‘টাকায় ফেরানো যাবে না’
৪ মে ২০১৪পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টের পথে পর্বতারোহীদের ‘গাইড' হিসাবে কাজ করেন নরবু শেরপা৷ ‘ওয়াইল্ড ইয়াক' নামে একটি এজেন্সিও তিনি চালান, যারা হিমালয়ে বিভিন্ন অভিযানের ব্যবস্থা করে দেয়৷
এ পেশার ঝুঁকি এবং শেরপাদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন ডয়চে ভেলের সঙ্গে৷
ডয়চে ভেলে: কতদিন ধরে আপনি পর্বতারোহীদের গাইড হিসাবে কাজ করছেন?
২০০৪ সালে আমি কাজ শুরু করি এক বাবুর্চির সহকারী হিসাবে৷ প্রথমবারের মতো এভারেস্টে উঠেছিলাম ২০০৬ সালে৷ তারপর থেকে ছয়বার সেখানে গেছি৷
গত ১৮ এপ্রিল এভারেস্টের ঢালে তুষার ধসে যে শেরপারা নিহত হলেন, তাঁদের চিনতেন?
ওঁদের মধ্যে একজন তো আমার গাঁয়েরই ছেলে৷ আমরা ছিলাম ঘনিষ্ট বন্ধু৷ ওঁ নিয়মিত এভারেস্টে যেত৷ নেপালে শেরপাদের জাতীয় যে সংগঠন, তার সদস্য ছিল সে৷ ওই দলের আর যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের কয়েকজনের সঙ্গেও আমার বন্ধুত্ব ছিল৷ অন্তত পাঁচজনকে চিনতাম আমি৷
এভারেস্টের চূড়ায় উঠতে গিয়ে বহু পর্বতারোহীকে প্রাণ দিতে হয়েছে৷ শেরপা হিসাবে সেখানে যেতে আপনার কখনো ভয় করেছে?
দেখুন, আমরাও তো আর দশটা মানুষের মতো, আমাদেরও ভয় করে৷ টাকার জন্য আমাদের এ কাজ করতে হয়৷ রাত যখন দুটো, তখন আমাদের কাজ শুরু হয়৷ শেরপার কাজ পৃথিবীর সবচে কঠিন কাজগুলোর একটা৷ আমি একবার এভারেস্টে গেলে আমার পরিবারের এক বছরের খোরাকি জুটে যায়৷ নেপালে শেরপাদের জন্য এটাই একমাত্র কাজ – যাতে ভালো পয়সা পাওয়া যায়৷ আসলে এর বাইরে তেমন কোনো কাজের সুযোগও এখানে নেই৷
নেপাল সরকার নিহত শেরপাদের পরিবারকে যে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে তা যথেষ্ট বলে মনে করেন?
আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, আমাদের বৌদ্ধ সংস্কৃতিতে মৃতের সৎকারের কাজে মোটা টাকা খরচ হয়ে যায়৷ শুরুতে নিহত প্রত্যেক শেরপার পরিবারকে ৪০০ মার্কিন ডলার (২৯০ ইউরো) দেয়ার কথা বলা হচ্ছিল, যা রীতিমতো হাস্যকর৷ তবে এখন ১০ হাজার ডলার দেয়ার কথা বলছে৷ এটা হলে ভালো৷ এর বাইরে সরকার নিহত শেরপাদের সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ যোগানোর কথা ভাবছে৷
গত বছর এভারেস্টে চারজন এবং অন্য চূড়ায় আরো দু'জন শেরপার মৃত্যু হয়েছে৷ তখন এ নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি, এমনকি সরকারও না৷ এবার একসঙ্গে মারা গেল ১৬ জন৷ এখন আমাদের উচিত সরকারকে চাপ দেয়া, যাতে শেরপাদের দিকটাও দেখা হয়৷ যাঁরা চিরতরে হারিয়ে গেলেন – টাকা দিয়ে তো আর তাঁদের ফেরানো যাবে না৷
এবারের মৌসুমে এভারেস্টে সব অভিযান স্থগিত করা হয়েছে, অভিযাত্রীরা ফিরেও আসছে৷ এতে শেরপাদের আর্থিকভাবে সমস্যায় পড়তে হবে না?
বেইজ ক্যাম্প থেকে শেরপারা যখন সবাই কাঠমাণ্ডুতে ফিরবে, তখনই এটা পরিষ্কার করে নিতে হবে যে ট্যুর অপারেটররা পরিস্থিতির উন্নতির জন কী কী করবে৷ তাছাড়া সরকারও বলেছে, অভিযান থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার এবং ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার একজন শেরপার রয়েছে৷
অবশ্য শেরপাদের মধ্যে সবার অবস্থা একরকম নয়৷ অনেকের পরিবারের সব খরচ, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া – সব কিছু এই একটিমাত্র কাজের ওপর নির্ভরশীল৷ ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় – তাঁদের আবারো এভারেস্টে যেতে হবে৷
সাক্ষাৎকার: এস্থার ফেল্ডেন/জেকে
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ