জিএসটি বসায় কতটা বাড়বে চিকিৎসার খরচ?
১৪ জুলাই ২০২২কোভিড অতিমারির জেরে এমনিতেই মানুষের রোজগার কমেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বেড়েছে। এর মধ্যে আর একটা দুঃসংবাদ। এ বার চিকিৎসা পরিষেবার জন্য বাড়তি টাকা দিতে হবে জনতাকে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর ব্যয়ের ক্ষেত্রে কর বসতে চলেছে। পণ্য পরিষেবা কর বা জিএসটি বসায় মোট চিকিৎসার খরচ বেড়ে যাবে। স্বাস্থ্য পরিষেবা ছাড়া অন্যান্য সামগ্রীর ক্ষেত্রেও নতুন হারে জিএসটি কার্যকর হতে চলেছে।
পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতে সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের উপর একটা বড় অংশের মানুষ নির্ভরশীল হলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিষেবার বড় প্রয়োজন পূরণ করে। সেখানে চিকিৎসার খরচ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ আগেই উঠেছে। মূলত খরচের অস্বচ্ছ হিসেব নিয়েই বারবার মুখর হয়েছে রোগীদের পরিবার। এ বার সরকারি কর আদায়ের ফলে খরচ আরো বাড়বে। সম্প্রতি চন্ডীগড়ে জিএসটি পরিষদের বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের বা আইসিইউ-এর বাইরে সাধারণ শয্যার ক্ষেত্রে দৈনিক ভাড়া পাঁচ হাজার টাকার বেশি হলে তার উপর পাঁচ শতাংশ হারে জিএসটি দিতে হবে। অর্থাৎ হাসপাতালের কোনো ঘরের ভাড়া দৈনিক ছয় হাজার টাকা হলে, জিএসটি বাবদ ৩০০ টাকা বাড়তি দিতে হবে। যত দিন রোগী হাসপাতালে থাকবেন, তার উপর নির্ভর করবে বর্ধিত বিলের অঙ্ক।
শুধু সরাসরি রোগী পরিষেবা নয়, হাসপাতাল পরিকাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেও বেড়েছে জিএসটি। হাসপাতালে বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ হারে পণ্য পরিষেবা কর ধার্য করা হয়েছে। হাসপাতালে প্রতিদিন রোগীর জন্য ব্যবহৃত সামগ্রীর মধ্যে বায়ো মেডিক্যাল উপকরণ যা রয়েছে, তা নিজস্ব পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা জরুরি। এ জন্য হাসপাতালে প্লান্ট গড়ে তোলা হলে সেক্ষেত্রে জিএসটি ধার্য করা হয়েছে।
খরচ যে খাতেই হোক, তা রোগীদের ঘাড়ে চাপবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কয়েক মাস আগে গুরুত্বপূর্ণ জীবনদায়ী ওষুধের দাম বেড়েছে। তার উপর খরচ বাড়লে নাভিশ্বাস উঠবে সাধারণ মানুষের। শুধু তাই নয়, এর প্রভাব রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। রাজ্যের দুই কোটি ৩২ লক্ষ পরিবার এই প্রকল্পে নথিভুক্ত। এ জন্য আড়াই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য। স্বাস্থ্য খাতে পণ্য ও পরিষেবা কর বসলে রাজ্যের খরচ বাড়তে পারে ১২৫ কোটি টাকার মতো।
এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চিকিৎসকদের সংগঠন। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম-এর সদস্য ডা. অর্জুন দাশগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বেসরকারি হাসপাতালে বেডের উপর সরকার কর বসালে সেটা রোগীর কাছ থেকে আদায় করা হবে। এমনিতেই চিকিৎসার খরচ বাড়ছে। তার উপর এই পরিষেবাতেই কর চাপানো হচ্ছে কেন? স্বাস্থ্য মানুষের অধিকার। এ নিয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।” বর্ধিত জিএসটি-র অংশ হাসপাতালের ভাগ থাকবে, এমনটা আশা করছেন না কেউ। মেডিকা হাসপাতালে সিইও ডা. কুণাল সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, "কোভিডের একের পর এক ঢেউয়ে হাসপাতালগুলির আর্থিক সমস্যা বেড়েছে। ২০ শতাংশ হাসপাতাল কোনও রকমে কাজ চালাচ্ছে। তার মধ্যে জিএসটি ধার্য করা হলে কী লাভ, বুঝতে পারছি না।”
আগামী সোমবার থেকে আরো একগুচ্ছ সামগ্রীর উপর পণ্য ও পরিষেবা কর বাড়তে চলেছে। এর মধ্যে রয়েছে প্যাকেটজাত খাবার যেমন গুড়, দই, লস্যি, মাখন, মধু ইত্যাদি। খাবারের আধার হিসেবে ব্যবহৃত টেট্রা প্যাকের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজে উপর কর বসছে। এর ফলে এ সব পণ্যের দাম বাড়বে। হোটেলে এক হাজার টাকার কম দৈনিক ভাড়ার ঘরের উপর ১২ শতাংশ হারে জিএসটি বসছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর উপর কর বাড়লে তাতে সাধারণ মানুষের পকেটে টান পড়বে ঠিকউ। তবে স্বাস্থ্যের মতো জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে এর ফল সুদূরপ্রসারী হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষত যে দেশে সিংহভাগ মানুষের নির্দিষ্ট কোনো স্বাস্থ্যবিমা নেই।