জার্মানিতে রেকর্ড সংখ্যক বাচ্চা
৬ অক্টোবর ২০১৬ফেডারাল পরিসংখ্যান দপ্তরের বিবরণ অনুযায়ী, ২০১৫ সালে জার্মানিতে যত শিশু জন্ম নেয়, তাদের প্রত্যেক পাঁচটি শিশুর মধ্যে একজনের মা ছিলেন অ-জার্মান, অর্থাৎ অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্বধারী৷ ওদিকে ২০১৪ সালের তুলনায় জার্মানিতে বিদেশি মায়ের গর্ভজাত সন্তানদের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ – অবশ্যই গতবছর যে পরিমাণ উদ্বাস্তু ও অভিবাসী জার্মানিতে এসেছেন – বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপ থেকে – তাদের কারণে৷
২০১৫ সালে ৪,৮০০ সিরীয় মহিলা জার্মানিতে সন্তানের জন্ম দেন; ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ২,৩০০৷ পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে আসা মহিলাদের সঙ্গে তুলনা করলে কিন্তু সংখ্যাটা খুব বেশি নয়৷ যেমন ২০১৪ সালে জার্মানিতে রুমেনীয় মায়েদের ৫,৫৫১টি সন্তান জন্ম নেয়, যা ২০১৫ সালে ৪৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৮,১৫৪-য়৷ জার্মানিতে বুলগেরীয় মহিলারা ২০১৪ সালে জন্ম দেন ৩,১৩৫টি শিশুর, যা ২০১৫-য় ৩৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৪,২০২-তে৷
তবে ২০১৫ সালে যে সব বিদেশি মায়েরা জার্মানিতে শিশুর জন্ম দিয়েছেন, তাদের তালিকার শীর্ষে রয়েছেন তুর্কি মায়েরা, যারা ২০১৫ সালে ২১,৫৫৫টি শিশুর জন্ম দেন৷ তার পরেই ছিলেন পোলিশ মায়েরা: ২০১৫-য় তারা ১০,৮৩১টি শিশুর জন্ম দেন৷
বার্লিনের শারিটে হলো ইউরোপের বৃহত্তম ইউনিভার্সিটি হসপিটালগুলির মধ্যে একটি৷ এখানকার সূচিকা কক্ষে ডাক্তার, ধাই, শিশু কোলে মায়েরা, নবজাতকের কান্না৷ মায়েদের মধ্যে অনেকেই বিদেশিনী৷ তবে সেটা সমস্যারও সৃষ্টি করতে পারে – যেমন শারিটে হাসপাতালে অবস্টেট্রিক্স বা ধাত্রীবিদ্যা বিভাগের প্রধান ডক্টর ভোলফগাং হেনরিশ ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘স্বভাবতই আমরা সন্তানসম্ভবা উদ্বাস্তু মহিলাদের সংখ্যা বাড়তে দেখেছি৷ আমাদের প্রধান সমস্যা হলো ভাষা৷ আমাদের নিশ্চিত করতে হয় যে, দোভাষী ‘বুক' করা হয়েছে, নয়ত হাসপাতালেই কাজ চালানোর মতো কাউকে খুঁজে বার করতে হয়৷ এছাড়া আমরা এমন সব হেল্থ কেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়োগ করার চেষ্টা করি, যারা বিদেশি ভাষা জানে৷''
বছরে যেখানে পাঁচ হাজারের বেশি শিশুর জন্ম হচ্ছে, শারিটে কর্তৃপক্ষ বার্লিনে তাদের চারটি হাসপাতালের জন্য ইতিমধ্যেই অন্তত একজন করে সিরীয় চিকিৎসক নিয়োগ করেছেন৷ ‘‘এ-বছর দোভাষীদের খরচ বেশ কয়েক লাখ ইউরোয় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, কেননা বিদেশি মহিলারা স্রেফ হাসপাতালে পৌঁছে যান'', জানালেন ড. হেনরিশ৷ ‘‘আমি শুধু সিরীয় মহিলা নয়, ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান বা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে যে সব মহিলারা এসেছেন, তাদের কথাও বলছি৷ এ সব ক্ষেত্রে আমাদের স্বল্পসময়ের মধ্যে দোভাষীর ব্যবস্থা করতে হয়৷ তার জন্য অর্থসংস্থানও একটা অমীমাংসিত সমস্যা৷''
আরেকটি সমস্যা হলো, বিদেশি পেশেন্টদের চিকিৎসা ও পরিচর্যার খরচ কে দেবে৷ জার্মানিতে বসবাসকারী সব ইইউ নাগরিকদের জন্য স্বল্পমেয়াদি ইউরোপীয় স্বাস্থ্যবীমা কার্ড, নয়ত কোনো সরকারি বা বেসরকারি জার্মান স্বাস্থ্যবীমা সংস্থার সদস্যতা বাধ্যতামূলক৷ উদ্বাস্তুদের যদি জার্মানিতে আসার পর প্রথম ১৫ মাসে হঠাৎ হাসপাতালে যাবার দরকার পড়ে – অথবা সন্তানের জন্মের জন্য মায়েদের হাসপাতালে যেতে হয় – তবে তার খরচ জোগান স্থানীয় কর্তৃপক্ষ৷ সেই ১৫ মাসের মধ্যে যদি তাদের রাজনৈতিক আশ্রয়প্রাপ্তির আবেদন সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে উদ্বাস্তুরা জার্মান নাগরিকদের মতোই বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্যসেবা পাবেন৷ তবে মেডিক্যাল এমার্জেন্সির ক্ষেত্রে কোনো পেশেন্টকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না৷
এ বিষয়ে আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচের ঘরে৷
লাভিনিয়া পিতু/এসি
দেবারতি গুহ