1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জিতেন গুহকে মার, ভুয়া খবর ও সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
২ মে ২০২২

চট্টগ্রামে আওয়ামি লীগের দলীয় কোন্দলের জেরে মার খাওয়া জিতেন গুহর ছবি-সহ খবরে ছেয়ে গেছে ভারতে সংবাদমাধ্যম।

https://p.dw.com/p/4AiHC
ছবি: Getty Images/P. Singh

গত শুক্রবার চট্টগ্রামের পাটিয়ায় হাইদলগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামি লীগের সাবেক সভাপতি জিতেন গুহকে মারধর করা হয়। অভিযোগ, তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করেন হাইদলগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং আওয়ামি লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক বি এস জাসিম। গত নির্বাচনে দলের প্রার্থী ছিলেন জিতেন গুহ এবং জাসিম ছিলেন বিদ্রোহী প্রার্থী। তিনি জিতেছেন। তারপর তাকে আওয়ামি লীগ থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে।

গত শুক্আরবার ওয়ামি লীগের তরফে ব্রাক্ষ্মণঘাতা গাউসিয়া কমিউনিটি সেন্টারে ইফতারের আয়োজন করা হয়। জিতেন গুহ ছিলেন সেখানে বিশেষ অতিথি। ব্যানারে জাসিমের নাম ছিল না। জাসিম তারপর এসে হামলা করেন বলে অভিযোগ। তার সমর্থকরা জিতেন গুহকে বেঁধে প্রচণ্ড মারে ও রক্তাক্ত করে বলেও অভিযোগ। বিডিনিউজ২৪ডটকমের খবর বলছে, আওয়ামি লীগের ওই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর

একটি ভারতীয় সংবাদসংস্থা তিনদিন আগে খবরটি করে। তার শিরোনাম ছিল, 'বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘু নেতাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মার'। তারপর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবরটি ঠাঁই পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমগুলিতে খবরটি গুরুত্ব না পেলেও ইংরাজিতে অনেক সংবাদমাধ্যমেই বিস্তারিতভাবে তা প্রকাশ পেয়েছে। একটি চ্যানেলের ওয়েবসাইটে তো বলা হয়েছে, বাংলাদেশে হিন্দু নেতাকে মারের পর তার মৃত্যু হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে তো পরিস্থিতি আরো খারাপ। সেখানে কেউ বলছেন, ইফতারে না যাওয়ার জন্য জিতেন গুহকে মারা হয়েছে। কেউ শুধু বলছেন হিন্দু নেতাকে মারা হয়েছে। মারের কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনেক নিচে ঠাঁই পেয়েছে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে,  এই ধরনের তথ্যবিকৃতি ও ভুল তথ্যের জন্য খবরের চরিত্র বদল হয়ে যাচ্ছে। তা সাম্প্রদায়িক রূপ নিচ্ছে।

কেন হচ্ছে?

প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র মনে করেন, এই রকম ঘটনা সমানে হচ্ছে। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''জাহাঙ্গিরপুরি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে এমন সব খবর প্রকাশিত হচ্ছিল যে, কেন্দ্রীয় সরকার পর্যন্ত সাবধান করে দিয়ে বলেছে, এরকম খবর দেখানো বা লেখা হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।''

শুভাশিস মনে করেন, ''জিতেন গুহর বিষয়টিও এই ধরনের সাংবাদিকতার আরেকটি উদাহরণ। সাংবাদিকতার স্খলন হয়েছে। আ্মরা সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে প্রচুর কথা বলি, কিন্তু এথিক্স নিয়ে কথা বলি না। অথচ, সমানে আমরা সাংবাদিকতার এথিক্স থেকে বিচ্যূত হচ্ছি।''

সাংবাদিক ও লেখক মিলন দত্ত ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''ভারতে সাংবাদিকতার একটা বড় অংশ সাম্প্রদায়িক প্রচারে ঢুকে গেছে। কিছু চ্যানেল দেখলে এই কথাটাই মনে পড়ে। মনে হয়, তারা ইসলামোফোবিয়ার শিকার। তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করা যায় না।''

মিলন মনে করেন, ''সামাজিক মাধ্যমে কোনো আগল নেই, ফলে সেখানে যা খুশি লেখা যায়। আবার এই সামাজিক মিডিয়া সমাজদর্পনেরও কাজ করে। মানুষ কী ভাবছে, সেটারও আঁচ পাওয়া যায়।''

মানবাধিকার কর্মী ও প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্ত সম্প্রতি ইসলামোফোবিয়া ও মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করছেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''কিছুদিন আগেই লতা মঙ্গেশকর মারা যাওয়ার পর শাহরুখ খান সেখানে গিয়ে প্রার্থনা করেছিলেন। ফু দেয়াটা সেই প্রার্থনার অঙ্গ। অথচ, একটি চ্যানেল বলে দিল, শাহরুখ নাকি থুতু ফেলেছেন। তাই নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে কী প্রচার। এ সবই মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা। জিতেন গুহকে নিয়ে সেটাই হয়েছে। এটাও ইসলামোফোবিয়ার উদাহরণ।''

আশিসের বক্তব্য, ''এরকম দীর্ঘদিন চলতে থাকলে মানুষও জিনিসের দাম, বেকারত্ব, কলকারখানা বন্ধের মতো বিষয়গুলি নিয়ে ভাববে না। তারা তখন ওই সব প্রচার নিয়েই মজে থাকবে।''

আশিসের দাবি, ''সেজন্যই এই ধরনের প্রচারের পরেও কারো শাস্তি হয় না। ফলে প্রচার চলতেই থাকে।''