1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মান বিনিয়োগ চান মমতা

শীর্ষ বন্দ্যাপাধ্যায়, কলকাতা৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

পশ্চিমবঙ্গে জার্মান বিনিয়োগ আনতে উদ্যোগী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, জার্মান বিনিয়োগ কেন?‌ কেনই বা পশ্চিমবঙ্গে?‌ উত্তর খুঁজেছেন শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়৷

https://p.dw.com/p/1Jyob
Deutschland München Besuch von Regierungschef Mamata Banerjee aus Westbengalen
ছবি: DW/D. Guha

সিঙ্গুরে কৃষিজমি রক্ষা আন্দোলনের জেরে টাটা শিল্পগোষ্ঠীর ন্যানো গাড়ির কারখানা পশ্চিমবঙ্গ থেকে সরে গেছে গুজরাটে৷ এই ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের যে একটা শিল্পবিরোধী ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে, সেটা অস্বীকার করার কোনো জায়গা নেই৷ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা ব্যানার্জিকে গত পাঁচ বছর ধরে সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করতে হয়েছে৷ কিন্তু তাতে কাজের কাজ যে বিশেষ হয়নি, পশ্চিমবঙ্গের বেহাল শিল্প পরিস্থিতি দেখলেই সেটা বোঝা যায়৷ গত পাঁচ বছরে কার্যত কোনো বড় শিল্প, কোনো বড় বিনিয়োগ এ রাজ্যে হয়নি৷ সেই জায়গা থেকে একেবারে গাড়ি নির্মাতাদের মধ্যে সর্বোত্তম যারা, সেই বিএমডাব্লিউ-র গাড়ি কারখানা পশ্চিমবঙ্গে আনার চেষ্টা করাটা কিছুটা বামন হয়ে চাঁদে হাত দেওয়ার মতো, বলছে নিন্দুকরা৷ এই যেমন রাজনৈতিক বিরোধীরা বলতে শুরু করেছেন, আসলে সরকারি খরচে বিদেশে বেড়াতে গেছেন রাজনীতিক আর শিল্পপতিরা! না, সমালোচনা দূরে থাক৷ বরং তাকানো যাক ভবিষ্যতের দিকে৷

শেষ পর্যন্ত বিএমডাব্লিউ পশ্চিমবঙ্গে আসবে কিনা, সেটাও পরের প্রশ্ন৷ তার আগে বরং দেখা যাক, ভারতে বিএমডাব্লিউ-র অবস্থান কী৷ ভারতে কোম্পানিটির সদর দপ্তর দিল্লির অদূরে গুরগাঁওয়ে এবং নিজস্ব কারখানা চেন্নাই শহরতলীতে৷ এছাড়া সংস্থার নিজস্ব শোরুম রয়েছে সারা দেশ জুড়েই৷ তার মধ্যে সংখ্যায়, অর্থাৎ গুরুত্বে বেশি উত্তর, দক্ষিণ এবং পশ্চিম ভারত৷ এ ব্যাপারে বিএমডাব্লিউ-র মনোভাবের আঁচ পাওয়া যাবে একটি সিদ্ধান্ত থেকেই৷ ১০ বছর আগে বিশ্ববিখ্যাত এই জার্মান গাড়ি নির্মাতা সংস্থা প্রথম যখন ভারতে আসে, রাজধানী দিল্লি ছাড়া তাদের নজরে ছিল মুম্বই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু এবং হায়দরাবাদ৷

তার মানে তাদের বাণিজ্য মানচিত্রের বাইরে ছিল কলকাতাসহ গোটা উত্তর-পূর্ব ভারত৷ দশ বছরে যদিও কলকাতায় এবং ওড়িশা-ঝাড়খণ্ডে নিজেদের গাড়ি বিক্রির নিজস্ব কেন্দ্র তারা খুলেছে, কিন্তু এখনও গুরুত্বহীন উত্তর-পূর্বাঞ্চল৷

ঠিক এই জায়গা থেকেই বিএমডাব্লিউ-র সামনে প্রস্তাব রেখেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, যে শুধু উত্তর-পূর্ব ভারত নয়, গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজার ধরার কাজটা কোম্পানিটির পক্ষে নাকি অনেক সহজ হয়ে যাবে, যদি পশ্চিমবঙ্গে তাদের কারখানা তৈরি হয়৷ তার ওপর মিউনিখে বিএমডাব্লিউ-র কর্তারা যতটা সময় দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে, একটা সম্ভাবনা হয়ত সত্যিই তৈরি হয়েছে৷ অর্থাৎ কিনা সত্যিই হয়ত ন্যানোর বদলে বিএমডাব্লিউ হাতে পাবে পশ্চিমবঙ্গ৷ আর শেষ পর্যন্ত সেটা যদি হয়, সরকারের স্থায়িত্ব, দক্ষ মানবসম্পদ এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতার সাহায্যে শিল্পায়ন প্রচেষ্টার সাফল্যে এক ধাক্কায় অনেক দূর এগিয়ে যাবেন মমতা৷

অবশ্য শুধু গাড়ি কারখানাই নয়, জার্মানির মাঝারি ও ছোট শিল্পকেও সাদরে ডাকছে পশ্চিমবঙ্গ৷ এবং যেহেতু এই রাজ্যে যে কোনো শিল্পস্থাপনের ক্ষেত্রেই অবধারিত উঠে আসবে সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনের প্রসঙ্গ, মমতা নিজের সঙ্গে নিয়ে গেছেন এমন এক ঝাঁক শিল্পপতিকে, যাঁরা পশ্চিমবঙ্গে নিরুপদ্রবে ব্যবসা করে চলেছেন৷ মিউনিখের বণিকসভায় এই শিল্পপতিদের দিয়ে মমতা বলিয়েছেন, যে লগ্নির জন্য পশ্চিমবঙ্গ কতটা নিরাপদ ও শিল্পবান্ধব৷ হ্যাঁ, মমতার সরকার কতদূর সহায়ক ভূমিকা নিতে পারে নতুন শিল্পস্থাপনের ক্ষেত্রে, সঞ্জীব গোয়েঙ্কা অথবা পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের মতো বাঘা বাঘা শিল্পপতি এই সার্টিফিকেটই দিয়েছেন৷

এর মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য বোধহয় টাটা শিল্পগোষ্ঠীর এক কর্তার উপস্থিতি, যিনি বলেছেন, তাঁরাও এই নতুন পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগে আগ্রহী৷

পাশাপাশি জার্মানি-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলার সঙ্গে জার্মানির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কথা বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এমনকি দুই জাতির অসম্ভব ফুটবলপ্রীতির কথাও বাদ দেননি তিনি৷ সব মিলিয়ে পরিষ্কার যে, শিল্পায়নের ময়দানে মমতা এবার গোল করে দেখাতে চান৷ সেক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ তাঁর কাম্য, এবং সেখানে তিনি জার্মানিকেই স্বাভাবিক বাণিজ্য সহযোগী হিসেবে দেখতে চান৷ এ প্রসঙ্গে নেতাজী সুভাষ বসুর জার্মানিতে গিয়ে সাহায্য চাওয়ার ঐতিহাসিক প্রসঙ্গেরও উল্লেখ করেছেন মমতা৷

মিউনিখ ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর শিল্প প্রতিনিধিদল গেছেন ফ্রাংকফুর্ট, ড্যুসেলডর্ফে বিনিয়োগের খোঁজে৷ জার্মানির সঙ্গে বাণিজ্যিক গাঁটছড়া বাঁধতে মমতার এই যে আকুলতা, তার একটা কারণ সম্ভবত জার্মানদের স্বভাবগত সৌজন্যবোধ এবং সততা৷ মমতা ব্যানার্জি ২০১১ সালে প্রথম যেবার ক্ষমতায় এলেন, যে বিদেশি বাণিজ্য প্রতিনিধিদল তাঁর সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ে দেখা করতে যায়, সেটাও ছিল জার্মানির৷ সেসময় সদ্য সিঙ্গুর আন্দোলন সেরে আসা তৃণমূল নেত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, রাজ্যে শিল্পের অনুকূল পরিস্থিতি যাতে তৈরি হয়, তার ব্যবস্থা তিনি করবেন সত্বরই৷ তিনি যে কথা রেখেছেন, সেটাই সম্ভবত জার্মানিতে গিয়ে মনে করিয়ে দিলেন মমতা ব্যানার্জি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য