চিকিৎসায় নতুন দিশা
২৮ জুন ২০১৩ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করে৷ মানুষের শরীরের ভিতরেও নিজস্ব ঘড়ি রয়েছে৷ এই ঘড়ি ঠিক সময় সিগন্যাল দেয় – বলে, কখন কী করতে হবে৷ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাও তার দখলে৷ দিনের বিশেষ বিশেষ সময়ে যে ওষুধ বেশি কাজ করে, তা নিয়ে আর কোনো সন্দেহ নেই৷
বিয়র্ন লেমার-এর নেতৃত্বে ‘ক্রোনো-ফার্মাকোলজি' নামের এক গোষ্ঠী দিনের বিভিন্ন সময়ে ওষুধের প্রভাব নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছেন৷ জার্মান এই গবেষক মনে করেন, ‘দিনে তিনবার অমুক ট্যাবলেট খাবেন' – এই নির্দেশ একেবারেই যথেষ্ট নয়৷
তাঁর গবেষণাগারে ইঁদুরদের বিশেষ খাঁচায় রাখা হয়, যেখানে রাত ও দিনের আলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়৷ নির্দিষ্ট সময়ে তাদের রক্তচাপের ওষুধ খাওয়ানো হয়৷ ইঁদুরদের গায়ে ছোট সেন্সর লাগানো হয়৷ ফলে গবেষকরা সর্বক্ষণ তাদের রক্ত চলাচলের উপর নজর রাখতে পারেন৷ ছোট পয়সার থেকে বেশি বড় নয় এই সেন্সর৷
হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রোনো ফার্মাকোলজিস্ট বিয়র্ন লেমার বলেন, ‘‘সবার আগে জানতে হবে যে রক্তচাপ কিন্তু দিনে ও রাতে এক থাকে না৷ সাধারণত রাতে রক্তচাপ কমে যায়৷ পরীক্ষার সময় আমরা ইঁদুরদের বিভিন্ন ভাগে ভাগ করেছি৷ প্রথম দলের রক্তচাপ স্বাভাবিক৷ আরেক দল অসুস্থ৷ বিশ্রাম নেবার সময় তাদের রক্তচাপ কমে না৷ বিশ্রাম শুরু হওয়ার সময় তাদের ওষুধ দিলে শুধু রক্তচাপই কমে না, আমরা চাই তাদের দিন ও রাত অনুযায়ী রক্তচাপের স্বাভাবিক হেরফের হোক৷''
মানুষের তুলনায় ইঁদুর অবশ্য রাতেই সক্রিয় হয়ে ওঠে৷ অর্থাৎ দিনের বেলায় তারা বিশ্রাম নেয়৷ বিশ্রাম শুরু হওয়ার ঠিক আগে রক্তচাপ কমানোর একটি ডোজ দিলেই পুরো সময় জুড়ে তার প্রভাব অটুট থাকে৷ মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায়, সন্ধ্যায় রক্তচাপ কমানোর ওষুধ খেলে তাতে অনেক ভালো কাজ হয়৷ ডা. লেমার বলেন, ‘‘বিষয়টির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে৷ কারণ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনির অনেক রোগীর রক্তচাপের ওঠানামা বেশ অস্বাভাবিক৷ অর্থাৎ রাতে সেই চাপ কমে না৷ তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতির আশঙ্কাও অত্যন্ত বেশি৷ স্ট্রোক, অ্যাঞ্জিনা পিকটোরিস, হার্ট অ্যাটাক, কিডনির সমস্যা, রক্ত চলাচলে গোলযোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়৷ এতে বোঝা যাচ্ছে, যে শুধু রক্তচাপ কমালেই চলবে না, সঠিক সময়ে ওষুধ দিয়ে তাদের দিন-রাতের স্বাভাবিক ছন্দ ফিরিয়ে আনতে হবে৷''
রোগীর পরিস্থিতি অনুযায়ী উপযুক্ত সময়ে ওষুধ দিতে পারলে ওষুধের অপচয় অনেক কমে যাবে বলে ধরে নেওয়া যায়৷ ক্রোনো-ফার্মাকোলজিস্টরা মনে করেন, এর ফলে অনেক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও কমে যাবে৷
এসবি/ডিজি