ট্রেনে কাটা পড়লেন ঘুমে আচ্ছন্ন পরিযায়ী শ্রমিকরা
৮ মে ২০২০প্রায় ৪৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে তাঁরা রেল লাইনে একটু বিশ্রাম নিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা এতটাই ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলেন যে, মালগাড়ি আসার শব্দও তাঁদের জাগাতে পারেনি। কালঘুমেই মালগাড়ির চাকার তলায় পিষ্ট হয়ে ১৬ জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। পাঁচ জন গুরুতর আহত। মালগাড়িটি খালি ছিলো। রেলের তরফে জানানো হয়েছে, মালগাড়ির চালক শেষ সময়ে ট্রেন থামানোর চেষ্টা করেও পারেননি।
এই শ্রমিকরা সকলেই মধ্যপ্রদেশের। তাঁরা জালনার কারখানায় কাজ করতেন। জালনা থেকে ১৭০ কিলোমিটার দূরে ভুসাওয়াল যাচ্ছিলেন, যাতে তাঁরা শ্রমিক এক্সপ্রেস ধরে নিজেদের রাজ্যে ও গ্রামে ফিরতে পারেন। রেল মন্ত্রক অবশেষে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য শ্রমিক এক্সপ্রেস চালাতে শুরু করেছে ঠিকই, তবে সেই ট্রেনে করে নিজের রাজ্যে ফেরাটাও সহজ হচ্ছে না। বিশেষ করে মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে, যেখানে করোনা এখনও নিয়ন্ত্রণে না আসায় অধিকাংশ জায়গায় বাস, গাড়ি চলছে না। এই ট্রেনগুলি চালানো হচ্ছে নির্দিষ্ট এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনের মধ্যে। যেমন ধরা যাক, ভুসাওয়াল থেকে ট্রেন ছেড়ে সোজা ভোপাল যাবে। পথে কোথাও তা থামবে না। যে পরিযায়ী শ্রমিকরা ভুসাওয়াল থাকেন, তাঁদের অসুবিধা হচ্ছে না। কিন্তু যাঁরা দূরে থাকেন, তাঁদের অবস্থা শোচনীয় হচ্ছে। যেমন হয়েছে এই শ্রমিকদের ক্ষেত্রে। এই দুর্ঘটনায় প্রবল ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি রেলমন্ত্রীকে ফোন করে তাঁর ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গেও শ্রমিক এক্সপ্রেস চালানো নিয়ে বিতর্কশুরু হয়েছে। লোকসভার কংগ্রেসের নেতা এবং বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে পশ্চিমবঙ্গ মাত্র দুইটি ট্রেন চেয়েছে। তিনি রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে কথা বলেছেন। রেলমন্ত্রী তাঁকে জানিয়েছেন, রাজ্যের চাহিদা মতো একটি ট্রেন রাজস্থান থেকে রাজ্যে পৌঁছে গিয়েছে। অন্যটি এর্নাকুলাম থেকে বহরমপুরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে দিয়েছে। এ ছাড়া আর কোনও ট্রেন রাজ্য সরকার চায়নি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও ফোনে যোগাযোগ করেছিলেন অধীর। তিনিও জানিয়ে দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ট্রেন না চাইলে কেন্দ্রের কিছু করার নেই। কংগ্রেস নেতার দাবি, বেঙ্গালুরুতে ঘরে ফেরার দাবিতে পরিযায়ী শ্রমিক, রোগী, তাঁদের আত্মীয় এবং ছাত্ররা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তাঁদের আনা হচ্ছে না। অন্য বহু জায়গায় রাজ্যের শ্রমিকরা আটকে আছেন। তাঁদেরও আনার ব্যবস্থা করা হয়নি।
পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরা নিয়ে এই বিতর্কের মাঝখানেই বিদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের দেশে ফেরা শুরু হয়েছে। তাঁদের বিশেষ বিমানে করে ফেরানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই দিল্লি ও কেরালায় বিমান নেমেছে। ভারত থেকেও আটকে পড়া বিদেশিদের ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাঁরাও নিজেদের দেশে ফিরতে শুরু করেছেন।
এর পাশাপাশি দেশের করোনা পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। মৃত্যুসংখ্যা বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গিয়েছেন ১০৩ জন। এতদিন মৃতের সংখ্যা ৬০ থেকে ৮০র মধ্যে ঘোরাফেরা করছিলো। এ বার তা একশ ছাড়ালো। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার ৩৮০ জন। দুই মহানগর দিল্লি ও মুম্বইতে করোনার অবস্থা সব চেয়ে খারাপ। দুই শহরেই আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মুম্বইয়ের আর্থার রোড জেলে করোনা ঢুকে পড়েছে। জেলের একশ জন বন্দি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গুজরাটের অবস্থাও খারাপ। সেখানে একটি বড় ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি বন্ধ করে দিতে হয়েছে। কারণ, কারখানার ২৪ জন কর্মীর করোনা ধরা পড়েছে। আমদাবাদে কার্ফু ঘোষণা করা হয়েছে। ত্রিপুরায় ২৪ জন বিএসএফ জওয়ান করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)