বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্ক
৮ জুন ২০১৩যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের জেনারেলাইজড সিস্টেম অফ প্রেফারেন্সেস বা জিএসপি সুবিধা থাকবে কিনা – সে সিদ্ধান্ত হবে এ মাসেই৷ যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটিতে জিএসপি শুনানি শেষে এ তথ্য জানানো হয়েছে৷ বৃহস্পতিবারের শুনানিতে সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান ডেমোক্র্যাট দলের সিনেটর রবার্ট মেনদেজ বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা বাতিলের জন্য জন্য তার যুক্তি তুলে ধরেন৷ তিনি মনে করেন, এই ব্যবস্থা নেয়া হলে তা হবে বাংলাদেশের জন্য একটি সিগন্যাল৷ তখন বাংলাদেশ শ্রমিক অধিকার সুরক্ষা এবং কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেবে৷ চলতি মাসের শেষ দিকে জানা যাবে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা থাকা, বাতিল বা স্থগিতের বিষয়ে সেদেশের সরকারের সিদ্ধান্ত৷ শুনানিতে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইকরামুল কাদের উপস্থিত ছিলেন৷
এর আগে আরো চার দফা জিএসপি নিয়ে শুনানি হয়েছে৷ গত মার্চের শুনানিতে বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়৷ সেই দলে এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএ-র প্রতিনিধিরা ছিলেন৷ তাঁরা তখন চেয়েছিলেন প্রচলিত জিএসপি সুবিধা বহাল রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেন তৈরি পোশাকেও জিএসপি সুবিধা দেয়৷ তাঁরা ঢাকায় ফিরে জিএসপি সুবিধা বহাল থাকার আশা করেন৷ কিন্তু এরপর এপ্রিলে সাভারের রানা প্লাজা ধসে পাঁচটি পোশাক কারখানার এক হাজারেরও বেশি শ্রমিক নিহত হওয়ায় পরিস্থিতি পাল্টে যায়৷ তাজরীন ফ্যাশানস-এ আগুনের পর সে সংকট সৃষ্টি হয়, রানা প্লাজা ধসের পর তা চূড়ান্ত সংকটে রূপ নেয়৷ তাই সর্বশেষ শুনানিতে ট্রেড ইউনিয়ন, শ্রমিক অধিকার, শ্রমিক নিরাপত্তা এবং কাজের পরিবেশ গুরুত্ব পেয়েছে৷
১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা পেয়ে আসছে৷ বাংলাদেশের ৯৭ ভাগ পণ্য এই সুবিধা পেলেও তৈরি পোশাকে এই সুবিধা নেই৷ আর তৈরি পোশাকই হলো যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পন্য৷ তাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে রপ্তানি আয়ের মাত্র শতকরা ০.৫৪ ভাগ আসে জিএসপি সুবিধা থেকে, যার পরিমাণ গত বছরে ছিল ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ আর মোট রপ্তানি আয় ছিল ৪.৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
তাহলে জিএসপি সুবিধা বাতিল হলে ভয় কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে পলিসি রিচার্স গ্রুপের প্রধান ড. আহসান এইচ মনসুর ডয়চে ভেলেকে বলেন, জিএসপি সুবিধায় রপ্তানি আয়ের পরিমাণ সামান্য হলেও ভয়ের বিষয় অন্য জায়গায়৷ আর তা হলো শ্রমিকদের যেসব বিষয় নিয়ে শুনানি হয়েছে সেই ইস্যুতে যদি যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি বাতিল হয়, তাহলে বাংলাদেশের একটি নেতিবাচক ভাবমূর্তি ছড়িয়ে পড়বে৷ প্রতিষ্ঠিত হবে বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকার নেই৷ তাহলে এর প্রভাব পড়বে সবখানে৷ তিনি বলেন, এর প্রভাব ইউরোপীয় ইউনিয়নেও পড়বে৷ সেখানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকও জিএসপি সুবিধা পায়৷ কিন্তু রানা প্লাজা ধসের পর তারাও জিএসপি প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছে৷ তারা এখন মার্কিন সিদ্ধান্ত দেখার অপেক্ষায় আছে৷ আর মর্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি জিএসপি বাতিল করে তাহলে ইউরোপেও হতে পারে৷ তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে যে পোশাক রপ্তানির ৬০ ভাগ যায় ইউরোপে৷
ড. আহসান বলেন, শুধুমাত্র জিএসপি বাতিল নয়, এর নেবিাচক প্রভাব পড়তে পারে পুরো রপ্তানি বাণিজ্যে৷ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৫২.৩ ভাগ ইউরোপ এবং ৩৩.৩ ভাগ অ্যামেরিকা অঞ্চলের সঙ্গে৷ আর বাকি দুনিয়ার সঙ্গে মাত্র ১৪.৪ ভাগ৷ তাই ইউরোপ এবং অ্যামেরিকার সঙ্গে রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তা পুরো রপ্তানি বাণিজ্যকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে৷ তাই এ মাসের শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্র জিএসপির ব্যাপারে সে সিদ্ধান্ত নেয়, তা বাংলাদেশের অনুকূলে আনতে শেষ দিন পর্যন্ত সরকারকে সক্রিয় থাকার আনুরোধ করেন ড. আহসান৷