1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টেকসই চাষই বেঁচে থাকার চাবিকাঠি

২৯ আগস্ট ২০১৮

আফ্রিকার দেশ মালি-ও জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে৷ সেখানে জার্মানির সহায়তায় এক প্রকল্পের মাধ্যমে টেকসই কৃষিকাজ চালু করার প্রচেষ্টা চলছে৷ তবে সব মানুষকে তাতে শামিল করা মোটেই সহজ নয়৷

https://p.dw.com/p/33yIA
ছবি: Fatoumata Diabate/Oxfam

জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব

শুয়ানে কেইটা আশা ছেড়ে দিয়েছেন৷ কুয়ায় এখনো পানি আসেনি৷ একের পর এক আম গাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই৷ গোনিকোরো গ্রামে সর্বত্র শুকিয়ে যাওয়া গাছপালা আর ফেটে যাওয়া মাটি চোখে পড়ে৷ শুয়ানে বলেন, ‘‘কম বয়সে দেখেছি, মাটির নীচে পানির স্তর অনেক উঁচু ছিল৷ তখন কুয়া খোঁড়া সহজ ছিল৷ বেশি গভীরে খুঁড়তেই হতো না৷ এখন আমরা নারীরা আর কুয়া খুঁড়তেই পারি না৷ পানি চলে গেছে৷ আমি জানি, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এমনটা ঘটছে৷''

ডিয়ারা পরিবারও জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে৷ তাঁরা ভূট্টা চাষ করে৷ বেশ কঠিন কাজ বটে৷ পরিবারের সবাইকে হাত লাগাতে হয়৷ স্কুল ছুটি থাকায় শিশুদেরও কাজ করতে হচ্ছে৷ এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে বীজ পেয়েছে এই পরিবার৷ তাঁর কাছে দ্রুত ফলনশীল ভু্ট্টা ছিল৷ কিন্তু অনাবৃষ্টির ফলে খেত শুকিয়ে গেছে৷ তাঁদের খেতেও ভুট্টা গজাবে বলে মনে আশা জেগেছে৷ টিকে থাকতে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সবকিছু মানিয়ে নিতে হবে৷

জার্মানির সহায়তা

জার্মানির উন্নয়ন সাহায্য সংস্থা জিআইজেড ‘ফাসো কাবা' নামের বীজের পাইকারি বাজারে সঠিক পণ্য বিপণনের কাজে সহায়তা করছে৷ তারা বাজারের প্রধানকে সার্বিক পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি শুধু ভুট্টা ও চিরায়ত কৃষিপণ্যের উপর নির্ভরতা কমানোর উপদেশও দিচ্ছে৷ ‘ফাসো কাবা'-র কর্ণধার মাইমুনা সিদিবে বলেন, ‘‘আজকাল বেশি ফলনশীল বীজ বিক্রি করাই কঠিন হয়ে উঠেছে৷ সেগুলি আর চলছে না৷ আমরা এখন এক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সঙ্গে কাজ করছি৷ তারা এমন বীজ সৃষ্টি করেছে, যেগুলি অতি কম সময়ে ফল দেয়৷ আড়াই-তিন মাসের মধ্যে৷ কিন্তু এত দ্রুত ফলন হলে আয়ও কমে যায়৷''

কোলোকানি-তে সকাল সাড়ে সাতটায় আদামা তিয়েকুরা সামাকি তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে সেবেকোরো উন-এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হচ্ছেন৷ সেখানে পাসিন্দা নামের এনজিও-র কর্মীদের জন্য বিশাল কেন্দ্র রয়েছে৷ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাঁরা আবার এসেছেন৷

নারীদের উদ্যোগ

মাস ছয়েক আগে সেই এনজিও সেখানে গ্রামের নারীদের জন্য শাকসবজির এক বাগান তৈরি করেছে৷ এখন তার অবস্থা পরিদর্শন করার পালা৷ নারীরা নিজেরাই পচা গাছপালা ও ভেড়ার মল মিশিয়ে অরগ্যানিক সার তৈরি করেন৷ ড্রিপ ইরিগেশনের কল্যাণে বছরের দ্বিতীয় ফসল এসেছে৷ এনজিও সেই প্রণালী গড়ে দিয়েছে৷ পাশের হাসপাতাল থেকে পানি পেতে বহুকাল ধরে নারীরা সংগ্রাম চালিয়েছেন৷

শাকসবজির বাগান তৈরি হবার পর থেকে নারীরা প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় মিলিত হন৷ ফলে তাঁদের মধ্যে সংহতিবোধ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে৷

সম্মিলিত উদ্যোগ

সামাকি এর মধ্যে গ্রামের পুরুষদের একটি মাঠে সমবেত করেছেন৷ ভূমিক্ষয় রুখতে তাঁদের বাস্তবসম্মত কিছু কৌশল শেখানো হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা এবার গাছগুলি ছেঁটে ফেলবো৷ সব সরিয়ে ফেলার পর একমাত্র উপর দিকে গাছের কাণ্ড অবশিষ্ট থাকে৷ তা সত্ত্বেও যথেষ্ট ছায়া রয়েছে, ফলমূল বেড়ে উঠবে৷ তাছাড়া গাছ আগের মতোই মাটিকে আর্দ্রতা জোগাবে৷''

খেতের উপর গাছপালা থাকলে বীজ বপনের কাজ কঠিন হলেও তার সুবিধা অনেক বেশি৷ গ্রামে জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব তীব্র হয়ে ওঠার পর থেকে প্রায় সবাই সেটা বুঝতে পেরেছে৷

রান্নার জন্য কাঠের অভাব নেই৷ মাসু ও গ্রামের অন্যান্য নারীরা শাকসবজির বাগানে উৎপাদিত পণ্য কাজে লাগিয়ে ভালোভাবে বেঁচে আছেন৷ খাদ্যে ভিটামিন বেড়েছে, হাতে আরও টাকা-পয়সা এসেছে৷ ফলে কিছু মানুষ এখনো কেন গাছ কেটে রান্নার কাজে লাগাচ্ছে, সেটা তাঁরা বুঝতে পারছেন না৷ নারী সমিতির সভাপতি মাসু ত্রাওরে বলেন, ‘‘আমরা মানুষজনের সঙ্গে অনেক কথা বলেছি৷ আমার মতে, গাছ কাটতে গিয়ে ধরা পড়লে অবশ্যই জরিমানা আদায় করা উচিত৷ রান্নার জন্য অবশ্যই কাঠ চাই বটে, কিন্তু তার জন্য কয়েকটা ডালই যথেষ্ট৷''

এনজিও-র প্রতিনিধি সামাকি-ও ভবিষ্যতে নারীদের গাছে হাত না দিতে উদ্বুদ্ধ করতে চান৷ কিন্তু গ্রামে সবাই সহযোগিতা করছে না৷ কয়েক পা দূরেই কাঠের বড় স্তূপ দেখা যাচ্ছে৷ সামাকি ও মাসু-কে আরও সময় নিয়ে মানুষজনকে বোঝাতে হবে৷

গেয়ারলিন্ড ফলমার/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান