জোটের কলেবর বাড়াতে তৎপর আওয়ামী লীগ
২৭ জুলাই ২০১৮আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার সিপিবি অফিসে গিয়ে দলটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন৷ এরপর সচিবালয়ে বৈঠক করেছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার সঙ্গে৷ এছাড়া তিনি কয়েকটি বাম রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন৷
সাধারণ সম্পাদকের এই তৎপরতা নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র মাহবুব-উল-আলম হানিফ৷ তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন এলে জোট ভাঙা গড়া শুরু হয়৷ এটাও তেমনি একটা তৎপরতা৷ অনেকেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে আসতে চায়৷ তাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে৷ এগুলো খুবই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া৷''
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের কলেবর বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করেন তিনি৷ এছাড়া ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনে কারা কীভাবে অংশ নেবে তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে বলে জানান হানিফ৷ সামনের দিনে এই আলোচনা আরো বাড়বে বলে মনে করেন তিনি৷
জোট-মহাজোটের বাইরের বামপন্থি দলগুলোকে নির্বাচনের মাঠে পাশে পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা৷ জোটে না এলেও অন্তত আগামী নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেই এমন তৎপরতা চলছে৷
তবে বাম দলগুলো আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট-মহাজোটের বাইরে ‘বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প' জোট গঠনের আকাঙ্খার কথা জানিয়েছে৷
তাছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে এখনই তাঁরা চূড়ান্ত কিছু বলতে চাইছেন না৷ বিষয়টি নির্বাচনকালীন পরিস্থিতির ওপরই ছেড়ে দিচ্ছেন তাঁরা৷
আওয়ামী লীগেরসাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক এবং আগামী নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণের বিষয়ে ডয়চে ভেলের এক প্রশ্নের জবাবে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘‘আমরা তো আওয়ামী লীগের আদর্শের সঙ্গে একমত না৷ তাদের সঙ্গে জোটে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না৷ আওয়ামী লীগের জোট হতে পারে বিএনপির সঙ্গে, আমাদের সঙ্গে না৷ কারণ তাদের দুই দলের আদর্শই এক৷ সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর ওবায়দুল কাদের অফিসে এসেছেন৷ সাধারণ দু'চারটি কথা হয়েছে৷ আর অফিসে আসলেই কথা বলতে হবে এমনও না৷ নির্বাচনে যাব কি-না সেটা নির্ভর করবে তখনকার পরিস্থিতির উপর৷ আমরা দরকার মনে করলে নির্বাচনে যাব, আর মনে না করলে নির্বাচনে যাব না৷ সে কথা এখনই বলা যাবে না৷''
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে না আসা বিএনপি ও তার মিত্ররা আগামী নির্বাচন থেকেও দূরে থাকলে ঐ নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতার সংকটে পড়তে পারে৷ তাই যত বেশি সম্ভব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আনার প্রচেষ্টা আছে সরকারি নীতিনির্ধারকদের৷
সূত্রমতে, জোট সম্প্রসারণ উদ্যোগের অংশ হিসেবে সম্প্রতি ক্ষমতাসীন জোটটির সঙ্গে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল বিএনপিসহ নয়টি রাজনৈতিক দলের মতবিনিময় হয়েছে৷
১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমসহ জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ৯ দলের নেতাদের ঐ আলোচনা হয়৷ সভায় আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে হারাতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ‘কাজ করার আগ্রহ' ব্যক্ত করেন নাজমুল হুদা৷
গত বৃহস্পতিবার ওবায়দুল কাদের সচিবালয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও নাজমুল হুদার সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছেন৷
ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে নাজমুল হুদা বলেন, ‘‘এই ধরনের একটা আলোচনা তো হচ্ছেই৷ কিন্তু আমি তাদের বলেছি, আমরা ৩১ দলীয় জাতীয়তাবাদী জোট করতে চাই৷ স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিদের নিয়ে হবে এই জাতীয়তাবাদী জোট৷ এই জোটের পক্ষ থেকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ওবায়দুল কাদেরকে থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে৷ কারণ আমিও বিএনপির একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য৷
জাতীয়তাবাদী আদর্শ আমারও আছে৷ এটা কোনো একক দলের না৷ এই কারণেই আমরা জাতীয়তাবাদী জোট করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছি৷ আসলে সবকিছু নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রীর মতামতের উপর৷ খুব শিগগিরই তাঁর কাছে আমরা সিদ্ধান্ত পাব বলে আশা করছি৷''
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৪ দলে যুক্ত হতে আগ্রহী দলগুলো হলো- বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সম্মিলিত ইসলামিক জোট, কৃষক শ্রমিক পার্টি, একামত আন্দোলন, জাগো দল, ইসলামিক ফ্রন্ট এবং গণতান্ত্রিক জোট৷
তবে এসব দলের ১৪ দলীয় জোটে অন্তর্ভুক্তি প্রশ্নে আপত্তি রয়েছে ১৪ দলের বর্তমান শরিকদের৷ তাঁরা বলছেন, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ২৩ দফার ভিত্তিতে গঠিত ১৪ দলের নীতি-আদর্শের সঙ্গে এসব দলের কোনো মিল নেই৷ ফলে তাদের ১৪ দলে নেওয়া হলে জোটের আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে৷
নির্বাচন সামনে রেখে অন্য কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে আওয়ামী লীগের৷ সম্প্রতি ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছে এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের সঙ্গে৷
এরই ধারাবাহিকতায় জোটের পরিধি বাড়ানো প্রসঙ্গে মঙ্গলবার দলীয় ফোরামের বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, রাজনৈতিক জোট থাকলে তার পরিধি বাড়া স্বাভাবিক৷ আগামী নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে, ততই দৃশ্যপটের মধ্যে কিছু কিছু পরিবর্তন আসবে৷
জোটের ভাঙ্গা-গড়া নিয়ে আপনার কোনো মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷