1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে বন্যা: ৬০০ মৃত শিশুর ভুয়া সংবাদ

২ আগস্ট ২০২১

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অন্যান্য অনলাইন মাধ্যমে বন্যাদুর্গত এলাকা থেকে ৬০০ শিশুর মরদেহ উদ্ধারের গুজব ছড়িয়ে পড়েছে৷ কিন্তু এই গুজব ছড়ালো কিভাবে? ডয়চে ভেলে চেষ্টা করেছে এই গুজবের উৎস খুঁজে বের করার৷

https://p.dw.com/p/3yQyb
জার্মানিতে বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছেছবি: Boris Roessler/dpa/picture alliance

প্রথমত এটা জেনে রাখা জরুরি যে, কোবলেনৎস পুলিশ মধ্য জুলাইয়ের বন্যায় ‘আর উপত্যকা' থেকে ৬০০ শিশুর মরদেহ উদ্ধারের খবরের কোনো ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছে৷

ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক লিখিত বক্তব্যে পুলিশের মুখপাত্র জানান, ‘‘যেসব এলাকায় বিশাল সংখ্যায় মরদেহ উদ্ধারের গুজব শোনা যাচ্ছে, সেসব জায়গায় এমন কোনো তথ্য আমরা পাইনি৷ অন্য কোনো এলাকাতেও এত বিপুল সংখ্যক মরদেহ পাওয়া যাওয়ার কথা আমাদের নজরে আসেনি৷ ‘চিন্তাভাবনা না করেই' অনলাইনে গুজব ছড়ানোর ব্যপারে জনগণকে সতর্কও করেছে পুলিশ৷ 

বন্যাপরবর্তী সংকট নিয়ে জার্মানিতে উদ্বেগ

পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া সবশেষ তথ্য অনুযায়ী রাইনলান্ড-পালাটিনেট রাজ্যে ১৩৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ৫৯ জন৷ পার্শ্ববর্তী নর্থরাইন-ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যে ৪৭ জন মারা গেছেন৷ বেলজিয়ামেও মারা গেছেন ৪১ জন৷

গুজব ছড়াচ্ছে কোত্থেকে?

ডয়চে ভেলের অনুসন্ধানে জানা গেছে, একটি সংবাদের কিছু অংশ বিকৃত হয়ে এই গুজব ছড়াতে ভূমিকা রেখেছে৷ জার্মান টিভি চ্যানেল এনটিভির সকালের সংবাদ আয়োজনে একটি প্রতিবেদন প্রচার করা হয়৷ সেই প্রতিবেদনের ১৫ সেকেন্ডের একটি ক্লিপ কেটে অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া হয়৷ সেটিই পরবর্তীতে ভাইরাল হয়ে পড়ে৷

এই ভিডিও ক্লিপে দেখা যায় এক জার্মান প্রতিবেদক ধ্বংসস্তুপের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন৷ ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘... এখনও লাইভ৷ একদিকে এটি একটি বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা৷ দূর থেকে ভেসে আসা শিশুদের মরদেহ নিজেদের বাড়িতে পেয়েছেন, এমন বাসিন্দাদের সঙ্গে আমরা কথা বলতে পেরেছি৷ অন্যদিকে প্রশ্ন হচ্ছে, বন্যা কি আরো হবে? তারা বলছেন...''৷ কথার মাঝখানেই ক্লিপটি শেষ হয়ে গেছে৷

বিস্তারিত তথ্যের জন্য এনটিভি এবং টিভি চ্যানেলটির মালিক আরটিএল ডয়েচলান্ড মিডিয়া গ্রুপের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ডয়চে ভেলে৷ তারা নিশ্চিত করেছেন যে ২২ জুলাই সকাল নয়টার সংবাদে প্রচারিত হওয়া প্রতিবেদনের একটি ক্ষুদ্র অংশ এটি৷ প্রতিবেদক উপস্থিত ছিলেন বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোর একটি আল্টেনআর এর আল্টেনবুর্গে৷

সংবাদ প্রচারের কিছুক্ষণের মধ্যেই ভিডিও ভাইরাল হতে শুরু করে৷ নীচের স্ক্রিনশটটিতে দেখা যাচ্ছে ২২ জুলাই সকাল ১০:৫৫ তে ফেসবুকে এই ভিডিও পোস্ট করা হয়৷ তবে এই পোস্টে ৬০০ মৃতদেহের কোনো উল্লেখ ছিল না৷

Verschwörungen um NTV Nachrichtenbeitrag
গুজব ছড়াতে এই ভিডিও ক্লিপটি ব্যবহার করা হয়েছেছবি: facebook.com

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব

শুরুর দিককার পোস্টগুলোর সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হওয়া চরম ডানপন্থি কিউআনোন আন্দোলনের সংযোগ স্পষ্ট৷ কিউআনোন সমর্থকরা মনে করেন, একটি বৈশ্বিক গ্রুপ শিশুদের মাটির নীচে বাংকার ও টানেলে আটকে রেখে তাদের ওপর গোপন ও প্রাণঘাতি পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছে৷ এই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব যারা প্রচার করেন, তারা মনে করছেন যে বন্যার কারণে মাটির নীচের পরীক্ষাগার থেকে শিশিদের মরদেহ ভেসে উঠেছে৷

এই ক্লিপের সঙ্গে ৬০০ সংখ্যাটি কোত্থেকে প্রচার হলো, তা শনাক্ত করা বেশ কঠিন৷ ডয়চে ভেলে পুরো প্রতিবেদনটি দেখেছে, কিন্তু সেখানে কোথাও এই সংখ্যার উল্লেখ করা হয়নি৷

এরপর দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ভিডিও ক্লিপটি ছড়িয়ে পড়ে৷ ২৬ জুলাই ইউটিউবে ইংরেজি শিরোনাম দিয়ে এটি আপলোড করা হয়৷ ভিডিওর বর্ণনা অংশে দাবি করা হয় জার্মান রিপোর্টার ৬০০ শিশুর মরদেহ ভেসে আসার কথা বলে হয়েছে৷ অনেক ভিউয়ার প্রতিবেদনকের কথার সঠিক অনুবাদ মন্তব্যে লিখলেও সেগুলো তেমন একটা গুরুত্ব দেয়া হয়নি৷ 

বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটির একই ধরনের বর্ণনা জাপানি, ডাচ এবং স্প্যানিশ ভাষাতেও খুঁজে পেয়েছে ডয়চে ভেলে৷ একটি টুইটে দাবি করা হয়, এই তথ্য জানানোর সময় নাকি রিপোর্টারকে থামিয়ে দেয়া হয়েছিল৷

কিন্তু শিশুদের মরদেহ সত্যিই পাওয়া গেছে, তাই না?

উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তুপে মরদেহ খুঁজে পেয়েছেন, এনটিভিও দুটি জায়গায় এ বিষয় উল্লেখ করেছে৷ এর একটি হচ্ছে এই প্রতিবেদনে, অন্যটি আল্টেনআর এর এক পুলিশ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকারে৷

এনটিভির প্রতিবেদক এই তথ্যের সূত্র হিসেবে কী ব্যবহার করেছে জানতে চায় ডয়চে ভেলে৷ উত্তরে এনটিভি জানায়, ‘‘কেউ কেউ আমাদের শিশুদের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছেন৷ একজন ছিলেন আল্টেনবুর্গের বাসিন্দা যিনি আমাদের প্রতিবেদকের কাছে বন্যার রাতের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন৷ তার বিস্তারিত তথ্য প্রতিবেদনেই বলা রয়েছে৷''

‘সংবেদনশীল' বিষয় হওয়ায় শিশুর মরদেহ নিয়ে কোনো তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছে কোবলেনৎস পুলিশ৷ তারা জানিয়েছে, ‘‘সম্মান প্রদর্শনের জায়গা থেকে আমরা মৃতদেহ ঠিক কোন জায়টগায় পাওয়া গেছে বা অন্য কোনো ব্যক্তিগত তথ্য দিতে পারছি না৷ কোনো তথ্য দিলে ছোট শহরগুলোতে মৃত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা অপেক্ষাকৃত সহজ হবে৷''

তথ্য বিশ্লেষণ করে সবশেষে এটা বলা যায় যে, জার্মানির বন্যাদুর্গত এলাকায় বিশাল সংখ্যায় শিশুদের মরদেহ উদ্ধারের তথ্য সঠিক নয়৷

সম্পাদকের নোট: ভুয়া সংবাদ আরো বেশি প্রচার হওয়া ঠেকাতে সোমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার হওয়া পোস্টগুলোর লিংক এই সংবাদে যুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডয়চে ভেলে৷ একই কারণে নাম প্রকাশ না করে পোস্টগুলোর স্ক্রিনশট যুক্ত করা হয়েছে৷

প্রতিবেদন: উটা শ্টাইনভের/এডিকে