পরিত্যক্ত ধ্বংসস্তূপের ছবি তোলেন যিনি
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০আদিকাল ধরে ধ্বংসস্তূপ ও পরিত্যক্ত জায়গা মানুষকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করে৷ এমন সব জায়গা সেখানকার এককালের বাসিন্দা ও তাদের পরিণতি সম্পর্কে জল্পনাকল্পনা তরান্বিত করে৷ স্টেফান হেফেলে তাঁর বন্ধু ফেলিক্স রোসার-এর সঙ্গে এমন সব জায়গায় গিয়ে সেখানকার অতীত সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন৷ স্টেফান বলেন, ‘‘এখানে নিখুঁতভাবে দেখা যাচ্ছে, যে ছাদ ভেঙে পড়েছে, জানালাগুলি ভেঙে দেওয়া হয়েছে৷ দেওয়ালের প্লাস্টার ঝরে পড়ছে৷ সবকিছুই ভঙ্গুর৷ মোটিফ হিসেবে দারুণ৷''
এককালে সেখানে ছুটি কাটানোর কেন্দ্র ছিল৷ ১৯২০-র দশকে সেটি তৈরি হয়েছিল৷ এখনো যেন শিশুদের কলকাকলি শুনতে পাওয়া যায়৷ ১৯৭০-এর দশকের শেষ পর্যন্ত তারা সেখানে ছুটি কাটিয়েছে৷ নিজের সৃষ্টিকর্ম সম্পর্কে স্টেফান হেফেলে বলেন, ‘‘আমি আমার ছবির মধ্যে এমন জায়গা সম্পর্কে নিজের অনুভূতির প্রতিফলন ঘটাতে চাই৷ মনে ভয় আসে, গা শিরশির করে, বুক ধুকপুক করে, অ্যাড্রিনালিন চাগিয়ে ওঠে৷ আলো ও ছায়ার মাধ্যমে আমি ঠিক সেই অনুভূতি ফুটিয়ে তুলতে চাই৷ আমার তোলা ছবির মধ্যেই তা যেন টের পাওয়া যায়৷ সবকিছু স্পষ্ট দেখা গেলে চলবে না. নিসর্গের ছবির মতো এ ক্ষেত্রেও একটা আমেজ যেন থাকে৷''
স্টেফান পেশায় ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফার৷ সারা দুনিয়া চষে বেড়াচ্ছেন৷ কখনো অ্যামেরিকার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন, কখনো বা হাওয়াই দ্বীপের ঘন জঙ্গলের ছবি তোলেন তিনি৷ তাঁর অনেক সৃষ্টিকর্ম পুরস্কার পেয়েছে৷ বিশ্বের অন্যতম নেতৃস্থানীয় ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফার হিসেবে তাঁকে গণ্য করা হয়৷
শৈশব থেকেই পরিত্যক্ত বাড়িঘর তাঁকে আকর্ষণ করো৷ একটি বইয়ে তারই কিছু ঝলক দেখা যায়৷ এককালের সাজানো ভিলা, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বাংকার, আড়ালে চলে যাওয়া চ্যাপেল অথবা বহু দশক আগে বাতিল কোনো কারখানার ছবি সেই বইয়ের পাতায় শোভা পাচ্ছে৷
কৌতূহলি মানুষদের দূরে রাখতে অতীতের ছুটি কাটানোর কেন্দ্রের মতো পরিত্যক্ত জায়গার অবস্থান তিনি গোপন রাখেন৷ তাছাড়া এমন সব জায়গা সাধারণত ভঙ্গুর হওয়ার কারণে মানুষের জন্য বিপজ্জনক৷ সে সব জায়গায় পৌঁছানোও বেশ কঠিন কাজ৷ সে কারণে স্টেফান কখনো একা এমন সব জায়গায় যান না৷
তবে সঠিক মোটিফ খোঁজার কাজ মোটেই সহজ নয়৷ স্টেফান হেফেলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে স্যাটেলাইটের তোলা ছবি তন্নতন্ন করে খোঁজেন৷ এমনই একটি সম্ভাব্য গন্তব্য দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দেখা যাচ্ছে, জায়গাটি পরিত্যক্ত৷ এমনকি ছাদও অবশিষ্ট নেই৷ এমন জায়গার সন্ধান সহজেই পাওয়া যায়৷ কঠিন জায়গাগুলির হদিশ পেতে হলে প্রাসঙ্গিক ব্লগ পড়তে হয়৷ সেখানে ছাদ অক্ষত আছে, ভিতরে এখনো সবকিছু সুন্দর৷ নতুন করে কিছুই পাওয়ার সম্ভাবনা নেই৷ অনেক সময় পাশ দিয়ে যাবার সময় কাকতালীয়ভাবে এমন জায়গা চোখে পড়ে৷''
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যে সব বিস্মৃত জায়গা হারিয়ে যাচ্ছে, স্টেফান হেফেলে সেগুলি নথিভুক্ত করছেন৷ এভাবে তিনি পরিত্যক্ত জায়গাগুলিকে স্মৃতিসৌধ করে তুলছেন৷
ক্রিস্টিয়ান ভাইবেসান/এসবি