জার্মানির হাসপাতালে সংকট
২২ নভেম্বর ২০১৩স্বাস্থ্য বিমা ভিত্তিক কাঠামো
জার্মানির চিকিৎসা পরিষেবা ব্যবস্থা বাংলাদেশ-ভারতের মতো বিচ্ছিন্ন উদ্যোগের সমষ্টি নয়৷ প্রায় সব মানুষেরই স্বাস্থ্য বিমা রয়েছে৷ তাই বিমা কোম্পানি, রোগী, ডাক্তার, হাসপাতাল ও সরকার সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই একই সূত্রে বাঁধা রয়েছে৷ চিকিৎসার মূল খরচ সরাসরি রোগীকে দিতে হয় না, বাকিরাই নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নেয়৷ মাসে-মাসে স্বাস্থ্য বিমার মাশুল দিয়েই মানুষ মোটামুটি নিশ্চিন্ত থাকতে পারে৷
এত বিশাল ও জটিল অবকাঠামো সামলানো মোটেই সহজ কাজ নয়৷ প্রয়োজন ম্যানেজমেন্টের দক্ষতা ও পরিচালনায় পারদর্শিতার মতো গুণ৷ কিন্তু অন্যদিকে নিয়ম-কানুনের বেড়াজালে ক্ষমতা থাকলেও সেই কাজ করা প্রায়ই কঠিন হয়ে পড়ে৷
লোকসানের ধাক্কা
এই অবস্থায় দেখা যাচ্ছে, যে বেশ কয়েক বছর ধরে প্রায় জার্মানির দুই হাজারেরও বেশি হাসপাতালের নেটওয়ার্কের আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটে চলেছে৷ সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুযায়ী অর্ধেকেরও বেশি হাসপাতাল লোকসানে চলছে৷ ২০১১ সালে সংখ্যাটা ছিল এক-তৃতীয়াংশের মতো৷ এমন নাটকীয় লোকসানের ফলে দুশ্চিন্তা বাড়ছে৷ বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত ছোট হাসপাতালগুলির অবস্থা করুণ৷ এমনকি যে সব হাসপাতাল এই মুহূর্তে মুনাফা করছে, তাদের ভবিষ্যতও অনিশ্চিত৷
এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে এপ্রিল মাসে জার্মান সরকার হাসপাতালগুলির জন্য এক আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে৷ এর আওতায় চলতি ও আগামী বছরে তারা ১১০ কোটি ইউরো পাচ্ছে৷ তবে লোকসানের মাত্রার তুলনায় এই বাড়তি অর্থ যথেষ্ট নয় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷
কারণ অনুসন্ধান
আর্থিক লোকসানের প্রধান কারণগুলি খুঁজতেও উদ্যোগ চলছে৷ হাসপাতাল কর্মীদের বেতন একটা বড় সমস্যা৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও কর্মীদের প্রতিনিধিরা আলোচনার মাধ্যমে বেতন-বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নেয়, জটিল এক প্রক্রিয়ার কারণে বাস্তবে তার থেকে বেশি অর্থ তাদের দিতে হয়৷ হাসপাতাল ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রযুক্তিও একটা বড় সমস্যা৷ বহুকাল ধরে রাজ্য সরকারগুলি এ ক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে চলায় ভবনগুলির বিদ্যুতের চাহিদা ও তাতে জ্বালানির ব্যবহার মাত্রাতিরিক্ত বেশি৷ যন্ত্রপাতিও পুরানো হয়ে গেছে৷ ফলে আধুনিকীকরণের জন্য বাধ্য হয়ে হাসপাতালগুলিকেই অর্থ ঢালতে হয়৷ স্বাস্থ্য বিমা সংস্থাগুলি হাসপাতালগুলির পরিচালনার ক্ষেত্রেও ত্রুটি দেখতে পাচ্ছে৷ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ক্ষমতা রাখায় অনেক বেড খালি পড়ে থাকে৷ ফলে সামগ্রিক ব্যয়ও বেড়ে যায়৷ তা ছাড়া যথেষ্ট কারণ ছাড়াই অপারেশন করার মতো পদক্ষেপ নেয়ার ফলেও সমস্যা হয়৷
গোটা দেশের সব অঞ্চলে হাসপাতাল চালু রাখার নীতিও এই সমস্যার আরেকটি কারণ৷ গত প্রায় এক দশকে কিছু হাসপাতাল অবশ্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে লোকসান ছাড়া হাসপাতাল চালানো কঠিন৷ ফলে ভবিষ্যতে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলের বাইরে হাসপাতালের সংখ্যা আরও কমে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ সেখানকার রোগীদের তখন আরও দূরে যেতে হবে৷