জনগণের আকাঙ্খা পূরণে কতোটা সফল আওয়ামী লীগ?
২৩ জুন ২০১৮আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে৷ দেশের উন্নতি-অগ্রগতি অনেক কিছুই এসেছে এই দলের হাত ধরে৷ কিন্তু সহযোগী সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণ, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমানোসহ অনেক কিছুই এখনো না করতে পারার অভিযোগ আছে দলটির বিরুদ্ধে৷
শনিবার ছিল দলটির ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী৷ দিনটি উদযাপনে বিশেষ কর্মসূচি পালন করে দলটি৷ সকালে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়৷ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে নবনির্মিত প্রধান কার্যালয়ের সামনে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন ও নতুন কার্যালয় উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী ও দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা৷
সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়৷ সেখানে তৃণমূল থেকে আসা ৪ হাজার ১৩৪ জন নেতা অংশ নেন৷ নির্বাচন নিয়ে ওই বৈঠকে দিকনির্দেশনা দেন দলীয় সভাপতি৷
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জিতে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পথে মানুষের রায়কে গুরুত্ব দিতে দলের নেতাদের আহ্বান জানান শেখ হাসিনা৷ দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে, ত্যাগের মনোভাব নিয়ে কাজ করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি৷
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে৷ এরপর বিএনপির বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ৷ আগামী ডিসেম্বরেই অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে৷
বিশ্লেষকরা বলছেন, সমালোচনা সহ্য করতে না পারার ফলে দলটিতে গণতান্ত্রিক চর্চা কমে গেছে৷
ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘মুসলিম শব্দটি ফেলে দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ জনগণের দলে পরিণত হয়েছিল৷ দেশ স্বাধীন হয়েছে এই দলের হাত ধরেই৷ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনের কাজটিও শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের হাত ধরেই৷ দেশের জনগণের জন্য অনেক কিছুই করেছে দলটি৷''
তবে দলটি কিছু ক্ষেত্রে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি বলেও মনে করেন তিনি৷ তাঁর মতে, দলের নীতিনির্ধারকরা ‘‘পারেননি সহযোগী সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণ করতে৷ পারেননি ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমাতে৷ তবে দারিদ্রের হার কমেছে এটা স্বীকার করতেই হবে৷ আবার হেফাজতের মতো স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মানুষের আশা-আকাঙ্খাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে৷''
আওয়ামী লাগের রাজনীতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে যখন দলটি গড়ে ওঠে, তখন জনসম্পৃক্ততা ছিল৷ সোহরাওয়ার্দীর সময়ে কিছু সমস্যা ছিল৷ তবে শেখ সাহেব দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর রাতারাতি জনপ্রিয় দলে পরিণত হয় আওয়ামী লীগ৷ বিশেষ করে ৬ দফা দেয়ার পর থেকেই৷''
কিন্তু আত্মসমালোচনা না করা দলটির সবচেয়ে বড় ঘাটতি বলে মনে করেন তিনি৷ ‘‘দলের মধ্যে গণতন্ত্র বা আত্মসমালোচনা একেবারেই নেই৷ সবাই ভুল করে৷ তারাও যে ভুল করতে পারে সেটা তারা একেবারেই স্বীকার করে না৷ ১৯৯৬ সালে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যদি আমরা কোন ভুল করে থাকি তাহলে ক্ষমা করে দিয়েন৷ এরপর আর তাঁরা ভুলের কথা কখনও বলেনি৷ এই জায়গাটায় একটা বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে বলেই আমার মনে হয়৷''
তবে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাকে বড় ব্যর্থতা হিসেবে দেখতে নারাজ আওয়ামী লীগের মুখপাত্র ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘সারা বিশ্বেই যুব সমাজের মধ্যে একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে৷ উন্নত দেশগুলোতেও অস্থিরতা চলছে৷ সেখানে স্কুলে ঢুকে শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে৷ আমরা তো বিশ্বের বাইরে নয়৷ এ কারণে এখানে কিছু অস্থিরতা আছে৷ তবে সেটা বড় কিছু নয়৷''
স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে সখ্যতার অভিয়োগ বিষয়ে হানিফ বলেন, ‘‘এটা নিয়ে মানুষ ভুল বোঝে। ১৯৯৬ সালে যখন বিএনপি একতরফা নির্বাচন করল, তখন আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছে৷ সেই আন্দোলনে আওয়ামী লীগের পেছনে অনেকেই এসেছে৷ জামায়াতে ইসলামীও এসেছিল৷ আওয়ামী লীগ তো তাদের আনিনি৷ জোটও করেনি৷ এটা নিয়ে অপপ্রচার করা হয়, যেটা আদৌ সত্য নয়৷ আওয়ামী লীগ বিরোধীরাই এটা করে৷''