ডাভস
২৭ জানুয়ারি ২০১২জার্মানির ভূমিকা
৪২তম ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম উদ্বোধন করলেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, ইউরো এলাকার সংকটের ক্ষেত্রে যাঁর কেন্দ্রীয় ভূমিকা নিয়ে কারো মনে কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু তাঁকে ঘিরে বিপুল যে প্রত্যাশা, তা পূরণ করা যে সহজ নয়, সেই বার্তা তিনি পৌঁছে দিলেন বিশ্বের প্রথম সারির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যক্তিত্বের সামনে৷ বললেন, জার্মানির উপর এত বেশি চাপ দিলে তার ফল কারো জন্য ভালো হবে না৷ তবে জার্মানি যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, তা পুরোপুরি পালন করা হবে৷ কথার নড়চড় হবে না৷ নিজের সাধ্যের বাইরে গিয়ে অপরকে সাহায্য করতে গেলে জার্মানি নিজেই সংকটের মুখে পড়তে পারে, এমন সাবধানবাণী শোনাচ্ছেন ম্যার্কেল৷
আপাতত সবার নজর বার্লিনের দিকে৷ ইউরোপে আর্থিক সংকট মোকাবিলা করার জন্য যে ইএসএম নামের স্থায়ী তহবিল গঠন করা হচ্ছে, তাতে ৫০,০০০ কোটি ইউরো জমা পড়ার কথা৷ বলা বাহুল্য, এর সিংহভাগই বহন করবে জার্মানি৷ কিন্তু এই অঙ্ক বাজারকে শান্ত করতে যথেষ্ট নয় বলে অনেকে মনে করছে৷ এমনকি এই অঙ্ক বাড়িয়ে দ্বিগুণ, অর্থাৎ ১ লক্ষ কোটি ইউরো করার দাবি উঠছে৷
কাঠামোগত সংস্কার চায় জার্মানি
জার্মানি তহবিলে আরও অর্থ দিতে প্রস্তুত নয়, কারণ সেদেশের আশঙ্কা, সংকট মোকাবিলার এত সহজ সমাধানের ব্যবস্থা করলে ইউরোপের দেশগুলি তাদের বাজেট ঘাটতি কমানোর অঙ্গীকার আন্তরিকভাবে পালন করবে না৷ তারা ইএসএম তহবিলের উপর বেশি নির্ভর করতে পারে৷ অন্য যে দাবির মুখেও জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল অনড় রয়েছেন, তা হলো ইউরো এলাকার দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সংহতি বাড়ানো৷ ম্যার্কেল মনে করেন, প্রত্যেক দেশকে একাই তার আর্থিক পরিস্থিতি সামলাতে হবে৷ কারো ভুল সিদ্ধান্ত বা নীতির ফল বাকিরা নিজেদের কাঁধে তুলে নেবে, এমনটা মোটেই কাম্য হতে পারে না৷ সম্মেলনে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এমন মনোভাব কতকাল বিশ্বাসযোগ্য থাকবে?''
ম্যার্কেল তাঁর ভাষণে স্বীকার করেন, যে এপর্যন্ত নেওয়া যাবতীয় সিদ্ধান্ত ইউরো এলাকার ঋণ সংকট মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট নয়৷ বিচ্ছিন্ন কিছু পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়, ইউরোপের রাজনৈতিক কাঠামোর সংস্কারের মাধ্যমেই সেটা করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন৷ রাষ্ট্রীয় স্তর থেকে আরও ক্ষমতা ইউরোপীয় স্তরে হস্তান্তর করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন ম্যার্কেল৷
বিভিন্ন বিষয়ে মৌলিক প্রশ্ন
ডাভোস'এ এবারের সম্মেলনের উপর একাধিক সাম্প্রতিক ঘটনার প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ ইউরো এলাকার সংকট ছাড়াও গোটা বিশ্বে সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি নিয়ে দুশ্চিন্তা দূর হচ্ছে না৷ খাদ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে চলেছে৷ আরব জগতে চলছে পরিবর্তনের প্রক্রিয়া৷ এই অবস্থায় সারা বিশ্বের মানুষ লক্ষ্য করছে, যে রাজনৈতিক নেতারা এখনো কোনো জোরালো সমাধানসূত্র পেশ করতে পারছেন না৷ বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির লাগামহীন আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার সদিচ্ছা বা ক্ষমতারও কোনো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না৷ এপ্রসঙ্গে ম্যার্কেল তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে আর্থিক লেনদেনের উপর বিশ্বব্যাপী কর চাপানোর প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করেন৷ ২০০৮ সাল থেকেই এবিষয়ে আলোচনা চলছে, কিন্তু ঐকমত্য অর্জন করা সম্ভব হয় নি৷ ম্যার্কেল বলেন, এটা করতে পারলে তা সব নাগরিকের কাছে শক্তিশালী রাজনৈতিক সংকেত হিসেবে পৌঁছে যাবে৷
বিংশ শতাব্দীর ধণতন্ত্র একবিংশ শতাব্দীতে অচল বলে মনে করছেন সম্মেলনের অনেক বক্তা৷ গোটা বিশ্বে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়ে চলেছে, ধনী-দরিদ্রের ফারাক বাড়ছে৷ বেকারত্ব মারাত্মক আকার ধারণ করছে৷ নৈতিকতার বিষয়টিকে গ্রাহ্যই করা হচ্ছে না৷ কোণঠাসা ব্যাংকিং জগত অবশ্য দাবি করছে, অতীতের ভুল শোধরাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক