ডিজিটাল বাংলাদেশ, অ্যানালগ আরকাইভস!
৯ জুন ২০২০কভিড-নাইন্টিন অতীতের মহামারিও ফিরে দেখতে বাধ্য করছে৷ ১২০ বছর আগে কলকাতার প্লেগের পরিস্থিতিও সামনে আসছে৷ ১৮৯৮-১৮৯৯ সালের দিকে স্বামী বিবেকানন্দ ও তার শিষ্য ইউরোপীয় রমণী ভগিনী নিবেদিতা আক্রান্ত বস্তিবাসীর সেবায় কীভাবে কাজ করছেন, তা নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে কলকাতার পত্র-পত্রিকায়৷ তারা তথ্য বা ছবি পাচ্ছেন সেই সময়ের পত্রিকায় কিংবা বইয়ে৷
এদিকে ঢাকায় করোনাকালের তথ্য তুলে ধরতে প্রতিদিন অনলাইন সংবাদ সম্মেলন করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ মাল্টিমিডিয়ার যুগে শুধু কাগজের পত্রিকা নয়- তাদের দেয়া তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে অনলাইন সংবাদমাধ্যম, বেতার আর টিভিতে৷ তাই সংরক্ষণের বিষয় শুধু কাগজেই আর সীমিত নয়৷ লেখা আর আলোকচিত্র নথিবদ্ধ করে রেখে দিলেই আরকাইভসের কাজ শেষ হয়ে যাবে না৷ অডিও এবং ভিডিও সংরক্ষণ করতে হবে৷ মাল্টিমিডিয়ার জন্য ভার্চুয়াল পাটাতনও ব্যবহার করতে হবে৷ আর করোনা ভাইরাস এসে এর চাহিদা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে৷বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস অবশ্য আগে থেকেই ডিজিটাল আরকাইভস হওয়ার দিকে হেঁটেছে৷ তবে সংগ্রহের পাঁচ কোটি নথি থেকে এখন অবধি ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে সোয়া ১২ লাখের কিছু বেশি নথি- তাদের ওয়েবসাইটে তুলে ধরা হয়েছে এ তথ্য৷ তবে আগ্রহীরা এগুলো থেকে ঘরে বসে সেবা নিতে পারবে, এমন কোনো পথ বের করেনি তারা৷ তাই করোনাকালে জাতীয় আরকাইভস কার্যত কোনো সেবাই দিতে পারছে না৷
এ বিষয়ে বাংলাদেশ আরকাইভস ম্যানেজমেন্ট সোসাইটির (বারমস) সভাপতি ও জাতীয় আরকাইভসের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. শরীফ উদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগকে বলেন, ‘‘আমাদের যে ন্যাশনাল আরকাইভস, ডিজিটাল সার্ভিস দেওয়ার মতো ক্যাপাসিটি এখনো তাদের নাই৷ তবে তারা কিছু ম্যাটেরিয়াল ডিজিটালাইজড করেছে৷ এগুলোকে নানাভাবে তারা সাজানো-গোছানো করছে৷ কিছু কিছু সার্ভিস তারা অনলাইনেও দিতে পারে৷ যেহেতু এই প্রয়োজনীয়তা এর আগে কেউ অনুভব করেনি, কাজেই কেউ তেমনভাবে অগ্রসর হয়নি৷ এখন এটা খুবই জরুরী হয়ে যাবে৷ অনলাইন সেবা দেয়া একটা জাতীয় আরকাইভসের একটা বিশেষ দায়িত্ব হিসেবে উঠে আসবে৷ কারণ এই তথ্যগুলো দূর-দূরান্তের লোকজনও চাইবে৷ দেশ-বিদেশের লোক চাইবে৷’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষক আরো বলেন, ‘‘এখন যে করোনা ভাইরাস, যে প্যানডেমিক চলছে, মহামারি চলছে- এতে বাংলাদেশ একটা কেস স্টাডি হয়ে যাবে৷ বাংলাদেশ কীভাবে এটা ডিল করলো, কীভাবে কন্ট্রোলে আনলো বা আনতে পারলো না, কী ব্যবস্থা গ্রহণ করলো- এগুলো শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে থাকবে৷ আমাদের বাংলাদেশেও অনেকে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে৷ মানুষ ভালো হয়ে যাচ্ছে৷ অনেক মানুষ নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারছে৷ এটাও একটা শেখার বিষয়৷ কাজেই এইদিক থেকে একটা বড় রকমের সুযোগ এসে যাবে৷ এখন আমাদের বাংলাদেশে যা হচ্ছে এগুলো সংরক্ষণ করা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷’’
দুনিয়ার ই-নথি, সংরক্ষণে কী গতি?
করোনাকালে মানুষের সান্নিধ্য এড়াতে চাইছে মানুষ৷ কিন্তু জীবন-জীবিকার তাগিদ এড়ানোর উপায় নেই৷ তাই ভার্চুয়াল সেবা গতি পেয়েছে৷ বাংলাদেশের ব্যাংক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিচার- নানা খাতের কার্যক্রম অনলাইনে চলছে৷ সারা দুনিয়ার চিত্রই এখন এটা৷ বড়ছে ই-নথি৷ তাই ডিজিটাল সংরক্ষণের বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে৷ তা প্রতিফলিত হয়েছে প্রথমবারের মতো পালিত আন্তর্জাতিক আরকাইভস সপ্তাহের আয়োজনেও৷ ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন আরকাইভস (আইসিএ) ৯ জুন আন্তর্জাতিক আরকাইভস দিবসের বদলে ৮ জুন থেকে ১৪ জুন তথা সাত দিন ধরে নানা বিষয় নিয়ে কাজ করছে৷ এরমধ্যে ১০ জুন তাদের নির্ধারিত বিষয়- ‘ডিজিটাল সংরক্ষণ’৷ মাল্টিমিডিয়ার যুগে আরকাইভসও এভাবে বহুমুখী সংরক্ষণের দিকে যাবে, এটাই সময়ের প্রয়োজন৷ বাংলাদেশের বেসরকারিখাতে এ বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে, এটা মনে করছেন বারমস সভাপতি ড. শরীফ উদ্দিন আহমেদ৷ ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগকে তিনি বলছেন, ‘‘অডিও-ভিডিওগুলো সংরক্ষণ করার দায়িত্ব আছে অনেকেরই৷ কিন্তু একটা বিষয় বাংলাদেশের জন্য সুখবর৷ সেটি হচ্ছে- বাংলাদেশের এই সেক্টরটা কিন্তু প্রাইভেটলি অনেক ডেভেলপ করেছে৷ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে৷ যারা এইগুলো নিয়ে কাজ করছে৷ কিন্তু সরকারি পর্যায়ে বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে এগুলো আসেনি৷ এরা অনেকটা ডে-টু-ডে বেসিসে কাজ করে৷ কিন্তু আমাদের যে লং টার্ম বেসিসে কাজ করতে হবে, এগুলো প্রিজার্ব করতে হবে৷ আমাদের মেইন প্রব্লেম হচ্ছে- প্রিজার্ব করা এবং সার্ভিস দেয়া৷ এই দুটি ক্ষেত্রে আমাদেরকে কাজ করতে হবে৷ কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানকে এই দায়িত্ব দিতে হবে৷ ন্যাশনাল আরকাইভস তো অবশ্যই একটা প্রধান প্রতিষ্ঠান৷ এছাড়াও সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় আছে৷ সে মন্ত্রণালয়গুলোকে কাজ করতে পারে৷ স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করতে পারে৷ তথ্য মন্ত্রণালয় কাজ করতে পারে৷ এস্টেট ব্যাংক অব বাংলাদেশ তারা কাজকর্ম করতে পারে৷’’