1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডেঙ্গু রোগী ভর্তিতে নতুন রেকর্ড

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৫ আগস্ট ২০১৯

হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তিতে নতুন রেকর্ড হয়েছে৷ সোমবার ২৪ ঘন্টায় দুই হাজার ৬৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যা একদিনে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ৷

https://p.dw.com/p/3NMtj
Bangladesch Dengue-Patienten im Krankenhaus von Dhaka
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman

বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতি ঘন্টায় ৮৬  জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন৷

এ অবস্থায় ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট-এর সংকটও দেখা দিয়েছে৷ শুধু তাই নয়, মশা মারার ওষুধ কবে আসবে তা কেউ বলতে পারছেন না৷ ডেঙ্গু চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনায় চরম সমণ্বয়হীনতা স্পষ্ট৷ ফলে কে কী করছেন, তা কেন্দ্রীয়ভাবে জানার কোনো সুযোগ নেই৷ যে যার মতো করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ করছেন৷

এডিস মশা মারার জন্য হাইকোর্টের নির্দেশে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন দু'টি ওষুধের নমুনা সোমবার ঢাকায় আনতে পেরেছে৷ ওই দু'টি নমুনা ভারত থেকে আনা হয়েছে৷ তবে কোন ব্র্যান্ডের ওষুধ, তা জানানো হয়নি৷ এই ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে সফল হলে আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে৷ এটা অনেক সময়সাপেক্ষ৷ গত শুক্রবার আরেকটি ভারতীয় মশা মারার ওষুধ পরীক্ষা করে দেখা গেছে তাতে মশা মরে না৷

ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম দু'দিন আগে চীন থেকে মশা মারার ওষুধ আনার ঘোষণা দিলেও তার কোনো প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি৷ ফলে, আগে আনা ভারতীয় ওষুধেই মশা মারার কাজ চলছে৷ এদিকে ডেঙ্গু হয়েছে কিনা তা টেস্ট করার কিটের সংকট শুরু হয়েছে৷ ঢাকার বাইরে জেলা পর্যায়ে এই সংকট চরমে৷ কিটের অভাবে অনেককেই ফিরিয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ আর এই সুযোগে দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ এই সংকট প্রধানত ডেঙ্গু নির্ণয়ের এনএস-১ কিট নিয়ে৷ স্যালাইনের সংকটও আছে কম-বেশি৷

ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া

তবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কিটের স্বল্পতা আছে, তবে সংকট নেই৷ এখন প্রতিদিন দুই লাখের মতো কিট আমদানি হচ্ছে৷ ঢাকার বাইরে জেলা শহরেও ডিস্ট্রিবিউটররা কিট পাঠাচ্ছেন৷ আর আগামীকাল (মঙ্গলবার) আমরা দেশেই কিট উৎপাদন শুরু করছি৷ প্রথম পর্যায়ে দিনে ৪০ হাজার কিট উৎপাদন করা হবে৷ তিন ধরনের কিটই উৎপাদন হবে৷''

তিনি দাবি করেন, ‘‘আসলে আতঙ্কের কারণে সবাই এখন টেস্ট করাতে ছুটছেন, এই কারণেই কিটের স্বল্পতা৷''

তবে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখনো টেস্ট কিটের সংকট আছে৷ আমার হাসপাতালেও স্বল্পতা আছে৷ প্রতিদিনের কিট আমাকে প্রতিদিন সংগ্রহ করতে হয়৷ নুন আনতে পান্তা ফুরায়৷''

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ পর্যন্ত  ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ১৮ বলছে৷ কিন্তু বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা ৮৫৷ আর গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ৬ জন৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেব, জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি মোট ডেঙ্গু রোগী  ২৭ হাজার ৪৩৭ জন৷ এর মধ্যে ঢাকার বাইরে ছয় হাজার ৬৪৬ জন৷ সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৬৫ জন, যা এপর্যন্ত একদিনে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সর্বোচ্চ রেকর্ড৷ আগের দিন রবিবার ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৮৭৪ জন৷ আর আগস্ট মাসের এই পাঁচদিনে ভর্তি হয়েছেন নয় হাজার ৬০০ জন৷ প্রতি ঘন্টায় এখন ৮৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন৷

ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ

ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে আমরা নানা ধরনের সমন্বয়হীনতা দেখছি৷ বিশেষ করে এডিস মশা নিধন নিয়ে সমন্বয়হীনতা চরমে৷ ওষুধের ক্ষেত্রেও এটা হয়েছে৷ আমি মনে করি, এবারের ডেঙ্গু এটা জাতীয় সংকট৷ তাই এটা সম্মিলিতভাবে জাতীয় পর্যায়ে মোকাবেলা করা উচিত৷ একটি জাতীয় কমিটি করা প্রয়োজন৷ সেখানে দল-মত নির্বিশেষে সব ধরনের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের ব্যক্তিদের থাকা উচিত৷ তাঁরা চিকিৎসা, ব্যবস্থাপনা, ওষুধ, এডিস মশা, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা সব বিষয়ে পরামর্শ দেবেন৷ সেই অনুযায়ী কাজ হবে৷ আগামীর প্রস্তুতি নিতে হবে৷ কলকাতা এটা করে সফল হয়েছে৷''

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সব মিলিয়ে সমন্বয়হীনতা আছে৷ মশা মারতে হবে৷ ওষুধ লাগবে৷ চিকিৎসা লাগবে৷ অনেক কিছুই অনেকে বুঝতে পারেননি৷ ফলে অনেক কিছু হচ্ছে বিচ্ছিন্নভাবে৷ কিন্তু এখন একটি জাতীয় পর্যায়ে সমন্বয় কমিটি গঠন করা প্রয়োজন৷ এটা শুধু এখন নয়, আগামীর জন্যও প্রয়োজন৷ না হলে সংকট ঠোকানো যাবে না৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘সমন্বয়হীনতার কারণে অনেক অপচয়ও হয়৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য