মুসলিম মেয়েদের জন্য ফিটনেস স্টুডিও
১২ জানুয়ারি ২০১৩জার্মানিতে বসবাসকারী রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের মেয়েদের কঠোর অনুশাসনের মধ্যে থাকতে হয়৷ মেনে চলতে হয় পর্দা প্রথা৷ পুরুষদের সামনে খেলাধুলা বা সাঁতার কাটাও নিষেধ৷ স্বাস্থ্যের জন্য কিছু করতে চাইলে বাড়িতে ব্যায়াম করা ছাড়া আর উপায় থাকে না৷ এক্ষেত্রে এক ব্যতিক্রম এনে দিয়েছে একটি ফিটনেস স্টুডিও৷ কোলন শহরের মুসলমান মেয়েদের জন্য পাঁচ বছর আগে এক খোলা হয়েছে এটি, যেখানে তাঁরা নিঃসংকোচে ধর্মীয় বিধি নিষেধ লঙ্ঘন না করে অংশ গ্রহণ করতে পারেন৷ কেননা এই ফিটনেস স্টুডিওটিতে পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ৷
মুসলিমনারীরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন
নুর্গ্যুল কোরুক-র কাছে ফিটেনেস স্টুডিওর ‘ট্রেডবেল্ট' বা যে বেল্টের ওপর দ্রুত হাঁটতে হয়, সেই যন্ত্রটি সবচেয়ে পছন্দ৷ এটি শুধু যে মজার তাই নয়, ট্রেনিং-এর সময় আশে পাশের মেয়েদের সঙ্গেও গল্পগুজব করা যায়৷
২৬ বছর বয়স্ক নুর্গুল সবসময় খেলাধুলা পছন্দ করতেন৷ স্কুলে স্পোর্টস-এর ক্লাসে প্রথম সারির একজন ছিলেন তিনি৷ মাথায় হিজাব থাকলেও তাঁর কোনো অসুবিধা হতো না৷ সহপাঠীরা তাঁকে এইভাবেই দেখতে অভ্যস্ত৷ কিন্তু স্কুলের পড়া শেষ হওয়ার পর খেলাধুলার পাটও চুকে গেছে৷ নুর্গ্যুল কোরুক বলেন, ‘‘আমি ঢেকে ঢুকে থাকি বলে সাধারণ স্টুডিওতে ফিটনেস ট্রেনিং চালানো সম্ভব হতো না৷ সেখানে পুরুষরাও অংশগ্রহণ করে, আবার প্রশিক্ষণকারীরাও পুরুষ৷ অগত্যা নিজে নিজেই দৌড়াদৌড়িটা চালিয়ে গিয়েছি৷ কিন্তু ফিটনেসের যন্ত্রপাতিতে ট্রেনিং চালানো সম্ভব হয়নি৷''
পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ
সৌভাগ্যবশত মুসলিম মেয়েদের জন্য কোলনের বিকেনডর্ফ-এ স্থাপিত ফিটনেস স্টুডিওর খবরটি তাঁর কানে এল৷ সেখানে পুরুষরা ঢুকতে পারেনা৷ তাই মেয়েরা হিজাব ছাড়াই এখানে ট্রেনিং-এ অংশ নিতে পারে৷ এই বিশেষ ধরনের ফিটনেস স্টুডিওটি স্থাপন করেছেন তুর্কি বংশোদ্ভূত এমিনে আয়ডেমির ২০০৭ সালে৷
এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘‘সন্তান জন্মের পর আমার ওজন খুব বেড়ে গিয়েছিল৷ তাই ওজন কমানোর জন্য কিছু করার কথা মনে হচ্ছিল৷ একটি সাধারণ ফিটনেস স্টুডিওতে আমি ট্রেনিং শুরু করি৷ কিন্তু সেখানে হিজাব খোলা যেত না৷ কেননা সেই স্টুডিওর মালিক একজন পুরুষ, যিনি প্রায়ই সেখানে আসতেন৷ জানালা পরিষ্কার করতে এবং ডাক নিয়েও আসতেন পুরুষরা৷''
মেয়েদের জন্য ফিটনেস স্টুডিও ‘হায়াত'
তাই ৪৩ বছর বয়স্ক এমিনে শুধুই মেয়েদের জন্য একটি ফিটনেস স্টুডিও গড়ে তোলেন, নাম দেন ‘হায়াত'৷ যার অর্থ জীবন৷ এর আগে একটি তরিতরকারির দোকান ছিল তাঁর, তাই আত্মনির্ভর হওয়ার ব্যাপারে কোনো ভয় ছিল না এমিনের৷ ১০০ জন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু হয় এই স্টুডিওর, আজ ৪০০ মেয়ে ট্রেনিং নিতে আসেন এখানে৷ এর মধ্যে ৫০ জন জার্মান৷
এমিনে আইডেমিনের ভাষায়, ‘‘আমার সদস্যরা আন্তর্জাতিক৷ তুর্কি, আরব, ইয়োগোস্লাভিয়ান, পোলিশ, জার্মান – সব দেশেরই আছেন৷ অমুসলিম মেয়েরা আশে পাশে বসবাস করেন বলে এবং আমাদের প্রবেশ মূল্য তুলনামূলকভাবে কম হওয়ার কারণে এখানে আসেন৷''
বেশ কিছু বিধি বিধান রয়েছে
সম্পূর্ণভাবে মেয়েদের জন্য একটি ফিটনেস স্টুডিও জার্মানিতে কোনো বিরল ব্যাপার নয়৷ তবে হায়াত-এ অন্যান্য কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে, যা এটিকে অনন্য করে তুলেছে৷ এমিনে জানান, ‘‘আমাদের ইসলাম ধর্মে, মেয়েদের পরস্পরের মধ্যেও আব্রু বজায় রেখে চলতে হয়৷ সবার জন্য গণস্নানাগার নয়, বরং এখানে রয়েছে আলাদা আলাদা শাওয়ার কেবিন৷ কেউ কাউকে দেখতে পায় না৷ স্টিম বাথ নিতেও একটি টাওয়েল জড়িয়ে যান মেয়েরা৷''
এমিনে আইডেমির-এর খদ্দেররা এসব ছাড়াও সাধারণ ফিটনেস স্টুডিওর মতোই সবরকম সুযোগ সুবিধা পান৷ যেমন এখানে রয়েছে কার্ডিওভাসকুলার ট্রেনিং, স্টিম বাথ, সোলারিয়াম ইত্যাদির ব্যবস্থা৷ ব্যক্তিগত চাহিদা অনুযায়ী ট্রেনিং প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়৷ বাচ্চাদের দেখাশোনার ব্যবস্থাও রয়েছে এই স্টুডিওতে৷ বেশিরভাগই মহিলাই কোনোদিন খেলাধুলা করেননি৷ যদিও মুসলমান মেয়েদেরই এক্ষেত্রে প্রয়োজনটা বেশি৷
এমিনের কথায়, ‘‘আমাদের খাবারে মাংসের প্রাচুর্য থাকে৷ তার ওপর কোনো শারীরিক পরিশ্রম যদি না হয়, তাহলে ওজন বাড়তে থাকে৷ বাচ্চাদের সাথে নাস্তা করতে হয়, বান্ধবীর সাথে দুপুরের খাবার, স্বামীর সঙ্গে রাতের খাবার খেতে হয়৷ সপ্তাহান্তে আসেন অতিথি, তাদের সঙ্গে না খাওয়াটা হয় অভদ্রতা৷ তাই এই সব মেয়ের জন্য এই রকম একটা স্টুডিওর দরকার ছিল৷''