ডিজেল ফিল্টারের কেরামতি
৩১ মে ২০১৪‘স্মগ', মানে ধোঁয়াশা৷ এশিয়া মহাদেশে আজকাল তো লক্ষ লক্ষ মানুষ ধোঁয়াশা জনিত কারণে ও রোগে প্রাণ হারাচ্ছেন৷ কারখানার চিমনি থেকে বের হয় প্রধানত কালিঝুলি, নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং ধাতুকণিকা৷ শহরগুলিতে গাড়ি ও বাস, ট্রাক ইত্যাদি যানবাহন বায়ু দূষিত করে৷ বিশেষ করে ডিজেল গাড়ির ধোঁয়া থেকে যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কার্বন কণিকা নির্গত হয়, সেগুলি স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকর৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডাব্লিউএইচও-র বিচারে ডিজেল গাড়ির ধোঁয়া থেকে ক্যানসার হতে পারে, যেমন অ্যাসবেস্টস ও আর্সেনিক থেকে হয়ে থাকে৷
ডিজেল মোটর থেকে প্রধানত ঝুল ও কালির গুঁড়ো, সেই সঙ্গে নাইট্রোজেনের অক্সাইডগুলি নির্গত হয়৷ জার্মানি তথা ইইউ-তে বায়ুদূষণকারী পদার্থ নির্গমনের সর্বোচ্চ সীমা নির্দেশ করা আছে; কাজেই বিশেষ ফিল্টারের মাধ্যমে গাড়ির ধোঁয়া পরিশোধন করতে হয়৷ ডিজেল মোটরের ধোঁয়া পরিশোধনের বিশেষজ্ঞ হলো মেন্ডেনের এইচজেএস কোম্পানি৷ এখানে যে ফিল্টার তৈরি হয়, তা গাড়ি, আর্থমুভার, ট্রাক কিংবা বাসে কাজে লাগানো যায়৷ এই ফিল্টার দিয়ে বিশেষ করে কালিঝুলি আর নাইট্রোজেন অক্সাইড দূর করা যায়৷
এক বোতল কালিঝুলি
মেন্ডেন-এর এইচজেএস এমিশন টেকনোলজি-র মার্কেটিং ম্যানেজার আক্সেল মিডেনডর্ফ দেখালেন: ‘‘এটা হলো এক বোতল পার্টিকুলেট ম্যাটার, অর্থাৎ ধোঁয়ার কণিকা বা কালিঝুলি৷ এখানে যে পরিমাণ গুঁড়ো রাখা রয়েছে, তা একটি ডিজেল মোটর থেকে একদিনে বের হয়৷ এবং এই ধুলো অবশ্যই শহরের রাস্তায়, গোটা পরিবেশে ছড়িয়ে পড়বে, মানুষ তা নিঃশ্বাসের সঙ্গে নেবে৷ আমাদের পদ্ধতি সেটা আটকানোর চেষ্টা করে৷ আমাদের প্রণালীতে ধোঁয়ার কণিকা কমে যায় প্রায় ৯৯ ভাগ৷''
কালিঝুলির পরিমাণ কমানোর জন্য ডিজেলের ধোঁয়া একটি কণা ফিল্টারে ঢোকানো হয়৷ ধোঁয়ার কণিকাগুলি সেই ফিল্টারে লেগে থাকে এবং ফিল্টারের তাপমাত্রা বেড়ে ৪০০ ডিগ্রিতে পৌঁছালে নিজের থেকেই সেই কণিকাগুলো পুড়তে থাকে: পড়ে থাকে শুধু ছাই, যা নিয়মিতভাবে ফিল্টার থেকে পরিষ্কার করতে হয়৷
পাবলিক বাসে ট্রায়াল
এর পর নাইট্রোজেন অক্সাইডগুলির পালা৷ ডিজেলের ধোঁয়ায় ইউরিয়া মেশালে, সেই ইউরিয়া একটি বিশেষ ক্যাটালিস্টে নাইট্রোজেনের অক্সাইডগুলিকে ভেঙে ফেলে৷ ধোঁয়া পরিশোধনের এই প্রণালী বিশ্বের নানা দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে৷ সিঙ্গাপুর ও হংকং-এর মতো এশিয়ার বিভিন্ন মহানগরীতে স্মগ-এর সমস্যা রয়েছে, কাজেই এইচজেএস ফিল্টারগুলির চাহিদাও রয়েছে৷ আগামী বছর হংকং-এর ১,২০০ পাবলিক বাসে বসতে চলেছে সেই ডিজেল ফিল্টার৷ মিডেনডর্ফ জানালেন: ‘‘বাস্তবিক এ বছর হংকং-এ তথাকথিত প্রি-ট্রায়াল্স-এ পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে, এ প্রযুক্তি ওখানকার পরিবেশ সংক্রান্ত পরিস্থিতির পক্ষে উপযোগী কিনা৷ আগামী বছর ১,২০০ বাসে এই ফিল্টার লাগানোর কথা৷''
জার্মানির বার্লিন ও ভুপার্টাল শহরে ইতিমধ্যেই এই ডাবল্ রিপ্লেসমেন্ট ফিল্টার লাগানো বাস চলছে৷ ভুপার্টালে এককালে নাইট্রোজেন অক্সাইডগুলো নিয়ে একটি সমস্যা ছিল৷ ডিজেল ফিল্টারের কল্যাণে আজ ৯০ শতাংশ বাস চলে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে৷ ৪৫টি পুরনো বাসে নতুন করে ফিল্টার লাগানো হয়েছে: বাসপ্রতি খরচ হয়েছে ২০ হাজার ইউরো৷
পাইপ পরিষ্কার
ভুপার্টালের ফারেসবেক বাস ডিপোর ফোরম্যান ইয়ুর্গেন ফালেনস্কি জানালেন: ‘‘এটা হলো ‘একজস্ট' পাইপ, যা মোটর থেকে বেরিয়ে এসেছে৷ ক্যাটালিস্ট আর কণা ফিল্টারটা এখানে৷ ইউরিয়া ট্যাংকটা এখানে, পরে এখান থেকেই একজস্টের ধোঁয়ায় ইউরিয়া মেশানো হবে৷ খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে যে, একজস্ট পাইপটা সুন্দর পরিষ্কার, তা-তে কোনো কালিঝুলি নেই৷ এবং তা থেকেই বোঝা যায়, ঐ একজস্ট দিয়ে খুব কমই কালিঝুলি বেরিয়েছে৷''
ভুপার্টালের বাসগুলি আজ আগের চেয়ে অনেক কম কালিঝুলি ও নাইট্রোজেন অক্সাইড বাতাসে ছাড়ে৷ সুচিন্তিত ফিল্টার প্রযুক্তির কল্যাণে বায়ু দূষণ সংক্রান্ত কড়া ইউরোপীয় নিয়মাবলী মেনে চলা সহজ হয়েছে৷ ফালেনস্কি কিছুটা গর্বিত বৈকি: ‘‘আমরা রোজ এখানে ৩০ হাজার লিটার ডিজেল পোড়াই৷ তার পরিপ্রেক্ষিতে আমি ধরে নিতে পারি যে, আমরা পরিবেশ এবং পরিশুদ্ধ বাতাসের জন্য কিছু করছি৷''
জার্মানির এই ডিজেল প্রযুক্তির ফলে অন্যান্য বড় শহরের বাসিন্দারা স্বচ্ছন্দে নিঃশ্বাস নিতে পারবেন৷ শহরে গাড়িচলাচল যা-তে অন্তত কিছুটা কম হানিকর হয়, সেজন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে এই ডিজেল ফিল্টার৷