ব়্যাবের বিলুপ্তি চেয়ে হাসিনাকে চিঠি
২১ জুলাই ২০১৪ভেঙে দেয়ার আগ পর্যন্ত সামরিক বাহিনীর সব সদস্যকে সরিয়ে নিয়ে র্যাবকে পুরোপুরি বেসামরিক বাহিনীতে পরিণত করারও দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই মানবাধিকার সংগঠনটি৷
এইচআরডাব্লিউ'র এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে বলেছেন, ‘‘স্বাধীন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, গত ১০ বছরে প্রায় ৮০০ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র্যাব দায়ী৷'' সোমবার সংগঠনটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আধা-সামরিক বাহিনীটি ভেঙে দেয়ার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখার বিষয়টি জানানো হয়৷
তবে এইচআরডাব্লিউ'র রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে র্যাবের মুখপাত্র ‘লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং'এর পরিচালক উইং কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘র্যাব গঠনের পর থেকেই এইচআরডাব্লিউ এই বাহিনীর পেছনে লেগে আছে৷ তারা কোন জায়গা থেকে তথ্য পায়, সেই তথ্যের সত্যতাই বা কি? আর এই ধরনের রিপোর্ট এবারই প্রথম নয়, কিছুদিন পরপরই তারা র্যাবের বিরুদ্ধে একটা করে রিপোর্ট প্রকাশ করে৷ ষড়যন্ত্রমূলকভাবেই এটা করা হচ্ছে৷''
এটিএম হাবিবুর রহমান বলেন, ‘‘বিশ্বের বহু জায়গায় ভয়াবহ মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটছে৷ কিন্তু এইচআরডাব্লিউর সেদিকে কোনো নজর নেই৷ বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ এই বাহিনীকে ধ্বংস করার জন্য তাদের চক্রান্ত চলছে৷ প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই চিঠি তাদের চক্রান্তেরই অংশ৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে জনগণের চাহিদা অনুযায়ী সরকার র্যাব গঠন করেছে, সরকারের সিদ্ধান্তেই এই বাহিনী পরিচালিত হয়৷ জনগণের নিরাপত্তার জন্য বাহিনীটি কাজ করে৷ বিদেশি কোনো সংস্থার সিদ্ধান্তে র্যাব বিলুপ্ত হবে না৷''
এইচআরডাব্লিউর চিঠিতে বলা হয়েছে, র্যাব ‘সিরিয়াল ও সিস্টেম্যাটিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত৷' এইচআরডাব্লিউসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলো গত এক দশক ধরে র্যাবের বিরুদ্ধে বিপুল সংখ্যক বিচার বহির্ভূত হত্যা, আইন বহির্ভূতভাবে আটক ও আইনি কাঠামোর সুযোগ নিয়ে ‘পদ্ধতিগত' নির্যাতনের অভিযোগ জানিয়ে আসছে৷
চিঠিতে আরো বলা হয়, ২০০৪ সালে বিএনপি সরকারের আমলে র্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়৷ ঐ সরকারের পর ২০০৭ সালে ক্ষমতায় আসে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার৷ তাদের বিদায়ের পর ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ সরকার৷ এইচআরডাব্লিউ তাদের প্রতিবেদনে দাবি করে, আগের সরকারগুলোর মতো এখনকার ক্ষমতাসীনরা প্রতিষ্ঠানটিকে দায়মুক্তি দেয়ায় র্যাব ‘গুরুতর' ও ‘পদ্ধতিগত' অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়েছে৷ র্যাবের বিরুদ্ধে নির্বিচারে গ্রেফতার ও নিষ্ঠুর নির্যাতনসহ গত ১০ বছরে প্রায় ৮০০ লোককে হত্যার অভিযোগ রয়েছে৷
চিঠির বিষয়ে এইচআরডাব্লিউর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘গত এপ্রিলে নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় র্যাব সদস্যদের ভাড়াটে খুনি হিসাবে কাজ করার তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার পর বাংলাদেশে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়৷ র্যাব সদস্যরা ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার হয়ে ওই কাজ করে বলে অভিযোগ রয়েছে৷ র্যাব যে আসলে একটি ‘ডেথ স্কোয়াড' হিসাবে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, এটি তার আরেকটি উদাহরণ৷ বাংলাদেশ সরকার র্যাব সংস্কারের মধ্য দিয়ে এ বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করে এলেও তা পূরণে ‘পুরোপুরি ব্যর্থ' হয়েছে৷''
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘‘র্যাবকে এখন আর সংস্কার করে চালানো সম্ভব বলে আমরা বিশ্বাস করি না৷ আইনের ঊর্ধ্বে থেকে কোনো ধরনের জবাবদিহিতার তোয়াক্কা না করে র্যাব পরিচালনার একটি সংস্কৃতি তৈরি হয়ে গেছে৷ এই অবস্থায় এ বাহিনীকে শিগগিরই বিলুপ্ত করতে হবে, যাতে বাংলাদেশে হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়৷''