টেস্ট ক্রিকেটে সফল হওয়াটা কোনো দেশেরই সহজ হয়নি
২২ নভেম্বর ২০১৯ডয়চে ভেলে : টেস্ট ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্জন কতটুকু?
মাহবুব আনাম : এখন পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে যা অর্জন, তা বাংলাদেশের মাটিতেই৷ পাশাপাশি ওয়েস্টইন্ডিজে আমরা কিছুটা ভালো করেছি৷ এছাড়া অন্য জায়গায় আমাদের অবস্থান সঠিক নয়৷ এখন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চালু হওয়াতে আমাদের অনেক বেশি টেস্ট খেলতে হবে৷ আমরা সেদিকেই নজর দিচ্ছি৷
বোর্ড পরিচালক হিসেবে আপনি কি এতে সন্তুষ্ট?
আপনি যদি শুধু ইন্ডিয়া সিরিজটা ভেবে বলে থাকেন তাহলে টি-টোয়েন্টিতে আমরা ভালো করেছি৷ আশার একটা জায়গাও তৈরি হয়েছিল৷ তবে প্রথম টেস্টে আমরা আশা অনুযায়ী খেলতে পারিনি৷ সেখানে ঘাটতি রয়েছে৷ আপনারা জানেন, আমাদের প্রতিষ্ঠিত দুই জন প্লেয়ার দলে নেই৷ একজন তামিম ইকবাল এবং অন্যজন সাকিব আল হাসান৷ সাকিব তো সাসপেন্ড আছে৷ যদিও এটা আমাদের ইয়াং প্লেয়ারদের জন্য অপরচুনিটি৷ তারা নিশ্চয় সেটা কাজে লাগাবে৷ তারপরও বলবো হতাশ হওয়ার কিছু নেই৷ পরবর্তী ম্যাচে আমরা ভালো করার ইচ্ছা রাখি৷ প্রথম ম্যাচটা যদি দেখেন, যে ডাবল সেঞ্চুরি করেছে তার ৩০ রানে আমরা একটা ক্যাচ ফেলে দিয়েছি৷ সেখানে আমাদের ঘাটতি আছে৷
২০০০ সালে টেস্ট শুরু করার পর থেকে ১৯ বছরেও আমরা কেন বেশি এগোতে পারিনি?
টেস্ট ক্রিকেটে সফল হওয়াটা কিন্তু কোনো দেশেরই সহজ হয়নি৷ আপনি যদি দেখেন টেস্ট শুরুর করার পর ৪৫ বছর পর নিউজিল্যান্ড প্রথম জয় পেয়েছে, ভারত ২৬ বছর পর প্রথম জয় পেয়েছে৷ সেক্ষেত্রে কিন্তু আমরা এই সময়ে অষ্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডের মতো পরাশক্তিকে হারিয়েছি৷ সেই জায়গাতে আমি একেবারেই হতাশ বলব না৷ তবে আমাদের প্রতিষ্ঠিত হতে হলে কিছু জায়গাতে অবশ্যই উন্নতি করতে হবে৷ এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যদি টেস্ট জিততে হয় তাহলে শুধু স্পিন দিয়ে হবে না৷ ভালো পেস বোলার তৈরি করতে হবে৷
আমরা তো ওয়ানডেতে ভালো করছি, তাহলে টেস্টে দুর্বলতা কোথায়?
ওয়ানডে ৫০ ওভারের খেলা, এটা আমরা ভালোভাবেই রপ্ত করেছি৷ কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে বড় বিষয় ধৈর্য্য ধরে খেলাটা৷ টেস্ট আর ওয়ানডে দু'টি খেলার অ্যাপ্রোচে অনেক পার্থক্য রয়েছে৷ এই ঘাটতি মেটাতে আমরা আন্তর্জাতিক মানের উইকেট তৈরি করে খেলার চেষ্টা করছি৷
টেস্টে তো ব্যাটিং-বোলিং দুই জায়গাতেই আমরা ব্যর্থ হচ্ছি৷ এর কারণ কী?
দেখুন, এতদিন আমাদের একই টিম ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি আর টেস্ট খেলেছে৷ কিন্তু আপনি যদি বাইরের দেশ দেখেন, তাহলে দেখবেন, তারা টেস্টের জন্য আলাদা প্লেয়ার তৈরি করছে৷ আগে যেহেতু আমরা বেশি টেস্ট খেলতাম না, তাই আলাদা করে টিম করতে পারিনি৷ এখন কিন্তু আমরা অনূর্ধ-১৯ পর্যায়েও ওয়ানডে এবং টেস্ট আলাদাভাবে দেখছি৷
লম্বা সময় ধরে খেলা বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার তো দলে আছে৷ তাদের পারফরম্যান্সে কেন ধারাবাহিকতা নেই?
আপনি তো মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহর কথা বলছেন৷ এদের অ্যাভারেজ কিন্তু বড় প্লেয়ারদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়৷ এর বাইরে যদি টেস্ট স্পেশালিস্ট বলি, তাহলে বর্তমান ক্যাপ্টেন মুমিনুল হকের অ্যাভারেজও কিন্তু ভালো৷ কিন্তু সাদমানসহ এরকম আরো কিছু প্লেয়ার আমাদের তৈরি করতে হবে যারা শুধু টেস্ট ক্রিকেটই খেলবে৷ মানসিকভাবে তারা সেভাবেই প্রস্তুত হবে৷
এটা কি ক্রিকেটারদের মানিষকতার সমস্যা, নাকি অভিজ্ঞতার সমস্যা?
কিছুটা মানসিকতা, কিছুটা অভিজ্ঞতা৷ আন্ডার নাইনটিনে যারা চারদিনের ম্যাচ খেলছেন তাদের কিন্তু আমরা ওয়ানডে খেলাচ্ছি না৷ তাদের প্রস্তুতিটাই টেস্টের মতো করে নেওয়া হচ্ছে৷ আপনি যদি ভারতের কথা বলেন, দেখবেন ওদের জুনিয়রদের কিন্তু শট ভার্শনে খেলায় না৷ একটু সিনিয়র হলে তখন শট ভার্সনে খেলার সুযোগ দেয়৷ সেখানে এখনো যারা টেস্ট খেলছে, তারা কিন্তু ওয়ানডে খেলে না৷ ফাস্ট বোলারদেরও কিন্তু একটা পার্থক্য রয়েছে৷ শুধু ভারত না, অষ্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডেও একই ঘটনা৷ আমাদের এখানেও এই পরিবর্তনটা না আনতে পারলে ফাইট করাটা কঠিন হবে৷
আমাদের বোর্ড টেস্টকে কতটুকু গুরুত্ব দিচ্ছে? আর টেস্ট নিয়ে কি আপনাদের বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে?
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে এখন আমাদের অনেক টেস্ট খেলা থাকবে৷ এ কারণে আমরা জুনিয়রদের লংগার ভার্শনে খেলাচ্ছি, সেভাবেই তাদের তৈরি করছি৷
দিবা-রাত্রির টেস্ট, তার ওপর আবার গোলাপি বলে৷ এই টেস্টে দলের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?
গোলাপি বলে খেলা দুই দলের জন্যই নতুন অভিজ্ঞতা৷ যেহেতু সবকিছুই নতুন, তাই আমাদের দেখতে হবে৷ আমি চাইব তারা যেন ম্যাচিউরডলি খেলে৷ সেটাই তাদের কাছে আমার প্রত্যাশা৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷