জাহাজ ভাঙায় জার্মানির লজ্জা
১৭ এপ্রিল ২০১৭ব্রাসেলস ভিত্তিক শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্ম পরিবেশ, মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করা ১৯টি সংগঠনের একটি জোট৷ জাহাজা ভাঙা ইয়ার্ডে শ্রমিকদের নিরাপদ কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং পরিবেশসম্মত উপায়ে জাহাজ ভাঙার কাজ নিশ্চিত করতে কাজ করে এই প্ল্যাটফর্ম৷
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ২০১৬ সালের জাহাজ ভাঙা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করে শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্ম৷ এতে বলা হয়, জাহাজ ভাঙার নীতি অনুসরণে সবচেয়ে খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে জার্মানি৷ গত বছর দেশটির মোট ৯৯টি জাহাজ ভাঙা হয়৷ এর মধ্যে ৯৭টিই ভাঙা হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায়, অর্থাৎ বাংলাদেশে, ভারত ও পাকিস্তানে৷ আর এই ৯৭টি জাহাজের ৪০ শতাংশ ভেঙেছেন বাংলাদেশের শ্রমিকরা৷ বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙার পরিবেশকে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বাজে মনে করা হয়, বলে জানিয়েছে শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্ম৷
গত বছর জার্মানির জাহাজ নির্মাতাদের মধ্যে হানসা মারে-র ১২টি জাহাজ ভাঙার জন্য বিক্রি করা হয়৷ এছাড়া আলফা শিপ এফ., ল্যাইসৎস ও পেটার ড্যোলের সাতটি এবং ড. পেটার্স, ক্যোনিশ অ্যান্ড সি, নর্ডডয়চে ফ্যারম্যোগেন ও রিকমার্সের ছয়টি জাহাজ বাংলাদেশে ভাঙার জন্য বিক্রি করা হয়৷ খাবারের বিখ্যাত ব্র্যান্ড ড. ওয়েটকার’ও তাদের একটি পুরনো কনটেনার শিপ বাংলাদেশে পাঠিয়েছে৷
জার্মান জাহাজ নির্মাতাদের এমন পদক্ষেপের সমালোচনা করে জার্মান সরকারের কাছে উদ্বেগ জানিয়েছেন বিষাক্ততা ও মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা৷
শ্রমিকের মৃত্যু
জার্মানির রেনাটে এন. কোম্পানির একটি জাহাজ ভাঙার সময় চট্টগ্রামের সেইকো ইয়ার্ডে তিনজন শ্রমিক প্রাণ হারান৷ আহত হন আরও তিনজন৷ নভেম্বরে জার্মানির আরও একটি জাহাজ ভাঙার সময় একজন নিহত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছে শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্ম৷
সংস্থার নির্বাহী পরিচালক প্যাট্রিসিয়া হাইডেগার বলেন, জার্মান জাহাজ নির্মাতাদের জাহাজ ভাঙতে গিয়ে শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়৷
শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্ম জানিয়েছে, ২০১৬ সালে জাহাজ ভাঙতে গিয়ে বাংলাদেশে ২২ জন শ্রমিকের প্রাণ যাওয়ার খবর তারা পেয়েছে৷ এছাড়া ২৯ জন শ্রমিক মারাত্মক আহত হয়েছে বলেও জানায় সংস্থাটি৷
এদিকে, ২০১৬ সালে গ্রিসের ১০৪টি জাহাজ ভাঙতে দক্ষিণ এশিয়ায় পাঠানো হয়েছিল৷ সংখ্যার হিসেবে এটি সর্বোচ্চ৷
তালিকা প্রকাশ করা হবে
ইউরোপীয় ইউনিয়ন চলতি বছর সারা বিশ্বের জাহাজ ভাঙা কোম্পানির একটি তালিকা প্রকাশ করবে, যারা পরিবেশ রক্ষা ও শ্রমিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে৷ গতবছর ইউরোপে অবস্থিত এমন ১৮টি কোম্পানির নাম প্রকাশ করেছিল ইইউ৷
এদিকে, জার্মান কনটেনার লাইন হাপাগ-লয়েড ইতিমধ্যে জানিয়েছে, এখন থেকে তারা ইইউ-র তালিকায় থাকা ইয়ার্ডগুলোতে জাহাজ ভাঙার জন্য পাঠাবে৷
পতাকা পরিবর্তন
জাহাজ নির্মাতারা জাহাজ ভাঙার ক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব এড়াতে ‘জিএমএস’ ও ‘উইরানা’র মতো কোম্পানির কাছে তাদের জাহাজ বিক্রি করে৷ ঐ কোম্পানিগুলো জাহাজ ভাঙা কোম্পানির কাছে জাহাজ বিক্রির আগে পতাকা পরিবর্তন করে৷ এক্ষেত্রে পালাও, কমোরস এবং সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস নামক ছোট ছোট দেশগুলোর পতাকা ব্যবহার করা হয়৷
রোব্যাঁ দে বোয়া নামে ফ্রান্সের একটি পরিবেশ বিষয়ক বেসরকারি সংগঠন জানিয়েছে, ২০১৬ সালে ১৮৪টি জাহাজ পতাকা পরিবর্তন করেছে৷ এর প্রায় অর্ধেক জাহাজই ইউরোপের৷ আর তারও অর্ধেকের বেশি জাহাজ জার্মানির৷
জেডএইচ/ডিজি (শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্ম, রোব্যাঁ দে বোয়া)
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷