টিউনিশিয়ায় প্রগতির পথ
২৯ নভেম্বর ২০১৭টিউনিসের শিল্প এলাকার প্রান্তে কয়েকটি সংস্থা আগামীর দিকে পা বাড়িয়েছে৷ টিউনিশিয়া সরকার গত দু'বছর ধরে বিশেষভাবে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিকে উৎসাহ দিচ্ছেন৷ অ্যাফ্রোলাইট কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠা মাত্র দেড় বছর আগে, কিন্তু ইতিমধ্যেই তা আরো বাড়ছে৷ আজ সেখানে কর্মীর সংখ্যা ৩০৷ এখানে এলইডি ল্যাম্প তৈরি হয়, যা প্রথাগত বৈদ্যুতিক বাতির চেয়ে কম বিদ্যুৎ খরচ করে৷
২৪ বছর বয়সি আমেনি বেন হাসান তাঁর বাবার কাছ থেকে কোম্পানির দায়িত্ব নিতে চলেছেন৷ হাসান বলেন, ‘‘সরকার তরুণ-তরুণীদের এখানে সক্রিয় হবার উৎসাহ দেন; নতুন প্রকল্প গড়ে তোলার জন্য ভর্তুকি পাওয়া যায়৷ আমিও তাই করি, সমবয়সিদের এই নতুন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করার উৎসাহ দিই৷''
টিউনিশিয়ায় বিদ্যুতের দাম বেশি, কেননা বিদেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে হয়, যেমন আলজেরিয়া থেকে৷ টিউনিশিয়ার ভারি শিল্প বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে থাকে৷ শিল্পসংস্থাগুলির জন্য বিদ্যুত খরচ কমানো অত্যন্ত জরুরি – যেমন এসএফবিটি কোম্পানি, যারা টিউনিশিয়ার বৃহত্তম ব্রুয়ারি৷ সংস্থাটি বিয়ার ও সফট ড্রিংকস প্রস্তুত করে থাকে৷ জার্মান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সমিতি জিআইজেড কোম্পানিটির উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছে৷ জিআইজেড-এর পরামর্শে সেখানে একটি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট বসানো হয়েছে৷
বিয়ার ব্রু করার সময় প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়, যা আগে অপচয় হত৷ আজ তা ব্যবহার করা হয়৷ এসএফবিটি-র মেইনটেন্যান্স ম্যানেজার খালেদ মাইজ জানালেন, ‘‘বর্জ্য গ্যাসে যে উত্তাপ থাকে, তা এই বয়লারে ব্যবহার করা হয়৷ এভাবে তাপ পুনরুদ্ধার করার মাধ্যমে ধূম্রপাতনের আগে বাতাসকে গরম করা সম্ভব হয়৷''
বাড়তি বিদ্যুৎ বেচা যায়
টিউনিস থেকে দু'ঘণ্টা দক্ষিণ-পূর্বে সোমোচার কারখানা, যা কিনা টিউনিশিয়ার বৃহত্তম চীনামাটির বাসন তৈরির কারখানা৷ বড় বড় চুল্লিগুলোতে ১০০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উত্তাপের প্রয়োজন পড়ে৷ প্রচুর খরচ সত্ত্বেও কোম্পানি একটি সিএইচপি প্ল্যান্ট বসিয়েছে, যা একই সঙ্গে তাপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করে৷ ৫০ লাখ ইউরো মূল্যের প্ল্যান্টটি থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়, তার উদ্বৃত্ত অংশটুকু সাধারণ পাওয়ার গ্রিডে দেওয়া যায়৷
রাজধানী টিউনিসের পূর্তশিল্পও বিদ্যুৎ খরচ কমাতে চায়৷ বাড়ি নির্মাণের মালমশলা সংক্রান্ত প্রযুক্তি কেন্দ্রে বেকার স্থপতি, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ও অন্যান্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়৷ সিটিএমসি-র কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা মুরিন বাহরি বললেন, ‘‘আমরা নতুন চাকুরি সৃষ্টি করতে চাই, বিশেষ করে সেই সব এলাকায়, যেখানে চাকরির অভাব৷ এর ফলে এলাকাগুলি নতুন প্রাণ পাবে ও সম্পূর্ণ নতুন ধরনের শিল্প গড়ে উঠবে৷''
সেই সাফল্যের একটি নিদর্শন হলেন ৩৫ বছর বয়সি মাব্রুক মাইসার৷ দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থার শিকার মাব্রুক এই প্রযুক্তি কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর নিজেই ব্যবসা শুরু করেছেন৷ ইতিমধ্যে মাব্রুকের কোম্পানিতে ৩৫ জন কাজ করেন৷ মাব্রুকের কোম্পানি বাড়ি তৈরির সময় দেয়ালের ইনসুলেশনের কাজ করেন৷
তরুণ ইঞ্জিনিয়ার আমেনি বেন হাসান খুব ভালোভাবে জানেন, তাঁর প্রজন্মে বেকারত্বের প্রকোপ ঠিক কতটা বিস্তৃত৷ টিউনিশিয়ার জনগণের অর্ধেকের বয়স ৩০-এর নীচে; আমেনির বহু সহপাঠী কোনো চাকরি খুঁজে পাননি৷ পরিবেশ প্রযুক্তি তাদের জন্য একটা বড় সুযোগ হতে পারে৷ নতুন পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি টিউনিশিয়ার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলতে পারে ও দেশের তরুণ সমাজকে নতুন পথ দেখাতে পারে৷
জুলিয়া হেনরিশমান/এসি