1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জাহাজের ক্যাপ্টেন

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২

প্রমোদতরী কস্টা কনকর্ডিয়ার দুর্ঘটনার পর জাহাজের ক্যাপ্টেন এবং নাবিকদের কর্মদক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মনে৷ শুধু প্রমোদতরী নয়, যেসব জাহাজ মালপত্র আনা-নেয়া করে –সেসব জাহাজের ক্যাপ্টেনরা কতটা অভিজ্ঞ?

https://p.dw.com/p/142M2
ছবি: picture-alliance/dpa

প্রমোদতরী কস্টা কনকর্ডিয়ার দুর্ঘটনার পর জাহাজের ক্যাপ্টেন এবং নাবিকদের কর্মদক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মনে৷ শুধু প্রমোদতরী নয়, যেসব জাহাজ মালপত্র আনা-নেয়া করে –সেসব জাহাজের ক্যাপ্টেনরা কতটা অভিজ্ঞ?

এই পেশায় ভবিষ্যতের ক্যাপ্টেন এবং নাবিকদের আরো দক্ষ এবং অভিজ্ঞ করতে জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে এসেছে৷ লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের এল্সফ্লেঠ শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ইয়াডে হোখশুলে৷ ১৮৩২ সালে এই অঞ্চলেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম নেভিগেশন স্কুল৷ ইয়াডে হোখশুলের কোর্স সবমিলে চার বছরের৷ শুধু ক্যাপ্টেন নয়, নাবিক এবং কমান্ডিং অফিসারদের দায় দায়িত্ব কী হওয়া উচিৎ তা শুধু তত্ত্ব দিয়েই বোঝানো হয়না, ব্যবহারিক দিকগুলোর ওপরও জোর দেয়া হয়৷ যে কেউই এই কোর্সে অংশগ্রহণ করতে পারে অর্থাৎ একজন মহিলাকেও ভবিষ্যতে জাহাজের ক্যাপ্টেন হিসেবে দেখা যেতে পারে৷

স্টিনা মেনসেল এবং ইউলিয়া কোয়েনেকে এই কোর্সে ভর্তি হয়েছে৷ দুজনেই ভবিষ্যতে সমুদ্রগামী জাহাজের ক্যাপ্টেন হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চায়৷ এতদিন পুরুষদের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল এই পেশায়৷ বলতেই হচ্ছে দিন পাল্টাচ্ছে৷ স্কুল শেষ করার পরপরই এই দুজন সিদ্ধান্ত নেয় এল্সফ্লেঠে এসে এই কোর্স করার৷ ইউলিয়া হামবুর্গের মেয়ে আর স্টিনার বাবা ছিলেন জাহাজের ক্যাপ্টেন৷ স্টিনা বলল,‘‘বাবা সবসময়ই এমন সব কাহিনী বলতো যা শুনে আমার মনে হয়েছে এই পেশায় আমাকেও কাজ করতে হবে৷ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম৷ নিজেকে বললাম, দেখি না কি হয়!''

ক্যাপ্টেন হতে হলে সঙ্গী হতে হবে সমুদ্রের

কোর্সের বর্ণনা শুনলে মনে হবে কোর্সটি সহজ৷ কিন্তু আসলে বেশ কঠিন৷ এই কোর্সেই ছাত্র-ছাত্রীদের মালবাহী জাহাজ এবং প্রমোদতরী চালানোর দায়িত্ব দেয়া হবে৷ নিখুঁতভাবে নেভিগেশন শিখতে হবে, দেখাতে হবে – না দেখাতে পারলে ফেল৷ একই সঙ্গে শিখতে হবে নাবিক দলকে নিয়ন্ত্রণ করা, দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া৷ ছোটখাটো সমস্যাগুলো মাথা ঠান্ডা রেখে সমাধান করা৷ তবে সমুদ্রের সঙ্গে বসবাস করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন সমুদ্রের কাছে থাকা৷ ব্যবহারিক দিকগুলো তখনই আসে৷ তাই কোর্সের শুরুতেই ছয়মাস ছাত্র-ছাত্রীদের কাটাতে হয় একটি জাহাজে, সমুদ্রের ওপর৷ স্থলভাগ থেকে যা কয়েকশ মাইল দূরে৷ আর শুরুতেই এটা করা ভীষণভাবে জরুরি৷ জানান কোর্সের টিচার টর্সটেন লোফল্যার৷ লোফল্যার জানান,‘‘আমরা খুব সাবধানে এবং বিভিন্ন দিক চিন্তা-ভাবনা করেই প্রথম সেমেস্টার সাজিয়েছি৷ এর ফলে প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী একে অপরের সঙ্গে মিশতে বাধ্য হবে, অপরকে জানা সহজ হবে৷ ছ' মাস অনেক দীর্ঘ সময় মনে হলেও আসলে সময় খুব কম৷ কারণ এরা সবসময়ই ব্যস্ত থাকবে৷''

BdT Disney Dream auf dem Weg in die Nordsee
সমুদ্রের সঙ্গে বসবাস করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন সমুদ্রের কাছে থাকাছবি: dapd

ইউলিয়া কোয়েনেকে প্রথম সেমেস্টারেই সমুদ্র পাড়ি দিয়েছে৷ একটি ভারি মালবাহী জাহাজে সে ছয় মাস কাটিয়েছে৷ টিমের সঙ্গে সে থেকেছে৷ সমু্দ্র সম্পর্কে, নেভিগেশন প্রসঙ্গে কোন অভিজ্ঞতা ছাড়াই৷ ইউলিয়া কোয়েনেকে বলল,‘‘প্রতিটি শিপিং কোম্পানিতে সবাই আবেদন করে, যে কেউ যেভাবেই হোক জায়গা পেতে চায়৷ শিপে থাকতে হলে সবাইকে পৃথক পৃথক রুম দেয়া হয়৷ জায়গা পেলে সবাই খুশি, কী করতে হবে কীভাবে করতে হবে তা নিয়ে কেউই চিন্তা ভাবনা করে না৷ জাহাজে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবাই সবকিছু শিখে নেয়৷''

ডেক, ব্রিজ – প্রতিটি জায়গাই হচ্ছে ক্লাসরুম

স্টিনা মেনসেলও জাহাজের সদস্যদের একজন হয়ে গিয়েছে৷ তাকে শারীরিকভাবেও খাটা-খাটনি করতে হচ্ছে৷ স্টিনার ভাষায়,‘‘আমি ডেকের উপর কাজ করেছি৷ নতুন করে সব কিছু রঙ করে দিয়েছি৷ জং পরিষ্কার করেছি৷ এরপর আমাকে ব্রিজে পাঠানো হয়েছে৷ সেখানে অফিসারদের সাহায্য করেছি৷ অনেক কিছুই করতে হয় শুরুতে৷ অল্প অল্প করে সব ধরণের অভিজ্ঞতা হয়৷''

প্রথম ছয় মাসের পর শুরু হবে ক্লাস তখন শুধু তত্ত্ব৷ সমুদ্রের বিভিন্ন আইন-কানুন নিয়ম নীতি শেখানো হয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে৷ বিশেষ করে বন্দরের নিয়মগুলো জানা খুবই জরুরি৷ তৃতীয় এবং সপ্তম সেমেস্টারে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হবে ব্রিটেনের এলিজাবেথ দি সেকেন্ড জাহাজে৷ প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীকে ১৬০ ঘন্টা জাহাজ চালনার অভিজ্ঞতা দেখাতে হবে৷ এর মধ্যে থাকবে রাতের অন্ধকারে নির্ভুলভাবে জাহাজ চালানো, কুয়াশার মধ্যে দিক নির্দেশনা এবং বরফের ওপর জাহাজ চালানো৷ জরুরি অবস্থায় কী করতে হবে, কীভাবে জাহাজ এবং অন্য ক্রুদের রক্ষা করতে হবে তা জানতে হবে সবাইকে৷ ইউলিয়া আরো জানাল,‘‘জাহাজে হালকা জিনিস থেকে শুরু করে সেফটি ট্রেনিং পর্যন্ত অনেক কিছুই শেখানো হয়, শিখতে হয়৷ জাহাজে থাকলে এসব জানা জরুরি৷ হঠাৎ করে জাহাজে আগুন ধরে গেলে বা জাহাজে ছিদ্র দেখা গেলে কী করতে হবে তা শেখানো হবে পরে৷ তবে এসব কিছু শুধু তত্ত্ব নয় শেখানো হয় হাতে-কলমে৷''

ছাত্র-ছাত্রীরা শিখছে কীভাবে নিরাপদে জাহাজ চালানো যায়৷ ঝড়, তুষারপাতে শুধু জাহাজ নয় ক্রুদের রক্ষার দায়িত্বও ক্যাপ্টেনের৷ সেটা শিখতে হবে, জীবন বাঁচাতে হবে৷ কারণ কস্টা কনকর্ডিয়ার পুনরাবৃত্তি কেউই চায় না৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য