1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ট্যানারির জন্য দূষিত হচ্ছে পরিবেশ

সমীর কুমার দে, ঢাকা১১ মে ২০১৬

রাজধানীর হাজারিবাগের ট্যানারির কারণে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, যার অর্থমূল্য হাজার হাজার কোটি টাকা৷ ট্যানারির কারণে বুড়িগঙ্গা নদী ধ্বংস হয়ে গেছে৷ সেখানে মাছ হয় না৷ এমন সব বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় যাচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য ভয়ংকর৷

https://p.dw.com/p/1IkR6
হাজারিবাগের ট্যানারি
ছবি: DW

‘‘আগে যদিও বা সম্ভব ছিল, এখন আর হাজারিবাগে ট্যানারি রেখে বুড়িগঙ্গাকে বা পরিবেশ বাঁচানো সম্ভব নয়৷'' ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে এ কথাগুলো বলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বা বাপা-র সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন৷

তিনি বলেন, ‘‘ট্যানারি সরানোর জন্য সরকারও প্রস্তুত নয়৷ সরকার শ্রমিকদের চলে যেতে বলছে, কিন্তু হেমায়েতপুরের ঐ জায়গাটা তো তৈরি করে দিতে হবে৷ না হলে তাঁরা গিয়ে করবেটা কী? এই শিল্পের সঙ্গে ৩০ হাজার শ্রমিক জড়িত৷ তাঁদেরও থাকার ব্যবস্থা করতে হবে৷ তাঁদের পরিবার-পরিজন নিয়ে তাঁরা কী করবে? সন্তানদের কোথায় পড়াবে সে ব্যবস্থাও তো করতে লাগবে৷''

ডয়চে ভেলে: হাজারিবাগে ট্যানারির কারণে যে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে সেই সম্পর্কে বলুন...৷

ডা. আব্দুল মতিন: ট্যানারি তো আসলে ‘লেদার প্রসেসিং' কারখানা৷ আর লেদার প্রসেসিং-এ যে কেমিক্যালগুলো ব্যবহার করা হয়, তা পানি ও মাটির জন্য খুবই ক্ষতিকর৷ প্রাণী বা মানুষের জন্য তো বটেই৷ পৃথিবীতে বিদ্যমান যেসব ক্ষতিকর কেমিক্যাল আছে তার সবই এর মধ্যে আছে৷ এমন আজে-বাজে কেমিক্যাল আছে, যা জনস্বার্থের জন্য খুবই ক্ষতিকর৷ পরিবেশের জন্যও অত্যন্ত ক্ষতিকর৷ হাজারিবাগে দু'শর মতো ট্যানারি আছে৷ এগুলির বর্জ্য সব বুড়িগঙ্গায় যাচ্ছে৷ ২০০৮ সালের একটা গবেষণা আছে, যাতে দেখা গেছে যে, ট্যানারির বর্জ্য পানি, মাটি ও পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর৷ অর্থাৎ হাজারিবাগের এই ট্যানারি থেকে জনগণ দূষিত হচ্ছে, দূষণ হচ্ছে মাটি, পানি, বাতাসও৷

ড. আব্দুল মতিন

বাপা-র সর্বশেষ ২০১৩ সালের একটা হিসেবে দেখা গেছে, ট্যানারির কারণে পরিবেশের ক্ষতি ৪০০ কোটি টাকা৷ এটা একটু ব্যাখ্যা করবেন?

ক্ষতিকে এখানে নানাভাবে ধরা হয়েছে৷ ট্যানারির কারণে নদী বা নদীগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ এই ক্ষতির পরিমাণ হিসেব করাও কঠিন৷ আমার যতদূর মনে পড়ে, আমরা এটাকে ‘গ্রসলি' ধরেছিলাম৷ এই ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি খুব গুরুত্বপূর্ণ না৷ তবে এটা ‘লং টার্মে' নদীকে ধ্বংস করে দিচ্ছে৷ সেটা ধরলে এই ক্ষতির পরিমাণ হাজার হাজার কোটি টাকা৷ এই ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি ধরা হয়েছিল ইমিডিয়েটলি যে ক্ষতিটা হচ্ছে, যেমন ধরুন মাছ মারা যাচ্ছে, মাটি ‘পলিউটেড' হচ্ছে, ফসল নষ্ট হচ্ছে, পানি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ তাই এই এলাকায় পানি কিন্তু কিনে খেতে হচ্ছে৷ তাছাড়া যে বিষাক্ত কেমিক্যাল নদীতে যাচ্ছে, সেটা আবার মানুষের শরীরেও আসছে৷ এতে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায় তাঁরা কাজ করতে পারছেন না৷ শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে৷ আসলে কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ আরো অনেক বেশি৷ আমরা যেটা বলেছিলাম সেটা শুধুমাত্র একটা ‘বেসিক' ক্ষতির পরিমাণ৷

ট্যানারি সরানোর জন্য বাপা অনেকদিন ধরে আন্দোলন করছে, কিন্তু কাজ হচ্ছে না কেন?

কাজ যে হচ্ছে না, এটা ঠিক৷ তবে এর জন্য সরাসরি সরকারের কথা বলব না৷ আসলে এর নানা দিক আছে৷ ২০০৩ সালে ত্রিপাক্ষিক একটা চুক্তি হয়েছিল৷ সে অনুযায়ী, সরকারের যে দায়িত্ব ছিল সেটা তারা পালন করেনি৷ ওদের সঙ্গে টাকা-পয়সার একটা হিসেব নিয়ে ঘাপলা আছে৷ আগে ওরা বলেছিল সাড়ে ৭শ' কোটি টাকা লাগবে৷ এখন বলছে, ওদের ৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হবে৷ ওরা সরকারের কাছে এই টাকাটা চায়৷ সরকার ওদের টাকাও দিতে পারেনি, রাজিও করাতে পারেনি৷ তাই এটা ঝুলে আছে বহুদিন৷ আমি বলবো, এখানে সরকারের একটা ব্যর্থতা আছে৷ গত ১৩ বছরে যে সরকারই ক্ষমতায় ছিল, তারা দক্ষতার সঙ্গে এই সমস্যাটাকে ‘হ্যান্ডেল' করতে পারিনি৷ ফলে ওরা একটা সুযোগ পেয়ে গেছে৷ ওদের ক্ষতিটাকে যুক্তিসংগতভাবে বিবেচনায় নিয়ে সরকার যদি ঐ অর্থটা ‘পে' করে দিত, তাহলে তাদের বলার কিছু ছিল না৷ তাছাড়া কারখানা স্থানান্তরের জন্য হেমায়েতপুরের জায়গাটাও সরকার তৈরি করে দিতে পারিনি৷ আমরা একটা অনুষ্ঠান করে দেখেছি যে, সরকার আসলে প্রস্তুত নয়৷ এখন শ্রমিকরা ওখানে গেলেও কিছু করতে পারবে না৷ আবার দেখুন, মালিকপক্ষ কিন্তু জমিটা ঠিকই নিয়ে নিয়েছে৷ যত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, সেটা কিন্তু তাঁরা নিয়ে নিচ্ছেন৷ ২০০ কারখানার সঙ্গে ৩০ হাজার শ্রমিক জড়িত৷ ৩০ হাজার শ্রমিক যে ওখানে যাবে, তাঁদের থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই৷ ওরা ওখানে গিয়ে ভাড়া থাকবে কোথায়? সন্তানদের পড়াবে কোথায়? কোনো ব্যবস্থাই যে সেখানে নেই৷

বিশ্বের আর কোথাও কি ঢাকার হাজারিবাগের ট্যানারির মতো শিল্প কারখানা আছে?

আমার জানামতে নেই৷ তবে কলকারখানা তো সব শহরেই আছে৷ আগে যেগুলো হয়েছে, সেগুলো এখন স্থানান্তর করা হচ্ছে৷ নিশ্চিত করা হচ্ছে ‘এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট' বা ইটিপি৷ এখন ট্যানারিটা হেমায়েতপুরে চলে গেলেও, সেখানে যদি ইটিপি লাগানো না হয়, তবে ঐ এলাকার বংশী বা ধলেশ্বরী নদীও দূষিত হবে৷ আর সেটা হলে, সেই পানি আবারো ঘুরে-ফিরে বুড়িগঙ্গায় চলে আসবে৷ তাই সরকার যদি ‘হাইটেক' লোকজন ডেকে এনে এখানেই ইটিপির ব্যাবস্থা করতে পারতো, তাহলে হাজারিবাগে থাকলেও কোনো সমস্যা হতো না৷ এখন অবশ্য নদী সংকুচিত হয়ে গেছে৷ তাই এটা আর সম্ভব নয়৷ তার সঙ্গে সঙ্গে এটা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি করছে৷

তার মানে ট্যানারি হাজারিবাগে রেখে পরিবেশের ক্ষতি না করেই বুড়িগঙ্গাকে বাঁচানো যেত?

অবশ্যই যেত৷ যদি ভালো ইটিপি লাগানো যেত, তবে বর্জ্যগুলো তো আর বুড়িগঙ্গায় যেত না৷ সরকার বলছে, হাজারিবাগের ট্যানারিগুলো যে লোকেশনে বা যেভাবে গড়ে উঠেছে, তাতে ‘সেন্ট্রাল ইটিপি' লাগানো সম্ভব নয়৷ অবশ্য ‘সিঙ্গেল ইটিপি' লাগানো যেত৷ কিন্তু সেটা অত্যন্ত খরচসাপেক্ষ৷ কারখানার মালিকদের পক্ষে এটা ‘এফোর্ড' করা সম্ভব নয়৷ সাভারে যে যাচ্ছে, সেখানে কিন্তু চারটি ইটিপি লাগানো হচ্ছে৷ ২০০টি কারখানা এই চারটি ইটিপির মধ্যে থাকবে৷

তাহলে এখন আমাদের কী করা উচিত?

এখন সরকারের উচিত তার দায়িত্ব পালন করা৷ কারণ তারা প্রতীজ্ঞাবদ্ধ৷ ২০০৩ সালে সরকার চুক্তি করে৷ এরপর সরকার যখন চুক্তি ভঙ্গ করে তখন জনগণের পক্ষে চুক্তি মানার কোনো বাধ্যবাধকতা থাকে না৷ আসলে সরকার বলে যে তারা প্রস্তুত৷ কিন্তু তারা তো প্রস্তুত নয়৷ এখন সরকারের উচিত দক্ষতার সঙ্গে দ্রুত ঐ জায়গাটা তৈরি করা এবং মালিকদের ওখানে যেতে বাধ্য করা৷ দু'টোই দরকার৷ তাই সরকারকেও প্রস্তুত হতে হবে আর ওদেরকেও চাপ দিতে হবে৷

ডা. আব্দুল মতিনের সাক্ষাৎকারটি আপনার কেমন লাগলো? জানান আমাদের, লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য