিক শিক্ষা৷ ২০০০ পুরুষ শিক্ষার্থী সেখানে প্রশিক্ষণ নিত৷ এখান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা নাৎসি দলে ভালো পদ পেত৷ চার বছরের কার্যক্রম শেষ করে তারা দলের যোগ্য হতো৷ তবে এর জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচ্য ছিল না৷ শিক্ষার্থীদের বয়স হতে হতো ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে৷ বিবাহিতদের অগ্রাধিকার দেয়া হতো৷ নাৎসি কর্মকর্তা রবার্ট লে এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা৷ ফোগেলসাং স্কুলের মূল কাজ ছিল সেখানকার শিক্ষার্থীদের অভিজাত ভাবতে শেখানো৷ তাদের বিশেষ পোশাক পরতে হতো, চার বছরের কার্যক্রম শেষে যখন তাদের পুরো জার্মানি সফরে পাঠানো হতো, তখন ভবিষ্যত রাজনৈতিক নেতা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হতো তাদের৷

প্রদর্শনীতে যা দেখানো হচ্ছে

প্রদর্শনীতে মূলত ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, কীভাবে নাৎসি আচরণ গণহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে৷ স্কুলের সেইসব প্রশিক্ষণার্থীর ছবি স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে, যাদের চেহারা নিষ্পাপ, যাদের পরনে বিশেষ ইউনিফর্ম, তারা কাজ করছে, খেলছে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এখানকার প্রশিক্ষণার্থীরা সাধারণ সৈন্য হিসেবে যুদ্ধে যোগ দেয়৷ এদের মধ্যে ৭০ ভাগই যুদ্ধে প্রাণ হারায়৷ অনেককে নৃশংস কিছু অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নে পাঠানো হয়েছিল৷

সেখানে তারা ইহুদিদের জোর করে কষ্টকর কাজে বাধ্য করত৷ চালাতো ভয়াবহ নির্যাতন৷ এদের মধ্যে একজন প্রশিক্ষণার্থী ফ্রান্স ম্যুরের লিথুয়ানিয়ায় কয়েক হাজার ইহুদি হত্যার জন্য দায়ী৷ তাকে বলা হতো ‘ফিলনিয়াসের কসাই'৷

দর্শণার্থীদের প্রতিক্রিয়া

২০০৬ সালে ফোগেলসাং যখন সাধারণের জন্য খুলে দেয়া হলো, তখন অনেক মানুষ এটাকে সংরক্ষণের সমালোচনা করেছিল৷ গ্লাসগো ক্যালেডোনিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্রমণ ও পর্যটন বিভাগের পরিচালক জন লেনন বলেছেন, যখন কয়েক দশক ধরে কোনো স্থান বন্ধ রাখা হয় এবং পরে তা খুলে দেয়া হয়, তখন এটির ইতিহাস বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়৷ ইহুদিরাও বলছেন, এ ধরনের স্থানগুলো খুলে দেয়ার চেয়ে যেসব স্থানে ইহুদিদের নির্যাতন করা হয়েছে, সেসব নির্যাতন কেন্দ্রগুলো খুঁজে বের করে সেগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার৷

নাৎসি এলাকাগুলো সংরক্ষণে উদ্যোগ

নাৎসি এলাকা হিসেবে ফোগেলসাং এর মতো এলাকাগুলোতে গত দুই দশক ধরে বিনিয়োগ বাড়ছে৷ প্রতি বছর সেখানে দর্শনার্থী বাড়ছে৷ জার্মানদের মধ্যে এক ধরনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তা হলো, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তারা এ ধরনের এলাকাগুলো সংরক্ষণ করতে চাচ্ছে৷ কেননা এর আগ পর্যন্ত কনসেন্ট্রেশন বা নির্যাতন ক্যাম্পগুলো সংরক্ষণের ব্যাপারে বেশি নজর ছিল প্রশাসনের৷ সে সময় জার্মানির লক্ষ্য ছিল নাৎসিদের কাহিনি ইতিহাস থেকে সমূলে উৎপাটন করা৷ যেন সেই ভয়াবহ অতীত সবাই ভুলে যায়৷

প্রদর্শনীর প্রধান আয়োজক আক্সেল ড্রেকোল জানালেন, নতুন প্রজন্মের অনেকের মনে আগ্রহ জন্মেছে – কেন তাদের পিতামহ বা প্রতিপিতামহ হিটলারকে সমর্থন করেছিল৷ প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই মারা গেছেন, যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁরাও আর বেশিদিন থাকবেন না৷ তাই জানা যাবে না আসলে কী ঘটেছিল৷ এই ছবিগুলো সেই গল্প বলবে৷

বাভেরিয়ার সরকার ওবারসালসব্যর্গ ডকুমেন্টেশন সেন্টারটিতে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছিল ১৯৯৯ সালে৷ তখন সারা বছরে ৩০ হাজার দর্শক হয়েছিল৷ অথচ গত বছর সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজারে৷ এ কারণে প্রশাসন প্রদর্শনীর স্থান দ্বিগুণ বড় করতে ১ কোটি ৭০ লাখ ইউরো খরচ করছে৷

নাৎসি নীপিড়ন যেন মানুষকে আকৃষ্ট করছে! বার্লিনে ২০১০ সালে টেরর মিউজিয়াম খুলে দেয়ার পর বর্তমানে সেটি শহরের মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে৷ প্রতি বছর ১০ লাখ পর্যটক সেটি দেখতে আসেন৷ ন্যুরেমব্যুর্গে নাৎসি পার্টির যেসব ভবনের সামনে হিটলার ৫ লাখ মানুষের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই স্থানটি সংরক্ষণের জন্য এখন ৭ কোটি ৫০ লাখ ইউরো খরচ করা হচ্ছে৷ শহরটির মেয়র জানালেন, এটা কোনো পুনর্গঠন বা মেরামত নয়, বরং দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ, যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম আসল ইতিহাস জানতে পারে৷

এটা কি ডার্ক টুরিজম?

নাৎসি এলাকাগুলো পুনরায় খুলে দেয়ার বিষয়টি সম্পর্কে প্রশাসন পুরোপুরি সচেতন বলে দাবি করা হয়েছৈ৷ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা জানেন যে এটা ডার্ক টুরিজমের দিকে যেতে পারে, অর্থাৎ নতুন প্রজন্ম এতে আকৃষ্ট হতে পারে৷ তা জেনেই তারা সব স্থান ও ছবিকে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করেছেন৷ তাই ফোগেলসাং-এ এসে কোনো নব্য নাৎসির সুখানুভূতি হবে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য