জ্যাম এড়াতে জিপিএস
৪ মার্চ ২০১৫যানজট এড়ানোর জন্য জিপিএস? প্রত্যেক গাড়িচালকই বিপদটা চেনেন: রাস্তায় জ্যাম৷ আবহাওয়া ভালো থাক আর খারাপ থাক: যানজট৷ জিপিএস-এ চলতি যানজটের খবর রেখেও লাভ নেই৷ বরং সকলের স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশন সিস্টেম থাকার ফলেই আরো যানজট বাড়ে৷
হ্যানোভার-এর গ্রাফমাস্টার্স কোম্পানির ক্রিস্টিয়ান ব্র্যুগেমান বলেন: ‘‘তার কারণ হলো, ক্রমেই আরো বেশি গাড়ির জিপিএস তথাকথিত লাইভ ট্র্যফিক ডাটা-র সঙ্গে যুক্ত৷ কাজেই প্রত্যেক গাড়ি হালের যানজটগুলোর খবর পায় এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয় – দুঃখের বিষয়, সব জিপিএস একই ব্যবস্থা নেয়: অর্থাৎ যানজট এড়ানোর জন্য যদি কোনো পাল্টা পথ থাকে, তাহলে জিপিএস যুক্ত সব গাড়িই সেই পাল্টা পথের খবর পায়৷ সকলে একই ডিটুর নেওয়ার ফলে সেখানে পরবর্তী যানজটটির সৃষ্টি হয়৷''
যানজট এড়ানোর পন্থা
সমাধান হলো এমন একটি প্রণালী, যা সব রাস্তার যানচলাচলের খবর রাখে এবং প্রতিটি গাড়িকে তার নিজস্ব ‘ডি-টুর' ও বিকল্প রুট বাতলে দিতে পারে৷ এর ফলে যানজট আদৌ সৃষ্টি হতে পারবে না৷ ব্র্যুগেমান-এর ব্যাখ্যা:
‘‘বিশেষ ব্যাপারটা হলো: যে মুহূর্তে আমি একটা নতুন রুট পাচ্ছি, সেই মুহূর্তে আমি ঐ রুটের একটা রিজার্ভেশনও পাচ্ছি৷ অর্থাৎ আমার জন্য রুটের প্রতিটি রাস্তায় একটা বিশেষ টাইম স্লট রিজার্ভ করা থাকবে, যার ফলে কোনো রাস্তায় একসঙ্গে অনেক গাড়ি আসা রোখা যাবে৷''
প্রোগ্রামের সফ্টওয়্যার প্রতিটি রাস্তার দৈর্ঘ, চ্যানেলের সংখ্যা এবং স্পিড লিমিট অনুযায়ী গাড়ির সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেয়৷ কোনো জিপিএস-যুক্ত গাড়ির চালক যদি একটা রুট চান, তাহলে কম্পিউটার হিসেব করে দেখে যে, ঐ গাড়ি কখন ঐ রাস্তা দিয়ে যাবে৷ রাস্তাটির ‘ক্যাপাসিটি' যদি পূর্ণ হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে উত্তরোত্তর গাড়িগুলিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিকল্প রুটে পাঠানো হবে৷ ব্র্যুগেমান বোঝালেন:
‘‘এখানে বাঁ দিকে দেখা যাচ্ছে আমাদের গাড়ি এবং আমাদের জিপিএস নিয়ে সিমিউলেশন – ডানদিকে সাধারণ জিপিএস দিয়ে সিমিউলেশন৷ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে যে, আমাদের এখানে বিভিন্ন গাড়ির জন্য বিভিন্ন রুট রিজার্ভ করা হয়েছে৷ এর ফলে যানচলাচল গোটা অবকাঠামোয় বণ্টন করা হয়েছে, সারা শহরটাকেই ব্যবহার করা হচ্ছে৷ এর ফলে অনেক তাড়াতাড়ি লক্ষ্যে পৌঁছানো যাচ্ছে৷ ডানদিকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে, সব গাড়ি বড় রাস্তায় আসার চেষ্টা করছে, যার ফলে খুব তাড়াতাড়ি যানজট তৈরি হয়ে যাচ্ছে৷''
রাশ আওয়ার
প্রোগ্রামটি সক্রিয়ভাবে যানজট প্রতিরোধ করতে পারে৷ সেজন্য একটি বিশেষ এলাকায় গাড়িগুলোর গতি এবং অবস্থানের ‘রিয়েল টাইম' হিসেব নেওয়া হয়৷ কম্পিউটার সিমিউলেশনে দেখা যাচ্ছে, এর ফলে যানচলাচলের গতি বাড়ে ৩০ শতাংশ অবধি৷ রাশ আওয়ার, অর্থাৎ অফিস টাইমে অ্যাপটি ব্যবহার করলে লক্ষ্যে পৌঁছাতে মাত্র অর্ধেক সময় লাগে৷ যত বেশি গাড়িতে এই নতুন জিপিএস প্রণালী থাকবে, তত বেশি যানজট রোখা যাবে৷ ব্র্যুগেমান বোঝালেন:
‘‘গোটা ট্র্যাফিক যা-তে আরো ভালোভাবে চলে আর ট্র্যাফিক জ্যাম রোখা যায়, সেজন্য দশ শতাংশ গাড়িতে নতুন জিপিএস থাকা প্রয়োজন৷ এর ফলে শুধু ঐ দশ শতাংশ গাড়িচালকই নন, বরং সব গাড়িচালকদের সুবিধা হবে, কেননা কাউকেই যানজটের পাল্লায় পড়তে হবে না৷''
দশ শতাংশ গাড়িচালক যে কবে ক্রিস্টিয়ান ব্র্যুগেমান-এর অ্যাপ ব্যবহার করবেন, তা ঠিক নেই৷ কাজেই তাঁর প্ল্যান হলো: একটি পাবলিক ইন্টারফেস, যা-তে এই সফ্টওয়্যার বিনা জটিলতায় অন্যান্য কোম্পানির জিপিএস প্রণালীতে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া যায়৷ জার্মান ‘বশ' কোম্পানি ফোর্ড আর ওপেল গাড়ির জন্য জিপিএস তৈরি করে৷ ব্র্যুগেমান তাদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই সহযোগিতার ব্যবস্থা করেছেন৷ এর পরে তাঁর যে বাজারটির ওপর নজর, সেটি হলো মার্কিন মুলুকে৷
অ্যাপটি নিয়মিত ব্যবহার করলেই বোঝা যায় এর গুণাগুণ – জানালেন ব্র্যুগেমান: ‘‘প্রত্যেক দিন সকালে আমি যখন অফিস যাই, তখন আমার একই অভিজ্ঞতা হয়: জিপিএস আমাকে প্রতিদিন অন্য রুটে পাঠালেও, প্রতিদিন আমার প্রায় একই সময় লাগে৷ এর অর্থ হলো, সব গাড়ির জন্য পর্যাপ্ত জায়গা আছে, কিন্তু গাড়িগুলো সেই জায়গা ব্যবহার করে না৷ আমাদের প্রণালীতে গাড়িগুলো সত্যিই পুরোটা জায়গা নেবে এবং আরো তাড়াতাড়ি লক্ষ্যে পৌঁছাবে৷''
জিপিএস ব্যবহার করে শুধু সময়ই বাঁচে না, বাঁচে পেট্রোল, সেই সঙ্গে কমে কার্বন নির্গমন৷ কাজেই প্রত্যেক গাড়িচালককে তার নিজের যাত্রাপথ বাতলে দিয়ে জিপিএস পরিবেশকে বাঁচাতেও সাহায্য করে৷