‘জেলখানায় এক কেজি মাংসের দাম ১৮০০ টাকা’
২৯ জানুয়ারি ২০২১ডয়চে ভেলে: আপনি তো ডিআইজি প্রিজন হিসেবে অনেক দিন দায়িত্ব পালন করেছেন৷ দুর্নীতির কোন দিকগুলো আপনার চোখে পড়েছে?
মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী: বড় জেলে সবাই পোস্টিং চায়৷ কারণ, ওই সব কারাগারে বন্দির সংখ্যা বেশি৷ বন্দি বেশি হলে লাভও বেশি-এই মনোভাব নিয়ে যারা কারাগারে কাজ করেন, তারা কখনোই কারাগারের ভালো করতে পারবেন না৷ ঘুরে ফিরে কারা পোস্টিং নেয় সেটা দেখলেই বোঝা যায়৷ গত পাঁচ বছরে যেসব অনিয়ম হয়েছে তার কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? জেলখানার ক্যান্টিনে দুর্নীতি হয়, দেখা-সাক্ষাতে দুর্নীতি হয়, জামিনে দুর্নীতি হয়, থাকা নিয়ে দুর্নীতি হয়৷ ভিতরে গাঁজা, হেরোইন পাচারের মাধ্যমে দুর্নীতি হয়৷ এরকম ১০-১২টি খাতে দুর্নীতি হয়৷ বর্তমান আইজি প্রিজন সাহেব আমার জানামতে সৎ মানুষ৷ তিনি যদি এই বিষয়গুলো নিয়ে শুদ্ধি অভিযানে নামেন, তাহলে অনিয়ম দূর হবে৷ নিরাপত্তা বাড়বে৷
কারাগারে জেল হত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে৷ বন্দি পালিয়ে যায় মই বেয়ে৷ করোনার মধ্যে বাইরে থেকে নারী এসে পুরুষ বন্দির সাথে আলাদা রুমে সময় কাটায়- এগুলো কীভাবে সম্ভব হয়?
কোনো ঘটনার যদি যথাযথ তদন্ত হয় এবং দায়ীরা শাস্তি পায় তাহলে কিন্তু এ ধরনের ঘটনা আর ঘটে না৷ কিন্তু তদন্তে ও শাস্তি দেয়ায় যদি গাফিলতি থাকে. তার সুযোগ যারা দুষ্ট তারা নেয়৷ ১০-১২ লাখ টাকা দিয়ে যদি কোনো কারারক্ষী চাকরি পায়, তাহলে তো সে সেই টাকা তোলার চেষ্টা করবে৷ ৩রা নভেম্বরে জেল হত্যার সময় জেলখানায় তো পুরোই অনিয়ম ছিলো৷ তারপরও তো ডিআইডি ঢুকতে পারমিশন দেননি৷ তারপর তো প্রেসিডেন্ট নিজে টেলিফোন করেছে৷
কারা সংস্কারের কোনো কমিশন এ পর্যন্ত হয়েছে?
আমি মোনেম কমিশনের কথা শুনেছি৷ আমি নিজেও ওই কমিশনের প্রতিবেদনটা পড়ার জন্য খুঁজেছি৷ কোনো জেলের জেলার আর জেল সুপার যদি ভালো হন, তাহলে ওই জেলের ৮০ ভাগ অনিয়ম বন্ধ হতে বাধ্য৷
তাদের তাহলে কাজ কী?
যে-কোনো জেল খানার গেট থাকে একটা৷ ওই গেট যদি সঠিক নজরদারিতে থাকে, তাহলে তো আর সমস্যা হয় না৷ সেটা করা গেলে, ভালো লোক পোস্টিং দেয়া গেলে দুর্নীতি কমানো সম্ভব৷
দুনীতি, অনিয়ম সুর্নিষ্টভাবে কোথায় হয়?
কারাগারে কোন জায়গায় দুর্নীতি নাই সেটা বলেন৷ প্রথম দুর্নীতি শুরু হয় নিয়োগ দিয়ে৷ বন্দিদের থাকা নিয়ে দুর্নীতি হয়৷ এরপর ক্যান্টিন৷ সেখানে এক কেজি গরুর মাংসের দাম ১৮শ’ টাকা৷ করোনার কারণে এখন দুর্নীতিবাজরা শোনা যায় কারাগারে ভিডিও কলের ব্যবস্থা করে দেয়৷
এই পরিস্থিতি হলে কারাগারের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় না?
কারাগারে দু-একবার যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বন্দিদের মধ্যে তার একটা কারণ হলো দুর্নীতি৷ বন্দিরা দুর্নীতি বন্ধের দাবি করেছে৷ সবার বেতন বেড়েছে, কিন্তু দুর্নীতি কমেনি৷ তাই নরদারি বাড়াতে হবে৷
কিন্তু জেলার, জেল সুপারদের বিরুদ্ধেই তো অভিযোগ৷ তাহলে কী হবে?
হ্যাঁ, সেজন্যই তো আমি বলেছি জেলার, জেল সুপার ভালো হলে দুর্নীতি কমে যাবে৷ তারা তো টাকা-পয়সা দিয়ে পোস্টিং নেয়৷
তারা টাকা-পয়সা দিয়ে পোস্টিং নিলে তাহলে তো আরো উপরের লোক টাকা নেয়৷ তারা কারা? তাহলে তাদের দায় নেই?
তাদের নাম তো আর আমি বলতে পারবো না৷ তারা উপরের লোক৷
এমন তো নয় যে আপনি যখন ডিআইজি প্রিজন ছিলেন তখন দুর্নীতি হয়নি৷ সেই সময় সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
জেলখানার ৮০ ভাগ লোক ভালো৷ ২০ ভাগ লোক খারাপ৷ আমি জোর গলায় বলছি, কর্তৃপক্ষের যদি সদিচ্ছা থাকে তাহলে এই দুর্নীতি কমতে বাধ্য৷