ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্রয়োজন স্থিতিশীলতা
৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয়৷ তারপর ক্ষমতায় গিয়ে তারা কাজ শুরু করে৷ ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ করতে চায় দলটি৷
প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী যে উন্নয়ন ঘটে চলেছে আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়নে সেই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে৷ সরকার প্রযুক্তির সেই উন্নয়নের পথটি অনুসরণ করে কাজ করে যাচ্ছে৷ আর এর সুফল পাচ্ছেন নাগরিকরা৷ শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে মোবাইলে কিংবা ইন্টারনেটে পরীক্ষার ফল জানতে পারছে, কৃষকরা জমিতে থেকেই বিভিন্ন বাজারে পণ্যের দামের খবর পাচ্ছেন, তরুণরা দারুণ সব স্টার্টআপ গড়ে তুলছেন, সরকারি নানান সেবাও পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনে৷ মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থারও ব্যাপক প্রসার ঘটেছে৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজকাল ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় থাকা সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷ এসব উদ্যোগের কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিতও হয়েছে৷
যেখানে ঘাটতি, যা করতে হবে
প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন যেসব কাজ করা যাচ্ছে, সেগুলো যে একসময় করা সম্ভব হতে পারে, তেমনটি আগে ভাবেননি অনেকে৷ ফলে তাদের কাছে, সরকারের নেয়া এই উদ্যোগগুলো চমকপ্রদই বটে৷ এখনও আইটি পার্ক স্থাপন, নতুন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু, কয়েকশ বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার রপ্তানির মতো স্বপ্নের কথা শোনাচ্ছেন সরকারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা৷ কিন্তু ইতিমধ্যে চালু হওয়া সেবাগুলোর মান উন্নয়ন ও সুরক্ষিত করা নিয়ে তেমন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না৷ অথচ ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এই কাজটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ৷ অবশ্য সরকার যদি মনে করে, চমক দেখিয়ে ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণই আসল লক্ষ্য, তাহলে অন্য কথা৷ তবে স্বপ্ন বাস্তবায়নে আন্তরিক হলে সরকার নীচের প্রস্তাবগুলো ভেবে দেখতে পারে৷
- বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা চুরির ঘটনায় নিরাপত্তা ইস্যুটি এখনো আলোচনায়৷ ঐ ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে, দেশের ডিজিটাল ব্যবস্থার নিরাপত্তা কত দুর্বল৷ ভবিষ্যতে যেন এই ধরনের ঘটনা আর ঘটতে না পারে সেই উদ্যোগ নিতে হবে৷ এজন্য প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তির৷ এক্ষেত্রে শুধু কম্পিউটার চালাতে জানা লোক দিয়ে কাজ হবে না, দরকার পড়বে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয়টি বোঝে এমন জনশক্তির৷ সেজন্য এই বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে৷ প্রাথমিক পর্যায়ে বিদেশে থাকা বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশিদের পরামর্শ নিয়ে কাজ শুরু করা যেতে পারে৷
- ডিজিটাল ব্যবস্থায় নিরাপত্তাহীনতার আরেকটি ক্ষেত্র বিদেশি সফটওয়্যার ব্যবহার৷ দেশে সফটওয়্যার ডেভেলপ করার যোগ্য প্রতিষ্ঠান থাকলেও সরকারি, বেসরকারি বড় বড় প্রকল্পে এখনও বিদেশি সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রবণতা আছে৷ এক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে, প্রকল্পের কাজে বিদেশিদের সফটওয়্যার ব্যবহার করায় তাদের মাধ্যমে দেশের অনেক গোপন ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিদেশে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ তাই দেশি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রমান্বয়ে কাজ দেয়া শুরু করতে হবে৷ আর তাদের মান আরও উন্নয়নে কী কী করা যেতে পারে সে ব্যাপারে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সেসব সুযোগের ব্যবস্থা করতে হবে৷ আর নিতান্তই যদি বিদেশের সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হয়, তাহলে আইন করে ঐসব বিদেশি কোম্পানির বাংলাদেশ অংশের মালিকানার অন্তত ৫০ ভাগ বাংলাদেশি নাগরিকদের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে৷ এতে করে সফটওয়্যার নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়লে তাদের কাছ থেকে সমাধান পেতে সুবিধা হবে৷
- প্রতিবছর বেশ কয়েক হাজার শিক্ষার্থী কম্পিউটারে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে৷ স্কুল-কলেজ পর্যায়েও তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা এখন বাধ্যতামূলক৷ তবে এর মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষার্থী বেরিয়ে আসছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে৷ কারণ, এই বিষয়ে পড়ানোর মতো মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব আছে৷ এই সমস্যার সমাধানে বিসিএস-এ একটি আলাদা ক্যাডার সার্ভিস চালু করা যেতে পারে৷ তাহলে হয়ত যোগ্য ব্যক্তিরা শিক্ষক হতে কিংবা সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে আগ্রহী হবেন৷ বর্তমান অবস্থায় মেধাবীরা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন, কেননা, এখন পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে কম্পিউটার পেশাজীবী হিসেবে মেধাবীদের আকৃষ্ট হওয়ার মতো অবস্থা নেই৷
- সরকারের পক্ষ থেকে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন অনেক বলে প্রচার করা হয়৷ তবে এর মধ্যে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাই অনেক বেশি৷ অথচ ইন্টারনেট ব্যবহার করে সত্যিকারের কিছু করতে চাইলে প্রয়োজন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের৷ কিন্তু দেশে এখনও এই ইন্টারনেট ব্যবহার সুলভ নয়৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷