ঝড় শিকারী ফটোগ্রাফারের লেন্সে বিপর্যয়ের ছবি
১৭ আগস্ট ২০২০আলোকচিত্রী হিসেবে বাস্টিয়ান ভ্যার্নার বৃষ্টি হলে ও বাজ পড়লে বড়ই খুশি হন৷ ঝড়ঝঞ্ঝার মতো খারাপ আবহাওয়ায় তাঁর মন আনন্দে ভরে যায়৷ তিনি বলেন, ‘‘ঝড়-বৃষ্টির এই তাণ্ডবের প্রভাবের মধ্যে সৌন্দর্য ও শক্তি লুকিয়ে রয়েছে৷ এমন সময়ে আমার মধ্যে যেন শিকারি ও জুয়াড়ি জেগে ওঠে৷ সেই তাগিদ পূরণ করলেই আনন্দ পাই৷’’
২৭ বছর বয়সি এই ফটোগ্রাফার ক্যামেরাকে হাতিয়ার করে ঝড়ের পেছনে ধাওয়া করেন৷ আকাশজুড়ে বিদ্যুতের জাল কিংবা ভয়ংকর দেখতে ঝড়ের মেঘের মতো চোখ ধাঁধানো আবহাওয়াই তাঁর প্রিয় মোটিফ৷ ‘ঝড় শিকারি' নামের বইয়ে তিনি সেই সব ছবি প্রকাশ করেছেন৷
আবহাওয়া সম্পর্কে তথ্য ও পূর্বাভাষের ভিত্তিতে বাস্টিয়ান নিজের মোটিফের খোঁজ করেন৷ দুর্যোগের আশঙ্কা দেখলেই তিনি সে দিকে রওয়ানা হন৷ এমনই এক ‘শিকারের’ সময় বাস্টিয়ান বলেন, ‘‘আজকের দিনে আমরা সুন্দর এক ঝড়ের আশা করছি, যাকে ‘শেলফ ক্লাউড’ বলা হয়৷ সেগুলি শক্তিশালী মেঘ, যেগুলি ঝড়ের সামনে থেকে আমাদের দিকে ধাওয়া করে৷ ক্যামেরার সাহায্যে আমি সেই দৃশ্য ধরে ফেলতে পারি৷’’
আলোকচিত্রী হিসেবে বাস্টিয়ান ছবি এডিটিং-এরও শিক্ষার্থী৷ শিশু বয়সেও তিনি মেঘ, বিদ্যুৎ, বাজের প্রতি জাদুময় আকর্ষণ অনুভব করতেন৷ প্রতি বছর ছবির সন্ধানে তিনি হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দেন৷ জার্মানিতেই বেশি সময় কাটে৷ যেমন হাইডেলবার্গ শহরের কাছে ঝড় সৃষ্টির অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি৷
প্রায়ই তিনি আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার আকর্ষণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মিড ওয়েস্ট অঞ্চলে ছুটে যান৷ তাঁর ক্যামেরার লেন্সে একটি টরন্যাডো বা ঘুর্ণীঝড় ধরা পড়েছে৷
জার্মানিতে এমন দুর্যোগ অত্যন্ত বিরল৷ এক বিশেষ রাডার যন্ত্রের সাহায্যে বাস্টিয়ান দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার গতিপথ সম্পর্কে পূর্বাভাষ পান৷ এমন অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বাস্টিয়ান বলেন, ‘‘একটি ঝড় মূলত সোজা পথেই জার্মানির উপর দিয়ে চলে যায়৷ সেটির লক্ষ্যবস্তুর যাত্রাপথেই আমি রয়েছি৷ ঝড় শিকারি হিসেবে আমাকে নিজেকে বাঁচিয়ে সেটির একেবারে সামনে চলে যেতে হয়৷’’
কারণ এমন ঝড়ের ঠিক মাঝের অংশটি ধূসর ও বৃষ্টিভরা৷ ফলে ভালো ছবি তুলতে হলে ঝড়ের সীমানার ঠিক বাইরে থাকতে হয়৷ কিন্তু ঘটনাস্থলে বিদ্যুতের চমক ও মেঘ সত্যি নাটকীয় মোটিফ সৃষ্টি করতে পারবে কিনা, তা কখনো বলা যায় না৷
লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যে গাড়ি চালিয়ে বেশ কয়েক ঘণ্টা যাবার পর বাস্টিয়ান ছবি তোলার সেরা জায়গা খুঁজে পেলেন৷ তবে ভালো ছবি তোলার আশা কমে গেল৷ কারণ সেখানে ধূসর আকাশ ছাড়া কিছুই দেখা গেল না৷ বাস্টিয়ান বলেন, ‘‘মাথার উপর হালকা বৃষ্টিপাত হলে হয়তো ঝড়ের কিছুটা রূপ দেখা যাবে৷ এ ছাড়া ঝড় যেন বৃষ্টির মোড়কে ঢুকে গেছে৷ প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে মেঘের কোনো কাঠামো দেখা যাচ্ছে না৷’’
বাস্টিয়ান ভ্যার্নার এমন পরিস্থিতি সত্ত্বেও অপেক্ষা করতে চান৷ আবহাওয়া-আলোকচিত্রী হিসেবে ধৈর্য্য বড় সম্পদ৷ ঘন কালো মেঘের জন্য অপেক্ষা করতে করতে নতুন পরিকল্পনা মাথায় আসতেই পারে৷ বাস্টিয়ান বলেন, ‘‘আমার করণীয় কাজের তালিকায় হারিকেন ঝড়ের মধ্যে ঢোকার ইচ্ছে রয়েছে৷ ঝড়ের ‘আই’ বা চোখের মধ্যে থেকে বাইরে ২০ কিলোমিটার উঁচু মেঘের প্রাচীর দেখতে চাই৷ ঠিক যেন স্টেডিয়ামের মতো৷ আমার চারিদিক হারিকেন ঘিরে থাকবে, এমন অভিজ্ঞতার স্বাদ পেতে চাই৷’’
এ যাত্রায় ঝড়ের জন্য অপেক্ষা করে কোনো লাভ হলো না৷ এমন অভিজ্ঞতাও আবহাওয়া-আলোকচিত্রীর জীবনে বিরল নয়৷ এ ক্ষেত্রে কোনো গ্যারেন্টি নেই৷ কিন্তু সবকিছু ঠিক থাকলে অসাধারণ শক্তিশালী ও সুন্দর ছবি তোলা যায়৷
ক্রিস্টিয়ান ভাইবেসান/এসবি
৪ মে’র ছবিঘরটি দেখুন...