সামরিক সাফল্যের ভুয়া ভিডিও ধরবেন যেভাবে
১৩ এপ্রিল ২০২২ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সমর্থনে টুইটারে একটি অ্যাকাউন্ট (@ArmedForcesUkr) আছে৷ তবে এটি টুইটার কর্তৃক ভ্যারিফায়েড বা পরীক্ষিত নয়৷ এই অ্যাকাউন্টের অনুসারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লাখ৷ সেখানে শনিবার ৪৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়৷ সঙ্গে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর রিজার্ভ ফোর্সের একটি হিট গান যুক্ত করা হয়৷ এছাড়া রুশ সৈন্যদের অবমাননা করতে ‘ওর্কস' অর্থাৎ মানুষরূপী রাক্ষস শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে৷
ভিডিওতে বিস্ফোরণ, মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞের ১৬টি আলাদা দৃশ্য ব্যবহার করা হয়েছে৷ ড্রোন হামলা, রাস্তার পাশে লুকিয়ে থেকে বোমা হামলা ও স্নাইপার অ্যাটাকের দৃশ্য আছে ঐ ভিডিওতে৷
কিন্তু ভিডিওতে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর যে সাফল্য তুলে ধরা হয়েছে তা কি ঠিক?
রায়: বিভ্রান্তিকর
ডয়চে ভেলে ভিডিও ক্লিপে ব্যবহৃত ১৬টি দৃশ্যের উৎসের খোঁজ করেছে৷ এর মধ্যে ছয়টি ইউক্রেন যুদ্ধের নয় বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে৷ এই ছয়টির মধ্যে একটিতে যেখানে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর দক্ষতা দেখানোর কথা বলা হচ্ছে, সেটিতে আসলে রুশ স্নাইপারদের দেখা যাচ্ছে৷ বাকি ১০টি দৃশ্য হয়ত ঠিক হতে পারে, কিন্তু সে ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷
ভিডিওর প্রথম ও শেষ দৃশ্যগুলো ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রথম অনলাইনে প্রকাশিত হয়৷ সেই সময় আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধ চলছিল৷ অন্তত একটি দৃশ্য আজারবাইজানের সামরিক বাহিনীর অফিসিয়াল ফুটেজ বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে৷ ঐ দৃশ্যে বায়রাকতার ড্রোন দিয়ে হামলা চালাতে দেখা যাচ্ছে৷ ইউক্রেনও এই ড্রোন যুদ্ধে ব্যবহার করছে৷
এছাড়া ভিডিওর ২৭তম সেকেন্ডে নাইট-ভিশন ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে৷ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি রুশ অ্যাকাউন্ট থেকে সামাজিক মাধ্যম ভিকন্টাক্টে ও টেলিগ্রামে ফুটেজটি প্রথম প্রকাশ করা হয়েছিল৷ এতে সিরিয়ায় রাশিয়ার স্পেশাল ফোর্সকে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে বলে ঐ পোস্টে দাবি করা হয়েছিল৷ এছাড়া ফুটেজটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকাশ করেছে বলেও জানানো হয়েছিল৷ নীচের ছবিটি দেখুন৷
৪৩ সেকেন্ডের ভিডিওর মধ্যে মাত্র ২৭ সেকেন্ড ধরে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরের ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে৷ অর্থাৎ পুরো ভিডিওর এক-তৃতীয়াংশই ভুয়া৷
ঐ ২৭ সেকেন্ডের মধ্যে কিছু দৃশ্য মধ্য-মার্চে মারিউপলে ইউক্রেনের হামলার বলে দাবি করা হয়েছে৷ এসব দৃশ্যে @polkazov জলছাপ দেখা যাচ্ছে৷ ইউক্রেনের আজভ ব্যাটালিয়নের গণমাধ্যম বিভাগ থেকে প্রকাশিত ভিডিওর জলছাপেও @polkazov দেখা গেছে৷
আলোচিত ভিডিওর কিছু দৃশ্যে খেয়ারসন শহরে ড্রোন হামলার সংকলন দেখা যাচ্ছে৷ ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ১৮ মার্চ এটি ইউটিউবে প্রকাশ করেছিল৷
আরেক দৃশ্যে ইউক্রেনের ন্যাশনাল সিকিউরিটি, ডিফেন্স অ্যাণ্ড ইন্টেলিজেন্স কমিটির এক সদস্যের ২৭ মার্চ টেলিগ্রামে প্রকাশ করা অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল হামলা দেখা যাচ্ছে৷
যেভাবে আসল ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়
ভিডিওতে দেখানো ১৬টি দৃশ্যের প্রতিটির স্ক্রিনশট নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে মূল ভিডিওর সন্ধান করেছে ডয়চে ভেলে৷ এরপর এই ভিডিওগুলোর কোনোটি ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে অনলাইন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে কিনা, তা জানার চেষ্টা করেছে৷ টিনআই, ইয়ানডেক্স ভিজুয়াল সার্চ এবং রেভআই-এর মতো ব্রাউজার প্লাগ-ইনস ব্যবহার করে এসব কাজ করা যায়৷
মিশায়েল ট্রোব্রিজ/জেডএইচ