বাংলাদেশের গৃহিণীদের অবদান
৯ মার্চ ২০১৪গবেষণায় বলা হয়েছে, গৃহকাজের অর্থনৈতিক মূল্য মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশের সমতুল্য৷ ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল ১০ লাখ ৩৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকার৷
উন্নয়ন অন্বেষণ দুই পদ্ধতিতে নারীদের মজুরিবিহীন গৃহস্থালি কাজের আর্থিক মূল্যমান হিসাব করেছে৷ ‘সুযোগ খরচ' পদ্ধতি এবং ‘বাজার প্রতিস্থাপন খরচ' পদ্ধতি৷
সুযোগ খরচ পদ্ধতিতে শ্রমবাজারে অন্য বিকল্প থেকে যে আয় পাওয়া যায়, তার অঙ্ক হিসাব করা হয়৷ আর বাজার প্রতিস্থাপন খরচ পদ্ধতিতে গৃহকর্ম করতে বিকল্প কাউকে নিয়োগ দেওয়া হলে কত টাকা ব্যয় হতো, তা হিসাব করা হয়৷ দেশের সাতটি বিভাগ থেকে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সাতটি জেলা নির্ধারণ করে ৫২০ জন নারীর ওপর এই জরিপ পরিচালনা করা হয়৷ দৈবচয়ন পদ্ধতিতে বেছে নেওয়া এ নারীদের মধ্যে শহরের ৩১৮ জন এবং গ্রামের ২০২ জন৷
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির মতে, বাংলাদেশে সাধারণভাবে মজুরি এত কম না হলে এবং নারী ও পুরুষের মজুরি বৈষম্য না থাকলে ওই দুই পদ্ধতিতে মজুরিবিহীন গৃহস্থালি কর্মের মূল্যমান আরও বেশি হতো৷
উন্নয়ন অন্বেষণের গবেষণা অনুযায়ী, যেসব নারী চাকরি, ব্যবসা, হস্তশিল্প তৈরি, দিনমজুরি এবং অন্যের বাসায় কাজে নিয়োজিত, তারাও নিজেদের গৃহকর্মের জন্য দৈনিক যথাক্রমে গড়ে ৩ দশমিক ৭১, ৩ দশমিক ৬৯, ৫ দশমিক ২, ৪ দশমিক ৮ এবং ৪ দশমিক ৩ ঘণ্টা সময় ব্যয় করে থাকেন৷ এ ক্ষেত্রে কাঠামোগত ব্যর্থতা ও প্রচলিত পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা অনেকাংশে দায়ী৷
সিপিডি-র ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘নারীর গৃহকাজের আর্থিক হিসাব তার ক্ষমতায়ন এবং সমতার জন্য জরুরি৷ কারণ বাংলাদেশে আয় সক্ষমতার ওপর ক্ষমতায়ন নির্ভর করে৷ নারীরা ঘরের কাজ করে বলে তার কোন আর্থিক মূল্য বিবেচনা করা হয় না৷ আর পুরুষরা বাইরে কাজ করে নগদ অর্থ আয় করায় তা বিবেচনায় নেয়া হয়৷ এই প্রবণতা দূর করা উচিত৷''
তিনি বলেন, ‘‘ঘরের কাজ বাইরের কাউকে দিয়ে করালে তাতে অর্থ খরচ হয়৷ সেটা বিবেচনা করলেই গৃহকাজের আর্থিক বিষয়টি স্পষ্ট হয়৷''
তবে তিনি বলেন, ‘‘এখনই নারীদের গৃহকাজের আর্থিক হিসাবকে জিডিপিতে যোগ করা হয়তো যাবে না৷ তবে ধারাবাহিকভাবে এর হিসাব প্রকাশ হলে ধীরে ধীরে জিডিপিতেও যোগ করা যেতে পারে৷ তবে তা কিভাবে করা যাবে তা গবেষণার বিষয়৷''
উন্নয়ন অন্বেষণ শ্রমবাজারে নারীদের আরও বেশি হারে অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে বলছে, জীবনধারণের বাধ্যবাধকতা, ক্রমবর্ধমান আর্থিক চাহিদা এবং পারিবারিক সহায়তা হ্রাস নারীদেরকে বিভিন্ন আয়বর্ধক কাজে নিয়োজিত হতে বাধ্য করছে৷
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘শুধু তাই নয় ঘরের কজের পাশাপাশি নারীরা এখন ব্যবসাসহ নানা স্বাধীন পেশায় যুক্ত হচ্ছে৷''