জার্মানিতে বর্ণবাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩পার্সিয়ান বংশোদ্ভূত এবং যুক্তরাজ্য ও জার্মানিতে বেড়ে ওঠা মার্টিনা রিংক এবং নাইজেরীয় বাবা ও ফ্রেঞ্চ মায়ের সন্তান সিমোন উসিফো বইটির সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন৷
রিংক বলছেন, মতাদর্শ অনুসারে বর্ণবাদের চেয়ে প্রতিদিনকার যে বর্ণবাদ সেটি অনেকসময় বেশি ক্ষতিকর হতে পারে৷ ‘‘প্রতিদিনকার বর্ণবাদ যে কারো কাছ থেকে আসতে পারে৷ এমনকি আপনাকে খুব ভালোভাবে চেনেন, এমন কোনো ব্যক্তিও তার অজান্তে বর্ণবাদী আচরণ করে বসতে পারেন,'' বলে মনে করেন তিনি৷
উসিফো বলেন, বর্ণবাদী মানুষের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া এই বইয়ের উদ্দেশ্য নয়৷ বরং এর মাধ্যমে বর্ণবাদের ধরণ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে চান তারা৷
বইয়ে যাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়েছে তার মধ্যে কয়েকজন তারকাও আছেন৷ যেমন লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট ড্যুৎসেন টেকাল, টিভি উপস্থাপক ও গায়ক মোলা আডেবিসি ও সাবেক পেশাদার ফুটবলার হানস সারপাই৷
‘কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে আপনি দেখতে সুন্দর'
১৯৯০ এর দশকে খ্যাতির চূড়ায় ছিলেন টিভি উপস্থাপক ও গায়ক মোলা আডেবিসি৷ সেই সময় একজন গোয়েন্দা তার সঙ্গে দেখা করে বলেছিলেন, নব্য নাৎসিদের একটি ব্যান্ডের ক্যাসেটের কাভারে তাকে ফাঁসি দেয়া ব্যক্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে৷ এছাড়া একটি গানে তাকে নিয়ে অবমাননাকর কথা বলা হয়েছে৷
‘‘এর আগ পর্যন্ত বর্ণবাদ নিয়ে আমার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না,'' বলে বইয়ে লিখেছেন তিনি৷ এরপর থেকে তার জীবনযাপন পালটে গেছে বলে জানান তিনি৷ এখন যেখানেই যান নিরাপত্তা প্রহরী নিয়ে যেতে হয় তাকে৷ এছাড়া পেছনের দরজা দিয়ে স্টুডিওতে ঢোকেন বলেও জানান আডেবিসি৷ ‘‘বিমানে আমার সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলা হয়৷ প্রশংসা করার সময় বলা হয় ‘কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে আপনি দেখতে সুন্দর'!''
ছেলে হারানো মা
২০২০ সালে জার্মানির হানাও শহরে বর্ণবাদের শিকার হয়ে প্রাণ হারায় সার্পিল তেমিজ উনভারের ২২ বছর বয়সি ছেলে ফারহাত৷ স্কুলে সে শিক্ষকদের কাছ থেকে বর্ণবাদী সহিংসতার শিকার হয়েছিল বলে বইয়ে জানিয়েছেন উনভার৷ ‘‘হত্যাকারীকে কেন বন্দুক রাখতে দেয়া হয়েছিল,'' বইয়ে প্রশ্ন করেছেন তিনি৷ ‘‘অনেকগুলো ক্লু (সূত্র) ছিল যেগুলো নিয়ে পরে কাজ করা হয়নি৷ আমার চোখে, হত্যাকারীকে বন্দুকের লাইসেন্স দেয়ার মাধ্যমে আমাদের সন্তানদের হত্যা করতে বৈধভাবে অনুশীলন করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল৷''
২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর ছেলের জন্মদিনে ‘ফারহাত উনভার এডুকেশন ইনিশিয়েটিভ' প্রতিষ্ঠা করেন মা উনভার৷ এই সংস্থার মাধ্যমে স্কুল ও অফিসে বর্ণবাদ কতটা গেঁথে আছে তা দেখানোর চেষ্টা করা হয় বলে জানান তিনি৷
সরকারের প্রতিবেদন
জার্মানিতে বর্ণবাদ নিয়ে সম্প্রতি প্রথমবারের মতো একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জার্মান সরকার৷ এতে বলা হয়, বর্ণবাদ শুধু শারীরিক সহিংসতা ও মৌখক হামলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই৷ অভিবাসীদের মতো দেখতে মানুষেরা স্কুল, খেলার ক্লাব, বাসা খুঁজতে গিয়ে বা পুলিশের কাছ থেকে বৈষম্যের শিকার হন৷
ফিলিপ ইয়েডিকে/জেডএইচ