জেএমবি থেকে নব্য জেএমবি
১৭ অক্টোবর ২০১৬রবিবার রাতে খুলনার কেন্দ্রীয় কারাগারে জঙ্গি আরিফের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷
২০০৫ সালের ১৭ অগাস্ট বাংলাদেশের মোট ৬৪ জেলার মধ্যে একটি বাদে ৬৩টি জেলাতেই একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে আলোচনায় আসে জেএমবি৷ ওই দিনের হামলায় একজন নিহত হন৷ কিন্তু একই বছরের ১৪ নভেম্বর তারা ঝালকাঠিতে আদালতে যাওয়ার পথে বোমা হামলা চালিয়ে ঝালকাঠি জজ আদালতের বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে এবং সোহেল আহম্মেদকে হত্যা করে৷ এরপর তারা গাজীপুর আদালতসহ আরো কয়েকটি জায়গায় হামলা চালায়৷
দুই বিচারক হত্যামামলায় ২০০৬ সালে ঝালকাঠির আদালত মোট সাত জনকে ফাঁসির আদেশ দেয়৷ তাদের মধ্যে জেএমবির দুই শীর্ষ নেতা শায়েখ আব্দুর রহমান এবং বাংলা ভাইসহ কারাগারে আটক ছয় জনের ফাঁসি কার্যকর হয় ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ৷ জঙ্গি আরিফ তখন পলাতক ছিল৷ ২০০৭ সালের ৭ জুলাই তাকে ময়মনসিংহ থেকে আটক করা হয়৷ রবিবার তার ফাঁসি কার্যকর করা হলো৷
শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি এবং জেএমবির দুই হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মী কারাগারে থাকার পরও গত এক দশকে তাদের তৎপরতা ছিল৷ কিন্তু সেই তৎপরতা তত ব্যাপক ছিল না৷ এর মধ্যে তাদের নতুন নেতা ঘোষণা আর গ্রেন্তারের ঘটনাই ছিল প্রধান৷
কিন্তু গুলশানের হোলি আর্টিজানে হামলার পর আলোচনায় আসে নব্য জেএমবি'র নাম৷ পুলিশ জানায়, হোলি আর্টিজানে যারা হামলা করেছে তারা জেএমবি'রই একটি নতুল অংশ৷ তারা তামিম চৌধুরীর নেতৃত্বে ‘নব্য জেএমবি' নামে সংগঠিত হয়েছে৷ এরপর শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে হামলার জন্যও নব্য জেএমবি'র সদস্যদের দায়ী করা হয়৷ এই নব্য জেএমবি'র সদস্যরা আইএসের আদর্শে উদ্বুদ্ধ৷ পুলিশ এবং র্যাব এরই মধ্যে ঢাকার কল্যাণপুর. আজিমপুর, পল্লবী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর এবং ময়মনসিংহে এই নব্য জেএমবির অন্তত আটটি আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে৷ এসব অভিযানে নব্য জেএমবি নেতা তামিম চৌধুরীসহ ২৭ জন ‘জঙ্গি' নিহত হয়েছে৷
তবে নব্য জেএমবি'র আরেক মাস্টামাইন্ড মেজর জিয়া এখনো আটক হননি৷ নব্য জেএমবির হাতে থাকা সব আগ্লেয়াস্ত্রও এখনো উদ্ধার হয়নি৷ পুলিশ এ পর্যন্ত গুলশান হামলায় ব্যবহৃত তিনটি একে-২২ রাইফেল এবং ১০টি পিস্তল উদ্ধার করেছে৷ এখনো বাইরে আরো একই ধরণের আগ্নেয়াস্ত্র আছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে৷ আর নব্য জেএমবির সরাসরি রিক্রুট করা ৩০০ সদস্য আছে বলেও নানাভাবে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা৷
এদিকে হোলি আর্টিজানে হামলার পর ২৩ সেপ্টেম্বর আরো একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে৷ তাতে বাংলাদেশে হামলার আরো পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে৷ আইএসের সংবাদ সংস্থা আমাক-এর বরাত দিয়ে ওই ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়৷ আইএসের ম্যাগাজিন রুমাইয়াহ-র দ্বিতীয় সংখ্যায় গুলশান হামলার সন্দেহভাজন ‘মাস্টারমাইন্ড' তামিম চৌধুরীর নামে একটি লেখা প্রকাশ হয়েছে৷
এ নিয়ে ঢাকা মাহানগর পুলিশের উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে প্রধানত এখন দু'টি জঙ্গি গ্রুপ, একটি আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, যারা ব্লগার ওপ্রকাশকসহ মুক্তমনাদের ওপর হামলা এবং হত্যায় জড়িত, আরেকটি নব্য জেএমবি, যারা গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার সঙ্গে জড়িত৷ দু'টি গ্রুপকেই আমরা কোণঠাসা করে ফেলেছি৷ আশা করছি, বাইরে যারা আছে তারাও অচিরেই ধরা পড়বে৷''
তিনি দাবি করেন, ‘‘আমরা ধারাবহিক অভিযানের মধ্য দিয়ে জঙ্গিদের মূল শক্তি ভেঙ্গে দিয়েছি৷ তারা আর মাথাচাড়া দিতে পারবে বলে মনে হয়না৷ তাদের অনেকে এখন আত্মসমর্পণও করছে৷''
আর নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নব্য জেএমবি'র নেটওয়ার্ক সম্পর্কে সঠিক তথ্যের ভিত্তিতেই অভিযান পরিচালনা করেছে৷ আমার মনে হয়, তাদের নেটওয়ার্ক এখন তাদের কাছে পুরোপুরি স্পষ্ট৷ ফলে অভিযানে মূল নেতারা হয় নিহত হয়েছে অথবা ধরা পড়েছে৷''
জঙ্গিরা আবার মাথাচাড়া দেবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এটা নির্ভর করছে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে কিনা তার ওপর৷ আর এরসঙ্গে সামাজিকভাবেও কাজ করতে হবে। জঙ্গিবিরোধী সামাজিক সচেতনতা খুব দরকার, কারণ জঙ্গিবাদ একটা আদর্শও৷ সেটা ভ্রান্ত আদর্শ হলেও...৷’’