‘জার্মানির অর্থায়নে পলিসি হচ্ছে, কাঠামো দাঁড়াচ্ছে’
৩১ অক্টোবর ২০১৭ডয়চে ভেলে: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় জার্মানি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে কতটা সহায়তা দিয়েছে?
মো. শামসুদ্দোহা: কত সহায়তা দিয়েছে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে না৷ তবে এটা বলা যায়, জলবায়ু নিয়ে যখন থেকে রিসার্চ শুরু হয়েছে, তখন থেকেই জার্মানি বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়ে আসছে৷ এর মধ্যে একটা প্রকল্প ছিল বাংলাদেশ কিভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দরকষাকষি করতে পারে, সেজন্য সমতা বিধান করতে জার্মানি ফান্ড দিয়েছে৷ এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই দরকষাকষিতে আমরা সফল হয়েছি৷ সমতা বৃদ্ধি এবং প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে তারা আমাদের বেশ কিছু টাকা দিয়েছে৷ রিনিউয়েবল এনার্জি, সর্বশেষ কিন কোব স্টোর, যেটার ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ- এই সমস্ত কাজে দীর্ঘদিন ধরে জিআইজেড বা জার্মান সরকার আমাদের অর্থ দিয়ে আসছে৷ তখন এই প্রকল্পগুলো সরাসরি জয়বায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না৷ তবে এখন বলা হচ্ছে, এই প্রকল্পগুলো কোনো-না-কোনোভাবে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণে ভুমিকা রেখেছে৷ তার মানে, এই প্রকল্পগুলো জায়বায়ু প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম৷
জার্মানির সহায়তায় কী কী প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে বা হচ্ছে?
একটা উদাহরণ এই মুহুর্তে আমি দিতে পারি, যেটা সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হলেও বিষয়টা অ্যাড্রেস করে৷ একটা হলো রিনিউয়েবল এনার্জি প্রকল্প আরেকটা হলো উন্নত চুলা, যেটা বন্ধু চুলা হিসেবে পরিচিত৷ এই বন্ধু চুলাকে সারাদেশে ছড়িয়েছে কিন্তু জিআইজেড৷
বন্ধু চুলা তো সারাদেশে এখন বেশ জনপ্রিয়...
এই জনপ্রিয়তার পেছনে জিআইজেড কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে৷ তারা এটাকে ‘লো কস্ট' টেকনোলজি হিসেবে সারাদেশে জনগনের কাছে নিয়ে যেতে পেরেছে৷ তারা একটা ফোরাম করেছে, সেটার মাধ্যমে তারা সারাদেশে বাড়ি পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেরেছে৷ এর ফলে তারা এক ধরনের এন্টারপ্রনারশিপ গ্রো করেছে৷ এটা আসলে একটা ইনস্টিটিউশন পর্যায়ে গেছে৷ পাশাপাশি এটা কার্বন ডাই অক্সাইড রিডাকশনেও ভুমিকা পালন করছে৷ এটা কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত৷ জিআইজেড একদিকে পলিসি ডেভেলপমেন্টে কাজ করছে, অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরিতে সহযোগিতা করছে৷ এরপর বাস্তবায়নেও সহযোগিতা করছে৷
সোলার প্যানেল তো এখন গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছেছে, এটা নিয়ে কিছু বলতে পারবেন?
এই প্রজেক্টে জিআইজেড ইডকলের মাধ্যমে ফান্ডিং দিয়েছে৷ ছোট ছোট এনজিও'র মাধ্যমে ইডকল এই প্রোজেক্ট বাস্তবায়ন করেছে৷ এছাড়া সরকারি পর্যায়েও তারা কিছু অর্থ দিয়েছে৷ সেটা দিয়ে মিনি গ্রিডগুলো তৈরি করা হয়েছে৷ একদিকে ইডকলকে অর্থ দিয়ে বাড়ি বাড়ি পৌঁছেছে৷ এটা ছাড়াও সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ করেছে৷
জার্মান ফান্ডিংয়ে যেসব প্রকল্প চলছে, সেগুলোর মধ্যে কোন এলাকায় বেশি প্রকল্প আছে?
একটা ডাইভারসিটি ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প, সেটা সুন্দরবন এলাকায় চলছে৷ জিআইজেড ভ্যালু চেঞ্জ নামে একটি প্রকল্প নিয়ে হাওড় অঞ্চলে কাজ করছে৷ রুরাল এলাকায় তাদের বেশি প্রকল্প আছে৷ সম্প্রতি জার্মানির গ্রিণ প্ল্যানেট ফান্ড থেকে সরকার একটা প্রকল্পের টাকা পেয়েছে৷ এটা ৮০ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্প৷ এর মধ্যে জার্মান ডেভেলপমেন্ট ফান্ড থেকে দিয়েছে ১৫ মিলিয়ন ডলার৷ এছাড়া সরকার দেবে ২৫ মিলিয়ন ডলার এবং জাতিসংঘ থেকে পাওয়া যাবে ৪০ মিলিয়ন ডলার৷ সম্প্রতি জার্মান সরকার বাংলাদেশে অর্থ সহায়তা বাড়িয়েছে৷
জার্মান সরকারের ফান্ডিংয়ে হচ্ছে এমন কোনো প্রকল্পে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ আছে?
এটা এইভাবে বলা যাবে না৷ এখানে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য, জার্মান সরকার এখানে সরাসরি কোনো কাজ করে না৷ তারা জিআইজেডের মাধ্যমে সরকারের কাছে অর্থ দেয়৷ সরকার সেই অর্থ নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ করায়৷
জার্মানির দেয়া টাকা শুধু কি সরকারিভাবে আসে, নাকি এনজিওগুলোর মাধ্যমে গ্রাম পর্যায়ে কাজ হচ্ছে?
এনজিও'র মাধ্যমে আসার সম্ভাবনা খুবই কম৷ কারণ, এই টাকাগুলো আসে জিআইজেডের মাধ্যমে৷ তারা সরকারের সঙ্গে কাজ করে৷ সরকারের সঙ্গে তাদের পার্টনারশিপ হয়৷ তারা কোনো এনজিওকে ফান্ড দেয় না৷ দুই সরকারের সঙ্গে যখন কোনো চুক্তি হয়, তখন কোনো কোনো প্রকল্পে এনজিওরা কাজ করার সুযোগ পায়৷ কিন্তু সরাসরি কোনো টাকা এনজিওদের কাছে যায় না৷ জার্মানির কিছু এনজিও আছে সরকার ওখানের জনগনের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে এবং সরকারের কাছ থেকেও কিছু অনুদান পায়৷ তারা বাংলাদেশের কিছু এনজিওকে সরাসরি অর্থ সহায়তা দেয়৷
জার্মানির দেয়া এসব ফান্ডে সরাসরি কত মানুষ উপকৃত হয়েছে এমন কোনো তথ্য আছে?
প্রজেক্ট ধরে তাদের কাজে উপকৃত হওয়া মানুষের একটা তালিকা থাকে৷ কিন্তু সব মিলিয়ে কত মানুষ উপকৃত হয়েছে, তার তালিকা করা কঠিন৷ আবার দেখেন, পলিসি তৈরিতে তারা যখন ফান্ড দেয়, তখন কিন্তু বড় স্কেলে আমরা সবাই উপকৃত হচ্ছি৷ ওরা কিন্তু আমাদের পলিসি তৈরিতে অনেক বেশি ফান্ড দিচ্ছে৷ দেখেন, আমরা যখন অন্য দেশের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করব বা গ্রিন প্ল্যানেট ফান্ড থেকে টাকা আনার চেষ্টা করব, তখন আমাদের পলিসিটা গুরুত্বপূর্ণ৷ আর এই পলিসিটা তৈরিতে মূল সহযোগিতা করছে জার্মানি৷ এখন তাদের ফান্ডিংয়ে কাজ হচ্ছে ভার্নারেবিলিট অ্যাসেসমেন্ট৷ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ আমাদের কাছে এটা নিয়ে কোনো ডাটাবেজ নেই৷ এখন সেই কাজটা হচ্ছে৷ এটা হলে আমাদের জলবায়ু ফান্ডে বিতরণটা কিন্তু ঠিক থাকবে৷ আমাদের যদি ডাটাবেজটা থাকে, তাহলে আমরা কম গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় টাকা গেলে সেটা বুঝতে পারব৷ কোন এলাকা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, সেটাও জানতে পারব৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷